alt

আধুনিকতার ছোঁয়ায় সিরাজগঞ্জে নবান্নের উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে

জেলা বার্তা পরিবেশক, সিরাজগঞ্জ : বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

আধুনিকতার ছোঁয়ায় সিরাজগঞ্জে নবান্নের উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে। আগের মত কৃষকের উঠোন জুড়ে নেই ধান মাড়াইয়ের ব্যস্ততা, আর ঢেঁকির তালে মুখর হয় না গাঁয়ের বধূদের নবান্নের গীত। অথচ এমন একদিন ছিল যে দিনকে নবান্নকে ঘিরে সার্বজনীন উৎসবে মেতে উঠত, আজ সেখানে কেবলই একরাশ শূন্যতা আর স্মৃতির দীর্ঘশ্বাস। কালের চাকায় পিষ্ট হয়ে বাঙালির হাজার বছরের এই প্রাণের উৎসব তার চিরায়ত রূপ ও রং হারিয়ে এখন বিবর্ণ, জৌলুসহীন।স্মৃতির পাতা ওল্টালে চোখে ভাসে। অন্য রকম সিরাজগঞ্জ। আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকেও সিরাজগঞ্জে আমন ধানের সোনালি ঢেউ খেলত। সাদা দিঘা, সরসরিয়া, লাউজাল, মাটিয়াগড়লের মতো বিলুপ্তপ্রায় সব দেশি জাতের ধান কাটার মধ্য দিয়েই শুরু হতো মহোৎসবের প্রস্তুতি। কৃষকেরা সারা রাত জেগে চাদর গায়ে গরু দিয়ে ধান মাড়াই করতেন বাড়ির উঠানে । সেই নতুন ধানের প্রথম অংশটুকু বাড়ির গিন্নি তুলে নিতেন পিঠা-পায়েসের জন্য।

নবান্ন তখন শুধু একটি দিন ছিল না, ছিল পৌষ মাস পর্যন্ত বিস্তৃত এক আনন্দযজ্ঞ। ঘরে ঘরে নতুন খেজুরের রসের সঙ্গে গাভি বা মহিষের ঘন দুধ মিশিয়ে তৈরি হতো দুধের পিঠা, ভাপা, পাকান, কুশলি, পাটিসাপটার মতো রসনা বিলাসী সব আয়োজন। রান্না হতো নতুন চাল-ডালের খিচুড়ি আর পাটালি গুড়ের পায়েস। ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কলাপাতা বিছিয়ে একসঙ্গে বসে সেই খাবার খেতেন। উৎসবের রঙ ছড়াত গ্রামের বাড়িগুলি দিনের আলোয় লাঠি খেলা, পুঁথিপাঠ, সাঁতার আর হাঁড়ি ভাঙার মতো গ্রামীণ খেলাধুলায় মুখর থাকত । আর রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে দূর থেকে ভেসে আসত কবিগান, জারিগান আর যাত্রাপালার সুর। নবান্ন ছিল একাধারে ফসল, সংস্কৃতি আর সামাজিক ঐক্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। আজকের সেই প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানগুলি কেবলই ইতিহাস। উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের দাপটে হারিয়ে গেছে সেই সুগন্ধি দেশি ধান। ট্রাক্টর ও হারভেস্টারের যান্ত্রিক শব্দে চাপা পড়েছে ধান মাড়াইয়ের লোকগান। কৃষিকাজ এখন আর উৎসব নয়, নিছকই এক বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া। বহু কৃষক এখন আর মাটির সঙ্গে বাঁধা নেই।

