বেনাপোলসহ দেশের ১২টি স্থলবন্দর দিয়ে গত বছরে চিকিৎসা, ব্যবসা, উচ্চ শিক্ষা গ্রহন ও দর্শনীয় স্থান যাত্রায় ভারত ভ্রমণ করেছে ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬৪ জন পাসপোর্টধারী। এর মধ্যে ভারতে গেছে ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯২ জন এবং ভারত থেকে ফিরেছে ৯ লাখ ১৫ হাজার ৯৭২ জন। এদের ৫ শতাংশ ছিল বিদেশী পাসপোর্টধারী। এসময় ভ্রমণ কর বাবদ বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ১৫০ কোটি এবং ভিসা ফি বাবদ ভারত সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।

বাংলাদেশ স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) শামিম সোহানা স্বাক্ষরিত এক পত্রে স্থলপথে ভ্রমণে পাসপোর্টধারীর এ পরিসংখ্যান তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশ স্থলবন্দরের পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায়, দেশে সরকার অনুমোদিত ২৪টি স্থলবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে সচল মাত্র ১৬ টি। চলমান ১৬টি বন্দরের মধ্যে ১০টি সরকারি ও ৬ টিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ১৬টি বন্দরের মধ্যে পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করেন ১২টি স্থলবন্দর দিয়ে। আর তিনটি স্থলবন্দর কুড়িগ্রামের সোনাহাট, ময়মনসিংহের গোবড়াকুড়া কড়ইতলী ও জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরে দূর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা আর অনুন্নত অবকাঠামোর কারনে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি এবং রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাস থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থল বন্দর দিয়ে যাত্রী গমনাগমন বন্ধ আছে।

এদিকে ১২ বন্দরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাসপোর্টধারী যাতায়াতের তালিকায় রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর। এ বন্দর দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতে গেছে ১১ লাখ ৯০ হাজার ৮২১ জন। আর সবচেয়ে কম যাতায়াতের তালিকায় রয়েছে ফেনীর বিলোনিয়া বন্দর। এ বন্দর দিয়ে ভারত গেছে ৬ হাজার ২০৩ জন। এছাড়া অন্যান্য বন্দরের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর দিয়ে ভারতে যাতায়াত করেছে এক লাখ ৮৬ হাজার ৬২৯ জন, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াত করেছে ৯২ হাজার ৯৯০ জন, শেরপুরের নাকুগাও বন্দর দিয়ে ৭ হাজার ১৪৩ জন, কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থলবন্দর দিয়ে ৪৫ হাজার ২২৬ জন, সিলেটের শেওলা বন্দর দিয়ে ৮ হাজার ১১৫ জন ও তামাবিল বন্দর দিয়ে ৪০ হাজার ৩২ জন, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ৪৪ হাজার ৮১১ জন, লালমনিরহাটের বুড়িমারি বন্দর দিয়ে ৭৪ হাজার ৭৭৫ জন, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়া বন্দর দিয়ে এক লাখ ৮ হাজার ৮৮১ জন ও চাপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে যাতায়াত করেছে ৫৩ হাজার ৬৩৮ জন। ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা সহজ আর চাহিদা আছে এমন বন্দরগুলোর অবকাঠামোর উন্নয়নের প্রতি সরকারকে নজর দিতে হবে। আর যে সব বন্দর দিয়ে যাতায়াত বা বাণিজ্যের চাহিদা নেই সে সব বন্দর বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেকপোস্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল বলেন, বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলোর নাজুক অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ভ্রমণকারীদের। চাহিদা মতো অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় তার খেসারত গুনতে হয় পাসপোর্টধারীদের। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা হলে পাসপোর্টধারী যাতায়াত বাড়বে তেমনি ভ্রমন খাতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক আনু বলেন, দেশের চলমান ১৬টি স্থলবন্দরের মধ্যে ১২টি বন্দর দিয়ে পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। সবচেয়ে বেশি ভ্রমণের চাহিদা বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে ব্যবসা, চিকিৎসা, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে প্রায় ২০ লাখ পাসপোর্টধারী যাতায়াত করে থাকে। স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণে আজ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন হয়নি দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল বন্দরে। এছাড়া গত বছরের ৫ আগস্টের পর ভারত সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা সংক্ষিপ্ত করে। এর মধ্যে আবার ভিসা ফি জনপ্রতি ৮৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০০ টাকা করেছে। এটা সহনীয় পর্যায়ে আনতে ভারত সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, যাত্রীদের অবস্থান, নিরাপত্তা, মহিলা শিশু ও প্রতিবন্ধি যাত্রীদের জন্য বিশেষ সুবিধা এবং টয়লেট সুবিধা রয়েছে। স্থলপথের মধ্যে ভ্রমন ও বাণিজ্যের দিক দিয়ে বেনাপোল বন্দরের গুরুত্ব অনেক বেশি। বিষয়টি মাথায় রেখে ইতিমধ্যে বেনাপোল বন্দরে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ করে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল বর্ধিত করনের কাজ চলমান রয়েছে। ভ্রমন সুবিধার পাশাপাশি বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানোরও কাজ চলমান রয়েছে।