শিক্ষার আলো মানুষকে আলোকিত করে, আর পরিশ্রম সেই আলোকে এগিয়ে নিয়ে যায়ে সাফল্যের শিখরে। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর গোলায় গ্রামের আমিনুল ইসলাম যেন সেই দুই শক্তিরই উজ্জ্বল মেলবন্ধন। স্নাতকোত্তর পাশ, উকালতি পরীক্ষায় উত্তীর্ণসব মিলিয়ে তার সামনে ছিল চাকরি, আইন পেশা কিংবা শহুরে জীবনের অনেক পথ।
কিন্তু প্রচলিত পথকে পিছনে ফেলে তিনি ফিরে গেলেন শেকড়ের টানে কৃষির মাঠে। বেছে নিলেন জমি, বাগান আর মাছ চাষের পরিশ্রমী জীবন। আজ তিনি শুধু একজন কৃষক নন তিনি প্রমাণ, মাটি যখন ডাকে পরিশ্রমের হাতে তখন স্বপ্ন সত্যি হয়। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোলায় গ্রামের পরিশ্রমী ও শিক্ষিত কৃষক আমিনুল ইসলাম এখন এলাকায় সফল কৃষক হিসেবে পরিচিত নাম। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করা এবং উকালতি পাশ করা সত্ত্বেও তিনি চাকরি বা আইন পেশায় না গিয়ে বেছে নেন কৃষিকাজ। আর সেই সিদ্ধান্তই আজ তাঁকে নিয়ে গেছে সাফল্যের শিখরে। বলা যায়, কৃষিতেই কোটিপতি আমিনুল। পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফল তিনি নিজেই ঘরে তুলছেন, আর তা দেখেই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন আশপাশের তরুণরা।
আমিনুল ইসলামের রয়েছে প্রায় ২০ বিঘা জমিজুড়ে আম, কাঁঠাল, কমলা, মালটা ও পেয়ারা বাগান। ৩০ বিঘা জমিতে রয়েছে পুকুর। মাছ ও ফল চাষে তার দক্ষতা, পরিকল্পনা ও নিয়মিত পরিচর্যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। বিশেষত কাঁঠালের মৌসুমের বাইরে শীতকালেও তার বাগানে কাঁঠাল ধরছোয়া আশেপাশের কৃষকদেরও তাক লাগিয়েছে। গত বছর এক একটি কাঁঠাল তিনি বিক্রি করেছেন ৮ থেকে ৯০০ টাকা দামে। এবারও বাগানের ৪০০ গাছে এসেছে। তিনি অন্তত ১০ লাখ টাকা আয় করবেন। বাগানের প্রতিটি গাছ তিনি যত্ন করেন সন্তানসুলভ সার, পানি, পরিচর্যা যা দরকার সবই তিনি নিয়ম মেনে করে থাকেন।
ফল বাগানের পাশাপাশি তিনি সবজি চাষেও সমান সফল। প্রতি বছর তিনি প্রায় ২০ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেন। এবছর তিনি ১৬ বিঘা জমিতে রোপন করেছেন উন্নত জাতের বাঁধাকপি। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকার বাঁধাকপি বিক্রি করেছেন।
কৃষিকাজ শুরু থেকেই আমিনুল ইসলাম বিশ্বাস করতেন জমি, পরিশ্রম এবং সঠিক পরিকল্পনা থাকলে কৃষি থেকে লাখপতি হওয়া স্বপ্ন নয়। তাঁর সেই বিশ্বাসই আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
কৃষি ফসল চাষ করে তিনি বহু আগেই হয়েছেন লাখপতি। এখন তিনি এলাকায় কোটিপতি হিসেবে পরিচিত। নিজের আয়ের টাকায় তিনি নির্মাণ করেছেন একটি দোতলা বাড়ি, কিনেছেন গাড়ি, এবং আলাদাভাবে আরও ১০ বিঘা কৃষিজমি কিনেছেন। প্রায় প্রতিবছরই জমি কেনেন এই সফল কৃষক।
