বান্দরবানের আলীকদম সীমান্ত সড়ক -সংবাদ
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৮ বছর পরও পাহাড়ে পুরোপুরি শান্তি ফিরে আসেনি। এখনও অস্ত্রের ঝনঝনানি, চাঁদাবাজি, গুম-খুন ও সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে পড়ছে লাশের পর লাশ, ঝরছে রক্ত। এ সময়ে নতুন করে আরও ছয়টি সশস্ত্র সংগঠন তৈরি হয়েছে। তবে চুক্তির পর দুই দশকেরও বেশি সময়ে পাহাড়ের সামগ্রিক দৃশ্যপটে বড় পরিবর্তন এসেছে। সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছেছে, অর্থনৈতিক প্রবাহ বেড়েছে এবং দুর্গম জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রায় এসেছে ব্যাপক অগ্রগতি।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সাবেক সরকারের পক্ষে তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা শান্তি চুক্তিতে সই করেন। ওই চুক্তির পর থেকে পার্বত্যাঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। গড়ে উঠেছে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ। একইসঙ্গে জনগণের আর্থিক সক্ষমতাও বেড়েছে।
তবে শান্তি চুক্তির পর দীর্ঘ সময় পাহাড়ে শান্তি বিরাজ করলেও গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন আঞ্চলিক সংগঠনের উত্থান ঘটে। এগুলো হলো- জেএসএস সংস্কার, ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ সংস্কার, মগ লিবারেশন পার্টি এবং কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টসহ আরও কয়েকটি দল। এসব সংগঠনের মধ্যে সংঘাত, গুম-খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ বাড়ছে। তবুও উন্নয়নের স্রোত থেমে নেই পাহাড়ে।
বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা
পাহাড়ের বাসিন্দারা জানান, স্বাধীনতার পরপরই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের দাবিতে ‘শান্তি বাহিনী’ নামে সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলে, যা সময়ের সঙ্গে একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আড়াই দশক ধরে আলোচনা-সমঝোতার পর ১৯৯৭ সালে হয় অনেক প্রত্যাশিত শান্তি চুক্তি। এতে মোট ৭২টি ধারা ছিল, যেগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা করা হয়েছিল।
অভিযোগ রয়েছে, কাগজে-কলমে শান্তি বাহিনী বিলুপ্ত ঘোষণা করলেও চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে তাদের তৎপরতা আগের মতোই চলছে।
বিশ্লেষক ও স্থানীয়দের মতামত
স্থানীয় সাংবাদিক মমতাজ আহম্মেদ বলেন, ‘পার্বত্য ভূমি বিরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণেই পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি চলছে। টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি ভূমি বিরোধের নিষ্পত্তি করতে হবে এবং চুক্তির কিছু ধারা পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’
পার্বত্য নাগরিক নেতা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, তবে শান্তি পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, তারা নিজেই চুক্তি লঙ্ঘন করছে। তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ খাতে বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। কৃষি উন্নয়নের জন্য দুর্গম সীমান্ত এলাকায় নির্মিত সীমান্ত সড়ক অর্থনৈতিকভাবে বড় সুবিধা আনবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্ত সড়ক নির্মাণের ফলে মায়ানমার ও চীনের সঙ্গে যে মহাসড়ক সংযোগ হয়েছে, তা পার্বত্য অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় সাফল্য এনে দেবে।’
পাহাড়ি নেতা অং চ মং মার্মা বলেন, ‘জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল, তা এখনও পূরণ হয়নি। চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হলে নতুন সংগঠনগুলো সৃষ্টি হতো না, এবং আজকের অস্থিরতা থাকত না। কেউ বলে চুক্তি বাস্তবায়ন চাই, কেউ বলে চাই না- এই বিভাজন থেকেই অপরাধমূলক কর্মকা- বাড়ছে।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার আন্দোলনের চেয়ারম্যান জুম লিয়ান আমলাই বলেন, ‘চুক্তির ২৭ বছর পার হলেও মূল ধারাগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। বরং সন্ত্রাসী কর্মকা- ও চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে। রাষ্ট্রকে জরুরি ভিত্তিতে চুক্তির মূল ধারাগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বান্দরবানের আলীকদম সীমান্ত সড়ক -সংবাদ
সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৮ বছর পরও পাহাড়ে পুরোপুরি শান্তি ফিরে আসেনি। এখনও অস্ত্রের ঝনঝনানি, চাঁদাবাজি, গুম-খুন ও সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে পড়ছে লাশের পর লাশ, ঝরছে রক্ত। এ সময়ে নতুন করে আরও ছয়টি সশস্ত্র সংগঠন তৈরি হয়েছে। তবে চুক্তির পর দুই দশকেরও বেশি সময়ে পাহাড়ের সামগ্রিক দৃশ্যপটে বড় পরিবর্তন এসেছে। সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছেছে, অর্থনৈতিক প্রবাহ বেড়েছে এবং দুর্গম জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রায় এসেছে ব্যাপক অগ্রগতি।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সাবেক সরকারের পক্ষে তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা শান্তি চুক্তিতে সই করেন। ওই চুক্তির পর থেকে পার্বত্যাঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। গড়ে উঠেছে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ। একইসঙ্গে জনগণের আর্থিক সক্ষমতাও বেড়েছে।
তবে শান্তি চুক্তির পর দীর্ঘ সময় পাহাড়ে শান্তি বিরাজ করলেও গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন আঞ্চলিক সংগঠনের উত্থান ঘটে। এগুলো হলো- জেএসএস সংস্কার, ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ সংস্কার, মগ লিবারেশন পার্টি এবং কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টসহ আরও কয়েকটি দল। এসব সংগঠনের মধ্যে সংঘাত, গুম-খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ বাড়ছে। তবুও উন্নয়নের স্রোত থেমে নেই পাহাড়ে।
বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা
পাহাড়ের বাসিন্দারা জানান, স্বাধীনতার পরপরই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের দাবিতে ‘শান্তি বাহিনী’ নামে সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলে, যা সময়ের সঙ্গে একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আড়াই দশক ধরে আলোচনা-সমঝোতার পর ১৯৯৭ সালে হয় অনেক প্রত্যাশিত শান্তি চুক্তি। এতে মোট ৭২টি ধারা ছিল, যেগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা করা হয়েছিল।
অভিযোগ রয়েছে, কাগজে-কলমে শান্তি বাহিনী বিলুপ্ত ঘোষণা করলেও চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে তাদের তৎপরতা আগের মতোই চলছে।
বিশ্লেষক ও স্থানীয়দের মতামত
স্থানীয় সাংবাদিক মমতাজ আহম্মেদ বলেন, ‘পার্বত্য ভূমি বিরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণেই পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি চলছে। টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি ভূমি বিরোধের নিষ্পত্তি করতে হবে এবং চুক্তির কিছু ধারা পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’
পার্বত্য নাগরিক নেতা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, তবে শান্তি পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, তারা নিজেই চুক্তি লঙ্ঘন করছে। তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ খাতে বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। কৃষি উন্নয়নের জন্য দুর্গম সীমান্ত এলাকায় নির্মিত সীমান্ত সড়ক অর্থনৈতিকভাবে বড় সুবিধা আনবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্ত সড়ক নির্মাণের ফলে মায়ানমার ও চীনের সঙ্গে যে মহাসড়ক সংযোগ হয়েছে, তা পার্বত্য অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় সাফল্য এনে দেবে।’
পাহাড়ি নেতা অং চ মং মার্মা বলেন, ‘জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল, তা এখনও পূরণ হয়নি। চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হলে নতুন সংগঠনগুলো সৃষ্টি হতো না, এবং আজকের অস্থিরতা থাকত না। কেউ বলে চুক্তি বাস্তবায়ন চাই, কেউ বলে চাই না- এই বিভাজন থেকেই অপরাধমূলক কর্মকা- বাড়ছে।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার আন্দোলনের চেয়ারম্যান জুম লিয়ান আমলাই বলেন, ‘চুক্তির ২৭ বছর পার হলেও মূল ধারাগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। বরং সন্ত্রাসী কর্মকা- ও চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে। রাষ্ট্রকে জরুরি ভিত্তিতে চুক্তির মূল ধারাগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে।’