জমি লিজ দিয়ে তারা এখন শহুরে জীবনের দিকে ঝুঁকছেন। অন্যদিকে, একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে যাওয়ায় কমে গেছে সম্মিলিত আয়োজনের উৎসাহ। গ্রামের সেই আন্তরিকতার জায়গায় এখন দানা বেঁধেছে দলাদলি, মামলা-মোকদ্দমা আর বিচ্ছিন্নতা। আকাশ সংস্কৃতি আর হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোন কেড়ে নিয়েছে লোকজ সংস্কৃতির আবেদন। নতুন প্রজন্মের কাছে লাঠি খেলা বা জারিগানের চেয়ে ডিজিটাল বিনোদন অনেক বেশি আকর্ষণীয়। ফলে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের প্রবাহ প্রায় থেমে গেছে। এখনো কিছু পরিবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে মেয়ে-জামাইকে নিমন্ত্রণ করে নবান্নের স্মৃতিটুকু ধরে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু খন্ড খন্ড এই প্রচেষ্টাগুলো সার্বজনীন উৎসবের সেই হারিয়ে যাওয়াকে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ।প্রবীণদের মুখে আজও ভাসে সেই সোনালি দিনের গল্প, যখন নবান্ন ছিল একতার প্রতীক, আনন্দের উপলক্ষ আর হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির এক জীবন্ত দলিল। কালের পরিক্রমায় চলনবিলের নবান্ন আজ তার জৌলুস হারিয়ে এক ধূসর ক্যানভাসে পরিণত হয়েছে । যা কেবল পুরানো স্মৃতি হয়েই থাকবে আগামী প্রজন্মের কাছে । এ বিষয়ে তেতুলিয়া গ্রামের আবু হানিফ (৭৫) জানান, আগের দিনে নবান্নে খুব আনন্দ ফুর্তি হতো। প্রতিটি কৃষক পরিবার আনন্দ ফুর্তিতে ভরে থাকত। অগ্রাগায়ন মাসে ধান কাটা গরু দিয়ে ধান মলন (মাড়াই) করত । ধান সারা হলে প্রতিটি পরিবারে পরে যেত পিঠা খাওয়ার ধুম । এ সময় জামাই ঝিসহ আত্মীয়স্বজন কে দাওয়াত দিয়ে নানা ধরনের পিঠা খাওযার ধুম পরে যেত । এ সময় পরিবার গুলিতে আনন্দের ঢেউ বয়ে যেত । বর্তমানে আধুনিক যান্ত্রিক যুগে আর সেরকম আনন্দ নেই । এখন পিঠা খেতে হলে গ্রামের মানুষ গুলিও শহরের মানুষের মত চিতই পিঠা কিনে এনে দুধের পিঠা খায় ।

ছবি

সুর সুধা সঙ্গীতায়নের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দিবস উদযাপন

ছবি

আমন ধানের ক্ষেতে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ

ছবি

চাটমোহরে মহিলা দলের দুই নেত্রী গ্রেপ্তার

ছবি

রাণীনগরে ট্রাক্টর উল্টে শিশুসহ আহত ৪

ছবি

জয়পুরহাটে ঘরে ঢুকে নুরুন্নাহারকে হত্যা, আহত ১

ছবি

রাজিবপুরে আগুনে পুড়ল কৃষকের স্বপ্ন

ছবি

কেশবপুরে বিলের পানি নিষ্কাশনে পাথরা সেচ প্রকল্পের উদ্বোধন

ছবি

দোয়ারাবাজারে বোতলে বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেল, অগ্নিসন্ত্রাসের ঝুঁকি

ছবি

সিরাজগঞ্জে পাসপোর্ট করতে এসে রোহিঙ্গা যুবক আটক

ছবি

দুমকিতে হোটেল ভস্মীভূত, ১০ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি

ছবি

চিরিরবন্দরে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যাটারি চালিত ভ্যানের মুখোমুখী সংঘর্ষে আহত ৭ নিহত ২

ছবি

রাজিবপুরে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উদযাপিত

ছবি

শিক্ষকদের কর্ম বিরতি বিপাকে শিক্ষার্থীরা

ছবি

লালমনিরহাটে বাসের ধাক্কায় নিহত ১, আহত ৩

ছবি

সাপাহারে শীতের নরম ছোঁয়ায় গরম কাপড়ের বাজারে ব্যস্ততা

ছবি

চসিকের শান্তিবাগে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি

ছবি

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া

ছবি

কেরানীগঞ্জে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ১০ম গ্রেডের দাবিতে কর্মবিরতি