কৃষক আমিনুল বলেন, আমি চাকরি বা উকালতি না করে কৃষিকাজকে বেছে নিয়েছিলাম ভালোবাসা থেকে। উকালতি করতে দেখলাম সবই মিথ্যা। চাকরি করলে পরের অধিনে থাকতে হবে। তাই বাপ দাদার আমলের কৃষি কাজেই বেছে নিয়েছি। এতে সফলতাও পেয়েছি দু হাত ভরে। এখন মনে হয়, জীবনের সবচেয়ে বড় সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল এটা। কৃষিকে আধুনিকভাবে করলে যে কত উন্নতি করা যায় আমি তার জীবন্ত উদাহরণ। তার বাগানে যখন শীতকালে কাঁঠাল ধরে, কিংবা মৌসুমের আগেই মালটা ও কমলা পাকতে শুরু কওে তখন দূরদূরান্ত থেকে কৃষকরা এসে শেখেন তার ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও পরিচর্যার কৌশল।
বর্তমানে আমিনুল শুধু নিজের উন্নতিই করছেন না তিনি স্থানীয় কৃষকদেরও সহায়তা করেন। অনেককে তিনি চারা দিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, আবার কারও জমিতে গিয়ে নিজ হাতে দেখিয়ে দিয়েছেন সঠিক পরিচর্যার পদ্ধতি। এভাবে শিক্ষিত তরুণ কৃষক আমিনুল ইসলাম দেখিয়ে দিয়েছেন প্রচলিত ধারনার বাইরে গিয়েও কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিলে সফল হওয়া যায়। শীতের কাঁঠাল থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকার বাঁধাকপি সব মিলিয়ে তিনি এখন এলাকায় অনুকরণীয় কৃষক। তার সাফল্য প্রমাণ করে, কৃষিই পারে মানুষকে বদলে দিতে, এগিয়ে দিতে এবং স্বপ্নকে বাস্তব করে তুলতে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
শিক্ষার আলো মানুষকে আলোকিত করে, আর পরিশ্রম সেই আলোকে এগিয়ে নিয়ে যায়ে সাফল্যের শিখরে। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর গোলায় গ্রামের আমিনুল ইসলাম যেন সেই দুই শক্তিরই উজ্জ্বল মেলবন্ধন। স্নাতকোত্তর পাশ, উকালতি পরীক্ষায় উত্তীর্ণসব মিলিয়ে তার সামনে ছিল চাকরি, আইন পেশা কিংবা শহুরে জীবনের অনেক পথ।
কিন্তু প্রচলিত পথকে পিছনে ফেলে তিনি ফিরে গেলেন শেকড়ের টানে কৃষির মাঠে। বেছে নিলেন জমি, বাগান আর মাছ চাষের পরিশ্রমী জীবন। আজ তিনি শুধু একজন কৃষক নন তিনি প্রমাণ, মাটি যখন ডাকে পরিশ্রমের হাতে তখন স্বপ্ন সত্যি হয়। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোলায় গ্রামের পরিশ্রমী ও শিক্ষিত কৃষক আমিনুল ইসলাম এখন এলাকায় সফল কৃষক হিসেবে পরিচিত নাম। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করা এবং উকালতি পাশ করা সত্ত্বেও তিনি চাকরি বা আইন পেশায় না গিয়ে বেছে নেন কৃষিকাজ। আর সেই সিদ্ধান্তই আজ তাঁকে নিয়ে গেছে সাফল্যের শিখরে। বলা যায়, কৃষিতেই কোটিপতি আমিনুল। পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফল তিনি নিজেই ঘরে তুলছেন, আর তা দেখেই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন আশপাশের তরুণরা।
