সাপাহার (নওগাঁ) : আগাম শীতের বার্তায় শীত নিবারণের প্রস্তুতি শুরু করেছেন স্থানীয়রা -সংবাদ
নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহারে এ বছরও শীতের দেখা মিলেছে দেশের অনেক এলাকার তুলনায় আগেভাগে। দিনের বেলা রোদে হালকা উষ্ণতা থাকলেও রাত ও ভোরে কনকনে ঠান্ডা, স্নিগ্ধ বাতাস আর কুয়াশায় ঘাস-পাতায় জমছে শিশির। এই আগাম শীতের বার্তায় শীত নিবারণের প্রস্তুতি শুরু করেছেন স্থানীয় মানুষ। ফলে জমে উঠেছে গরম কাপড়ের দোকান থেকে শুরু করে লেপ-তোশক, কম্বল ও শীতসামগ্রীর বাজার। সাপাহার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যা নামতেই শীতের তীব্রতা বাড়ে। সেই সঙ্গে গার্মেন্টস দোকানগুলোতে সোয়েটার, জ্যাকেট, হুডি, মাফলার, ক্যাপ ও মোজা কিনতে ভিড় করছেন নানা বয়সী ক্রেতা। অন্যদিকে তুলা-পট্টির কারখানা ও লেপ-তোশকের দোকানগুলোতে নতুন লেপ বানানো, পুরোনো লেপ ধোলাই ও নতুন কাপড় লাগানোর জন্য গ্রামাঞ্চল থেকেও আসছেন অনেকে। বাজারজুড়ে এখন শীতের কেনাকাটার চঞ্চলতা।
গার্মেন্টস দোকানে শীতের পোশাক প্রদর্শন : বাজারের গার্মেন্টস দোকানগুলোতে শীতের পোশাক সাজিয়ে রাখা হয়েছে চোখে পড়ার মতো করে। দোকানের সামনে ঝুলছে বিভিন্ন রঙের সোয়েটার, জ্যাকেট ও হুডি। কিশোর-তরুণদের ভিড় বেশি হুডি ও জ্যাকেটের দোকানে। ক্রেতাদের অনেকে বলছেন, রাত-ভোরে ঠান্ডা যেহেতু আগেভাগে শুরু হয়েছে, তাই শীত জোরে পড়ার আগেই পোশাক কিনে রাখছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েই দোকানে মাল তোলা হয়েছে বেশি। এখন প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে সোয়েটার, জ্যাকেট, শাল-মাফলার, গ্লাভস, উলের টুপি ও শিশুদের শীতের পোশাক। বিশেষ করে স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য উষ্ণ পোশাকের চাহিদাও বেড়েছে। লেপ-তোশক দোকানে ক্রেতাদের পদচারণা গার্মেন্টসের পাশাপাশি লেপ-তোশক ও কম্বলের দোকানগুলোতেও ব্যাপক ব্যস্ততা দেখা গেছে। দোকানের ভেতরে তুলা ছড়ানো, কাপড় কাটা, সেলাই আর টাক করার শব্দে মুখর পুরো পরিবেশ। কয়েকজন কারিগর বসে একসঙ্গে কাজ করছেন—কেউ তুলা সমান করছেন, কেউ সেলাই মেশিনে কাপড় বসাচ্ছেন, আবার কেউ লেপে টাক দিচ্ছেন। ক্রেতারা নতুন লেপ বানাতে আসছেন। দোকানিদের মতে, চলতি মৌসুমে নভেম্বর থেকেই অর্ডার শুরু হয়ে গেছে। শীত জোরে নামলে অর্ডার আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তাঁরা। কারিগরদের ব্যস্ততা, মজুরি না বাড়ায় ক্ষোভ শীতের তিন মাস লেপ-তোশক কারিগরদের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। এই আয় দিয়েই তাঁরা বছরের বাকি সময় সংসার চালানোর চেষ্টা করেন। তবে বাজারদরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজুরি না বাড়ায় তাঁদের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে।
কারিগর মো. জরিপ আলী বলেন, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি—এই তিন মাস ছাড়া বছরের অন্য সময় তেমন কাজ থাকে না। তাই এ সময় বেশি পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু পাঁচ বছর আগে একটি লেপ তৈরির যে পারিশ্রমিক ছিল, এখনও একই আছে। আরেক কারিগর মো. আব্দুল কুদ্দুস জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে, কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়েনি। যে টাকা পাই, তাতে সংসার চালানো আর ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ দেওয়া কষ্ট হয়ে যায়। তাই মজুরি বাড়ানো দরকার বলে জানান তিনি।