ছবি

আত্মসম্মান তাকে আজও ধরে রেখেছে নিজের কাজে, নিজের উপার্জনে

ছবি

দশমিনায় দেশীয় প্রজাতির কামরাঙ্গা শিম বিলুপ্তির পথে

ছবি

মীরসরাইয়ে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতি পালন

ছবি

সবকিছু থেমে গেছে আমাদের জীবনে প্রতিবন্ধী স্বামীকে নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে কমলার

ছবি

ভিনদেশি বরই চাষে ভাগ্যের চাকা ঘুরল গিয়াসের

ছবি

সৈয়দপুরে লোকসানের মুখে হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারীরা

ছবি

ঈশ্বরদীতে ৮ কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় সেই নারী গ্রেপ্তার

ছবি

মোরেলগঞ্জে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে র‌্যালি

ছবি

রায়গঞ্জে উন্নতজাতের ক্রসব্রীড বকনাহ উপকরণ বিতরণ

ছবি

শিবগঞ্জে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতি

ছবি

নীলফামারী-রংপুর রুটে বাস চলাচল শুরু

ছবি

পলাশে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি।

গজারিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ৪ বসতঘর ভস্মীভূত

ছবি

হাটহাজারীতে ইটভাটায় অভিযান গুঁড়িয়ে দেয়া হলো কিলন-চিমনি

চাটখিলে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ৩ স্কুল ছাত্রের মৃত্যু

মহেশপুরে ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার, ৪ বাংলাদেশি আটক

মোহনগঞ্জে পিঠার ব্যবসা জমজমাট

ছবি

চার মাসে ভারত থেকে এলো ১৮ হাজার মেট্রিক টন চাল

tab

আধুনিকতার ছোঁয়ায় সিরাজগঞ্জে নবান্নের উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে

জেলা বার্তা পরিবেশক, সিরাজগঞ্জ

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

আধুনিকতার ছোঁয়ায় সিরাজগঞ্জে নবান্নের উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে। আগের মত কৃষকের উঠোন জুড়ে নেই ধান মাড়াইয়ের ব্যস্ততা, আর ঢেঁকির তালে মুখর হয় না গাঁয়ের বধূদের নবান্নের গীত। অথচ এমন একদিন ছিল যে দিনকে নবান্নকে ঘিরে সার্বজনীন উৎসবে মেতে উঠত, আজ সেখানে কেবলই একরাশ শূন্যতা আর স্মৃতির দীর্ঘশ্বাস। কালের চাকায় পিষ্ট হয়ে বাঙালির হাজার বছরের এই প্রাণের উৎসব তার চিরায়ত রূপ ও রং হারিয়ে এখন বিবর্ণ, জৌলুসহীন।স্মৃতির পাতা ওল্টালে চোখে ভাসে। অন্য রকম সিরাজগঞ্জ। আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকেও সিরাজগঞ্জে আমন ধানের সোনালি ঢেউ খেলত। সাদা দিঘা, সরসরিয়া, লাউজাল, মাটিয়াগড়লের মতো বিলুপ্তপ্রায় সব দেশি জাতের ধান কাটার মধ্য দিয়েই শুরু হতো মহোৎসবের প্রস্তুতি। কৃষকেরা সারা রাত জেগে চাদর গায়ে গরু দিয়ে ধান মাড়াই করতেন বাড়ির উঠানে । সেই নতুন ধানের প্রথম অংশটুকু বাড়ির গিন্নি তুলে নিতেন পিঠা-পায়েসের জন্য।