আমিনুল ইসলামের রয়েছে প্রায় ২০ বিঘা জমিজুড়ে আম, কাঁঠাল, কমলা, মালটা ও পেয়ারা বাগান। ৩০ বিঘা জমিতে রয়েছে পুকুর। মাছ ও ফল চাষে তার দক্ষতা, পরিকল্পনা ও নিয়মিত পরিচর্যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। বিশেষত কাঁঠালের মৌসুমের বাইরে শীতকালেও তার বাগানে কাঁঠাল ধরছোয়া আশেপাশের কৃষকদেরও তাক লাগিয়েছে। গত বছর এক একটি কাঁঠাল তিনি বিক্রি করেছেন ৮ থেকে ৯০০ টাকা দামে। এবারও বাগানের ৪০০ গাছে এসেছে। তিনি অন্তত ১০ লাখ টাকা আয় করবেন। বাগানের প্রতিটি গাছ তিনি যত্ন করেন সন্তানসুলভ সার, পানি, পরিচর্যা যা দরকার সবই তিনি নিয়ম মেনে করে থাকেন।
ফল বাগানের পাশাপাশি তিনি সবজি চাষেও সমান সফল। প্রতি বছর তিনি প্রায় ২০ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেন। এবছর তিনি ১৬ বিঘা জমিতে রোপন করেছেন উন্নত জাতের বাঁধাকপি। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকার বাঁধাকপি বিক্রি করেছেন।
কৃষিকাজ শুরু থেকেই আমিনুল ইসলাম বিশ্বাস করতেন জমি, পরিশ্রম এবং সঠিক পরিকল্পনা থাকলে কৃষি থেকে লাখপতি হওয়া স্বপ্ন নয়। তাঁর সেই বিশ্বাসই আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
কৃষি ফসল চাষ করে তিনি বহু আগেই হয়েছেন লাখপতি। এখন তিনি এলাকায় কোটিপতি হিসেবে পরিচিত। নিজের আয়ের টাকায় তিনি নির্মাণ করেছেন একটি দোতলা বাড়ি, কিনেছেন গাড়ি, এবং আলাদাভাবে আরও ১০ বিঘা কৃষিজমি কিনেছেন। প্রায় প্রতিবছরই জমি কেনেন এই সফল কৃষক।
কৃষক আমিনুল বলেন, আমি চাকরি বা উকালতি না করে কৃষিকাজকে বেছে নিয়েছিলাম ভালোবাসা থেকে। উকালতি করতে দেখলাম সবই মিথ্যা। চাকরি করলে পরের অধিনে থাকতে হবে। তাই বাপ দাদার আমলের কৃষি কাজেই বেছে নিয়েছি। এতে সফলতাও পেয়েছি দু হাত ভরে। এখন মনে হয়, জীবনের সবচেয়ে বড় সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল এটা। কৃষিকে আধুনিকভাবে করলে যে কত উন্নতি করা যায় আমি তার জীবন্ত উদাহরণ। তার বাগানে যখন শীতকালে কাঁঠাল ধরে, কিংবা মৌসুমের আগেই মালটা ও কমলা পাকতে শুরু কওে তখন দূরদূরান্ত থেকে কৃষকরা এসে শেখেন তার ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও পরিচর্যার কৌশল।
বর্তমানে আমিনুল শুধু নিজের উন্নতিই করছেন না তিনি স্থানীয় কৃষকদেরও সহায়তা করেন। অনেককে তিনি চারা দিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, আবার কারও জমিতে গিয়ে নিজ হাতে দেখিয়ে দিয়েছেন সঠিক পরিচর্যার পদ্ধতি। এভাবে শিক্ষিত তরুণ কৃষক আমিনুল ইসলাম দেখিয়ে দিয়েছেন প্রচলিত ধারনার বাইরে গিয়েও কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিলে সফল হওয়া যায়। শীতের কাঁঠাল থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকার বাঁধাকপি সব মিলিয়ে তিনি এখন এলাকায় অনুকরণীয় কৃষক। তার সাফল্য প্রমাণ করে, কৃষিই পারে মানুষকে বদলে দিতে, এগিয়ে দিতে এবং স্বপ্নকে বাস্তব করে তুলতে।