ক্রেতাদের দাম বাড়ায় অভিযোগ শীতের আমেজ বাড়তেই লেপ-তোশক বানাতে বা কিনতে আসা ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। তবে দাম বাড়ার অভিযোগও করছেন অনেকে। উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের ক্রেতা হাসান আলী বলেন, সাপাহারে শীত আগে আসে, তাই এবারও ঠান্ডা মোকাবেলায় লেপ বানাতে এসেছি। কিন্তু দোকানদাররা দাম অনেক বেশি নিচ্ছেন। আরেক ক্রেতা জানান, সাত-পাঁচ হাতের নতুন লেপ বানাতে গত বছর যেখানে ১ হাজার ৪০০ টাকা লেগেছিল, এবার লাগছে ১ হাজার ৮০০ টাকা—প্রতি লেপে ৪০০ টাকা বেশি। বিক্রেতাদের ব্যাখ্যা: কাঁচামাল ও শ্রম খরচ বেড়েছে
দাম বাড়ার অভিযোগের বিষয়ে বিক্রেতা সাপাহার তুলা-পট্টির লেপ-তোশক ও কম্বল ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বলেন, এবার শীত আগেভাগেই টের পাওয়া যাচ্ছে, তাই ক্রেতারাও আগে থেকে কিনছেন। দোকানে এখন পুরোদমে ভিড়। কাঁচামাল ও শ্রমসহ নানা খরচ বাড়ায় দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাজারে রেডিমেড লেপ ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা, তোশক ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, জাজিম ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা এবং বালিশ ১০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কারিগরদের ধারণা, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শীত বাড়লে বাজারে ব্যস্ততা আরও তীব্র হবে। এখনই যে কেনাকাটার ঢল দেখা যাচ্ছে, তা পুরো মৌসুমে আরও বড় আকার নেবে—এমনটাই প্রত্যাশা সাপাহার বাজারের বিক্রেতা ও ক্রেতাদের।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সাপাহার (নওগাঁ) : আগাম শীতের বার্তায় শীত নিবারণের প্রস্তুতি শুরু করেছেন স্থানীয়রা -সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহারে এ বছরও শীতের দেখা মিলেছে দেশের অনেক এলাকার তুলনায় আগেভাগে। দিনের বেলা রোদে হালকা উষ্ণতা থাকলেও রাত ও ভোরে কনকনে ঠান্ডা, স্নিগ্ধ বাতাস আর কুয়াশায় ঘাস-পাতায় জমছে শিশির। এই আগাম শীতের বার্তায় শীত নিবারণের প্রস্তুতি শুরু করেছেন স্থানীয় মানুষ। ফলে জমে উঠেছে গরম কাপড়ের দোকান থেকে শুরু করে লেপ-তোশক, কম্বল ও শীতসামগ্রীর বাজার। সাপাহার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যা নামতেই শীতের তীব্রতা বাড়ে। সেই সঙ্গে গার্মেন্টস দোকানগুলোতে সোয়েটার, জ্যাকেট, হুডি, মাফলার, ক্যাপ ও মোজা কিনতে ভিড় করছেন নানা বয়সী ক্রেতা। অন্যদিকে তুলা-পট্টির কারখানা ও লেপ-তোশকের দোকানগুলোতে নতুন লেপ বানানো, পুরোনো লেপ ধোলাই ও নতুন কাপড় লাগানোর জন্য গ্রামাঞ্চল থেকেও আসছেন অনেকে। বাজারজুড়ে এখন শীতের কেনাকাটার চঞ্চলতা।
গার্মেন্টস দোকানে শীতের পোশাক প্রদর্শন : বাজারের গার্মেন্টস দোকানগুলোতে শীতের পোশাক সাজিয়ে রাখা হয়েছে চোখে পড়ার মতো করে। দোকানের সামনে ঝুলছে বিভিন্ন রঙের সোয়েটার, জ্যাকেট ও হুডি। কিশোর-তরুণদের ভিড় বেশি হুডি ও জ্যাকেটের দোকানে। ক্রেতাদের অনেকে বলছেন, রাত-ভোরে ঠান্ডা যেহেতু আগেভাগে শুরু হয়েছে, তাই শীত জোরে পড়ার আগেই পোশাক কিনে রাখছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েই দোকানে মাল তোলা হয়েছে বেশি। এখন প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে সোয়েটার, জ্যাকেট, শাল-মাফলার, গ্লাভস, উলের