নবান্ন তখন শুধু একটি দিন ছিল না, ছিল পৌষ মাস পর্যন্ত বিস্তৃত এক আনন্দযজ্ঞ। ঘরে ঘরে নতুন খেজুরের রসের সঙ্গে গাভি বা মহিষের ঘন দুধ মিশিয়ে তৈরি হতো দুধের পিঠা, ভাপা, পাকান, কুশলি, পাটিসাপটার মতো রসনা বিলাসী সব আয়োজন। রান্না হতো নতুন চাল-ডালের খিচুড়ি আর পাটালি গুড়ের পায়েস। ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কলাপাতা বিছিয়ে একসঙ্গে বসে সেই খাবার খেতেন। উৎসবের রঙ ছড়াত গ্রামের বাড়িগুলি দিনের আলোয় লাঠি খেলা, পুঁথিপাঠ, সাঁতার আর হাঁড়ি ভাঙার মতো গ্রামীণ খেলাধুলায় মুখর থাকত । আর রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে দূর থেকে ভেসে আসত কবিগান, জারিগান আর যাত্রাপালার সুর। নবান্ন ছিল একাধারে ফসল, সংস্কৃতি আর সামাজিক ঐক্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। আজকের সেই প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানগুলি কেবলই ইতিহাস। উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের দাপটে হারিয়ে গেছে সেই সুগন্ধি দেশি ধান। ট্রাক্টর ও হারভেস্টারের যান্ত্রিক শব্দে চাপা পড়েছে ধান মাড়াইয়ের লোকগান। কৃষিকাজ এখন আর উৎসব নয়, নিছকই এক বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া। বহু কৃষক এখন আর মাটির সঙ্গে বাঁধা নেই।

জমি লিজ দিয়ে তারা এখন শহুরে জীবনের দিকে ঝুঁকছেন। অন্যদিকে, একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে যাওয়ায় কমে গেছে সম্মিলিত আয়োজনের উৎসাহ। গ্রামের সেই আন্তরিকতার জায়গায় এখন দানা বেঁধেছে দলাদলি, মামলা-মোকদ্দমা আর বিচ্ছিন্নতা। আকাশ সংস্কৃতি আর হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোন কেড়ে নিয়েছে লোকজ সংস্কৃতির আবেদন। নতুন প্রজন্মের কাছে লাঠি খেলা বা জারিগানের চেয়ে ডিজিটাল বিনোদন অনেক বেশি আকর্ষণীয়। ফলে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের প্রবাহ প্রায় থেমে গেছে। এখনো কিছু পরিবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে মেয়ে-জামাইকে নিমন্ত্রণ করে নবান্নের স্মৃতিটুকু ধরে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু খন্ড খন্ড এই প্রচেষ্টাগুলো সার্বজনীন উৎসবের সেই হারিয়ে যাওয়াকে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ।প্রবীণদের মুখে আজও ভাসে সেই সোনালি দিনের গল্প, যখন নবান্ন ছিল একতার প্রতীক, আনন্দের উপলক্ষ আর হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির এক জীবন্ত দলিল। কালের পরিক্রমায় চলনবিলের নবান্ন আজ তার জৌলুস হারিয়ে এক ধূসর ক্যানভাসে পরিণত হয়েছে । যা কেবল পুরানো স্মৃতি হয়েই থাকবে আগামী প্রজন্মের কাছে । এ বিষয়ে তেতুলিয়া গ্রামের আবু হানিফ (৭৫) জানান, আগের দিনে নবান্নে খুব আনন্দ ফুর্তি হতো। প্রতিটি কৃষক পরিবার আনন্দ ফুর্তিতে ভরে থাকত। অগ্রাগায়ন মাসে ধান কাটা গরু দিয়ে ধান মলন (মাড়াই) করত । ধান সারা হলে প্রতিটি পরিবারে পরে যেত পিঠা খাওয়ার ধুম । এ সময় জামাই ঝিসহ আত্মীয়স্বজন কে দাওয়াত দিয়ে নানা ধরনের পিঠা খাওযার ধুম পরে যেত । এ সময় পরিবার গুলিতে আনন্দের ঢেউ বয়ে যেত । বর্তমানে আধুনিক যান্ত্রিক যুগে আর সেরকম আনন্দ নেই । এখন পিঠা খেতে হলে গ্রামের মানুষ গুলিও শহরের মানুষের মত চিতই পিঠা কিনে এনে দুধের পিঠা খায় ।

back to top