কুষ্টিয়া : অবৈধ ইটভাটা -সংবাদ
কুষ্টিয়ায় ২১৩টি ইটভাটার মধ্যে মাত্র ১৭টি বৈধ,বাকী সবগুলো অবৈধ। কুষ্টিয়ায় সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বিপুল সংখ্যক ইটভাটা। পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকলেও অনেক ভাটামালিক প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে দাপটের সঙ্গে ভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি, উজাড় হচ্ছে বনসম্পদ এবং ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে স্থানীয় জনজীবন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার ছয় উপজেলার ২১৩টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ১৭টির। বাকি ১৯৬টি ভাটা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বৈধ ভাটার মধ্যে ভেড়ামারায় ৩টি, দৌলতপুরে ১টি, কুমারখালীতে ৯টি এবং খোকসায় ৪টি। কুষ্টিয়া সদর ও মিরপুর উপজেলায় নেই একটিও বৈধ ইটভাটা। এর মধ্যে ২১টি ভাটার মালিক হাইকোর্টে রিট করায় রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারবে না বলে পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ জেলায় প্রতিটি ভাটার জন্য কমপক্ষে তিন থেকে চার একর উর্বর জমি নষ্ট করা হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও মৌসুম শুরু আগেই কৃষিজমি ও নদীর পলি মাটি কেটে নতুন ইট প্রস্তুত করছে ভাটাগুলো। এতে কমছে খাদ্যশস্য উৎপাদন, হুমকিতে পড়ছে কৃষি ও পরিবেশ। এলাকার কৃষকরা বলেন, টভাটার কারণে আমাদের জমি নষ্ট হচ্ছে। কাঠ পুড়িয়ে গাছপালা উজাড় করছে। ভাটার ধোঁয়া ও ছাই ফসল এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে।
একজন বৈধ ভাটামালিক বলেন, ভাটা মালিক সমিতির শক্তিশালী সিন্ডিকেট, তদবির এবং অর্থবিত্তের প্রভাবে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে না। আবার অনেকে হাইকোর্টে রিট করে জটিলতা তৈরি করেছে।
পরিবেশ গবেষক গৌতম কুমার রায় বলেন, দেশের প্রায় ১০ হাজার ইটভাটার মধ্যে ৪ হাজারই অবৈধ। এসব ভাটায় গড়ে ৯৫ শতাংশ কাঠ পোড়ানো হয়, যা বছরে ২৫০ লাখ মেট্রিক টন কাঠ ধ্বংস করে। এতে মাটির উর্বরতা, বায়ুর মান ও পরিবেশ সব দিক থেকেই ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। তাঁর মতে, ইটভাটার বিকল্প হিসেবে ব্লক ইট এখন সময়ের দাবি।
কুষ্টিয়া ইটভাটা মালিক সমিতির একাংশের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলী দাবি করেন, তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৭৩টি ভাটার মধ্যে কয়েকটি ছাড়া সবাই কয়লা ব্যবহার করে। তবে পরিবেশ ছাড়পত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কারোই পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। আমরা নিয়মিত সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দীর্ঘদিন থেকেই বন্ধ।”
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মো. ইমদাদুল হক জানান, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সব ভাটায় অভিযান চালানো হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
কুষ্টিয়া : অবৈধ ইটভাটা -সংবাদ
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কুষ্টিয়ায় ২১৩টি ইটভাটার মধ্যে মাত্র ১৭টি বৈধ,বাকী সবগুলো অবৈধ। কুষ্টিয়ায় সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বিপুল সংখ্যক ইটভাটা। পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকলেও অনেক ভাটামালিক প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে দাপটের সঙ্গে ভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি, উজাড় হচ্ছে বনসম্পদ এবং ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে স্থানীয় জনজীবন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার ছয় উপজেলার ২১৩টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ১৭টির। বাকি ১৯৬টি ভাটা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বৈধ ভাটার মধ্যে ভেড়ামারায় ৩টি, দৌলতপুরে ১টি, কুমারখালীতে ৯টি এবং খোকসায় ৪টি। কুষ্টিয়া সদর ও মিরপুর উপজেলায় নেই একটিও বৈধ ইটভাটা। এর মধ্যে ২১টি ভাটার মালিক হাইকোর্টে রিট করায় রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারবে না বলে পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ জেলায় প্রতিটি ভাটার জন্য কমপক্ষে তিন থেকে চার একর উর্বর জমি নষ্ট করা হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও মৌসুম শুরু আগেই কৃষিজমি ও নদীর পলি মাটি কেটে নতুন ইট প্রস্তুত করছে ভাটাগুলো। এতে কমছে খাদ্যশস্য উৎপাদন, হুমকিতে পড়ছে কৃষি ও পরিবেশ। এলাকার কৃষকরা বলেন, টভাটার কারণে আমাদের জমি নষ্ট হচ্ছে। কাঠ পুড়িয়ে গাছপালা উজাড় করছে। ভাটার ধোঁয়া ও ছাই ফসল এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে।
একজন বৈধ ভাটামালিক বলেন, ভাটা মালিক সমিতির শক্তিশালী সিন্ডিকেট, তদবির এবং অর্থবিত্তের প্রভাবে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে না। আবার অনেকে হাইকোর্টে রিট করে জটিলতা তৈরি করেছে।
পরিবেশ গবেষক গৌতম কুমার রায় বলেন, দেশের প্রায় ১০ হাজার ইটভাটার মধ্যে ৪ হাজারই অবৈধ। এসব ভাটায় গড়ে ৯৫ শতাংশ কাঠ পোড়ানো হয়, যা বছরে ২৫০ লাখ মেট্রিক টন কাঠ ধ্বংস করে। এতে মাটির উর্বরতা, বায়ুর মান ও পরিবেশ সব দিক থেকেই ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। তাঁর মতে, ইটভাটার বিকল্প হিসেবে ব্লক ইট এখন সময়ের দাবি।
কুষ্টিয়া ইটভাটা মালিক সমিতির একাংশের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলী দাবি করেন, তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৭৩টি ভাটার মধ্যে কয়েকটি ছাড়া সবাই কয়লা ব্যবহার করে। তবে পরিবেশ ছাড়পত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কারোই পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। আমরা নিয়মিত সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দীর্ঘদিন থেকেই বন্ধ।”
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মো. ইমদাদুল হক জানান, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সব ভাটায় অভিযান চালানো হবে।