টুপি ও শিশুদের শীতের পোশাক। বিশেষ করে স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য উষ্ণ পোশাকের চাহিদাও বেড়েছে। লেপ-তোশক দোকানে ক্রেতাদের পদচারণা গার্মেন্টসের পাশাপাশি লেপ-তোশক ও কম্বলের দোকানগুলোতেও ব্যাপক ব্যস্ততা দেখা গেছে। দোকানের ভেতরে তুলা ছড়ানো, কাপড় কাটা, সেলাই আর টাক করার শব্দে মুখর পুরো পরিবেশ। কয়েকজন কারিগর বসে একসঙ্গে কাজ করছেন—কেউ তুলা সমান করছেন, কেউ সেলাই মেশিনে কাপড় বসাচ্ছেন, আবার কেউ লেপে টাক দিচ্ছেন। ক্রেতারা নতুন লেপ বানাতে আসছেন। দোকানিদের মতে, চলতি মৌসুমে নভেম্বর থেকেই অর্ডার শুরু হয়ে গেছে। শীত জোরে নামলে অর্ডার আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তাঁরা। কারিগরদের ব্যস্ততা, মজুরি না বাড়ায় ক্ষোভ শীতের তিন মাস লেপ-তোশক কারিগরদের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। এই আয় দিয়েই তাঁরা বছরের বাকি সময় সংসার চালানোর চেষ্টা করেন। তবে বাজারদরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজুরি না বাড়ায় তাঁদের মধ্যে ক্ষোভও রয়েছে।
কারিগর মো. জরিপ আলী বলেন, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি—এই তিন মাস ছাড়া বছরের অন্য সময় তেমন কাজ থাকে না। তাই এ সময় বেশি পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু পাঁচ বছর আগে একটি লেপ তৈরির যে পারিশ্রমিক ছিল, এখনও একই আছে। আরেক কারিগর মো. আব্দুল কুদ্দুস জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে, কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়েনি। যে টাকা পাই, তাতে সংসার চালানো আর ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ দেওয়া কষ্ট হয়ে যায়। তাই মজুরি বাড়ানো দরকার বলে জানান তিনি।
ক্রেতাদের দাম বাড়ায় অভিযোগ শীতের আমেজ বাড়তেই লেপ-তোশক বানাতে বা কিনতে আসা ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। তবে দাম বাড়ার অভিযোগও করছেন অনেকে। উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের ক্রেতা হাসান আলী বলেন, সাপাহারে শীত আগে আসে, তাই এবারও ঠান্ডা মোকাবেলায় লেপ বানাতে এসেছি। কিন্তু দোকানদাররা দাম অনেক বেশি নিচ্ছেন। আরেক ক্রেতা জানান, সাত-পাঁচ হাতের নতুন লেপ বানাতে গত বছর যেখানে ১ হাজার ৪০০ টাকা লেগেছিল, এবার লাগছে ১ হাজার ৮০০ টাকা—প্রতি লেপে ৪০০ টাকা বেশি। বিক্রেতাদের ব্যাখ্যা: কাঁচামাল ও শ্রম খরচ বেড়েছে
দাম বাড়ার অভিযোগের বিষয়ে বিক্রেতা সাপাহার তুলা-পট্টির লেপ-তোশক ও কম্বল ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বলেন, এবার শীত আগেভাগেই টের পাওয়া যাচ্ছে, তাই ক্রেতারাও আগে থেকে কিনছেন। দোকানে এখন পুরোদমে ভিড়। কাঁচামাল ও শ্রমসহ নানা খরচ বাড়ায় দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাজারে রেডিমেড লেপ ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা, তোশক ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, জাজিম ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা এবং বালিশ ১০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কারিগরদের ধারণা, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শীত বাড়লে বাজারে ব্যস্ততা আরও তীব্র হবে। এখনই যে কেনাকাটার ঢল দেখা যাচ্ছে, তা পুরো মৌসুমে আরও বড় আকার নেবে—এমনটাই প্রত্যাশা সাপাহার বাজারের বিক্রেতা ও ক্রেতাদের।