alt

তরমুজের লোভে বন উজাড়, ভেঙে পড়ছে উপকূলের সবুজ বেষ্টনী

প্রতিনিধি, পটুয়াখালী : শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

পটুয়াখালীর গলাচিপার চর পাঙ্গাশিয়া থেকে তোলা -সংবাদ

পটুয়াখালীর উপকূলীয় গলাচিপা, দশমিনা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় বন ভূমি দখলেল উদ্দেশ্যে বন উজার করা হচ্ছে। স্থানীয় ভূমি অফিসের সম্মতি নিয়েই তরমুজ মৌসুমে এভাবে বন ও নদীভূমি দখলের ঘটনা ঘটছে। এতে করে সংরক্ষিত বনে ভয়াবহ হুমকি তৈরি হয়েছে। তরমুজ চাষাবাদকে কেন্দ্র করে স্থানীয় একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি ম্যানগ্রোভ বনের গাছ কেটে তৈরি করছেন কৃষিজমি। ভেকুর (এক্সাকা?ভেটর) শক্তিশালী দাঁতে উপড়ে পড়ছে শত শত কেওড়া, ছৈলা, ঝাউ ও গেওড়াগাছ। এতে নদীভাঙন ও জলোচ্ছ্বাস-ঝুঁকি আরও বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন পরিবেশবিদরা।

গলাচিপার পাঙ্গাশিয়া চর, রাঙ্গাবালীর চর সাইনবোর্ড ও নয়ার চর, দশমিনার চর ফাতেমা এলাকার সংরক্ষিত বন এখন দখলের বড় চাপের মুখে। বন বিভাগের হিসাব বলছে, চারটি সংরক্ষিত বনের অন্তত ১০০ একর বনভূমিতে তরমুজ খেত তৈরির উদ্যোগ চলছে। এ জন্য কাটা পড়েছে ম্যানগ্রোভ বনের সহস্রাধিক গাছ। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ আর নদীভাঙনের প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে এই ম্যানগ্রোভ বন। তরমুজ ফলে ভেঙে পড়ছে উপকূলের সবুজ বেষ্টনী।

বন বিভাগ, পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা গলাচিপার চর আগস্তি বীচের আওতায় পাঙ্গাশিয়া চরে চর সাইনবোর্ড এলাকা ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল ১১৫ একর সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই সংরক্ষিত বনের ভিতরের ছোট ছোট কেওড়া ও ছৈলা গাছ কেটে অন্তত ৩০ একর জায়গায় তরমুজ ক্ষেতের জন্য দখলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে দুইটি ভেকু মেশিন নামিয়ে চারিদিকে মাটির বেড়িবাঁধ দেওয়া হচ্ছে। জনৈক গিয়াস হাওলাদার ও মো, নোমানসহ কয়েকজন মিলে এই বনভূমি দখলের চেষ্টা করছেন।

এদিকে গলাচিপার চরকাজলের, ১২৩ নং জেএলভুক্ত চরমায়া মৌজার মায়ার চরের এক নং খাস খতিয়ানভুক্ত ৩০ একর সরকারি কৃষি খাস জমি তাকেসহ ২০জন ভুমিহীন কৃষকের অনুকূলে বরাদ্ধ পেয়েছেন। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল তৎকালিন সহকারি কমিশনার (ভুমি) এই জমি এক বছরের জন্য চাষের অনুমতি প্রদান করেছেন।

চাষের অনুমতি পাওয়া মাজহারুল ইসলাম দাবি করেছেন, তাঁরা সংশ্লিষ্ট উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে মৌসুমি চাষাবাদের অনুমতি নিয়েছেন। তিনি যেই অনুমতি পত্র দেখিয়েছেন তা ছিল স্মারকবিহীন । কিন্তু সংরক্ষিত বনভূমি কোনোভাবেই কৃষি খেত হিসেবে ইজারা দেওয়ার নিয়ম নেই। আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে এই বিষয়টি স্পষ্ট করেছে বন বিভাগ।

বন বিভাগের গলাচিপা রেঞ্জ কর্মকর্তা নয়ন মিস্ত্রী বলেন, সংরক্ষিত বনে ভেকু নামিয়ে বাঁধ দেওয়ার খবর পাওয়ার পর কাজ বন্ধ করতে বলেছি। কিন্তু তারা শুনছে না। ইতিমধ্যে দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি থানার ওসিকে জানিয়েছি। তারপর দিনে কাজ বন্ধ হলেও রাতে বনের জমিতে বাঁধ নির্মানের কাজ চলছে। গলাচিপার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম সাহিদ বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। তাই অনুমতির ব্যাপারে খোজ নিয়ে বলতো পারবো। সরবরাহকৃত অনুমতিপত্র ঘেটে তিনি বলেন, তাড়াহুড়ার কারনে অনুমতিপত্রে কিছুটা দ্রুতি রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে বন বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। সেই অভিযোগের একটা অনুলিপি আমার কাছেও এসেছে। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে কোন নির্দেশনা আসেনি।

এদিকে রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চর সাইনবোর্ড এলাকা ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ৪১৫ একর সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ঘোষণায় এও উল্লেখ ছিল, ভবিষ্যতে এ চরের সঙ্গে যে নতুন চর জাগবে, তাও বন বিভাগের আওতায় থাকবে। ঘোষণার পর থেকেই বন বিভাগ চরটিতে ম্যানগ্রোভসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করে বনায়ন শুরু করে।

গত ১৮ নভেম্বর এই সংরক্ষিত বনে প্রথমে তিনটি ভেকু মেশিন নামিয়ে রাতের আধারে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করে তরমুজ ক্ষেত তৈরির কাজ শুরু করে। স্থানীয় মানিক মোল্লা নামে এক ব্যক্তি এই দখল পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বনের চারিদিকে ও নদীর তীর ঘেসে বাঁধ নির্মাণের জন্য অন্তত দুই শতাধিক ঝাউ, কেওড়া, গেওড়া ও বাইনগাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে।

বনভূমিতে ক্ষেত তৈরির কাজে জড়িত মানিক মোল্লা বলেন, তাঁরাও রাঙ্গাবালী উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের তহসিলদার জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই চরে তরমুজ খেত করছেন বলে জানিয়েছেন।

এছাড়াও রাঙ্গাবালীর নয়ার চরে সংরক্ষিত বনের প্রায় ৩০ একর কৃষিক্ষেত করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বন বিভাগের বাধার মুখে এখন সেখানে কাজ বন্ধ রয়েছে।

বন বিভাগের রাঙ্গাবালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, চর সাইবোর্ডে সংরক্ষিত বন দখলের খবর পাওয়ার পর তিনি বিষয়টি রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। সংরক্ষিত বন ধ্বংসের কোনো সুযোগ নেই। যারা বন নষ্ট করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

দশমিনা উপজেলার চর হায়দার ক্যাম্পের চর ফাতেমায় তরমুজ চাষের জন্য বন ধ্বংস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় ২০ একর বনভূমির গাছ নস্ট করে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তারা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবরে অবহিত করেছেন।

উপকূলীয় বন বিভাগ পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. জাহিদুর রহমান মিয়া বলেন, ইদানিং পটুয়াখালীর গলাচিপা, দশমিনা. রাঙ্গাবালী উপজেলায় সরকারি সংরক্ষিত (২০ ধারা) বনে কতিপয় দুস্কৃতিকারী ব্যাক্তি

তরমুজ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য বনের সৃজিত বাগান ও প্রকৃতিক ভাবে সৃষ্ট কেওড়া,ছৈলা গাছ দিনে-রাতে কর্তন ও অপসারণ করে বনভূমি জবরদখলের চেষ্টা করছে। এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে জেলা প্রশাসককে অবহিতসহ বন রক্ষায় সহযোগিতা চেয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ড. শহীদ হোসেন চৌধুরী বলেন,বন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র আমাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। আমরা যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে আমাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছবি

কলমাকান্দায় হানাদার মুক্ত দিবস আজ

ছবি

শেরপুরে দইয়ের বাজার মন্দা, বিপাকে খামারীরা

ছবি

ডিমলায় নাশকতার ঘটনায় মামলা না হওয়ায় উত্তেজনা

ছবি

গঙ্গাচড়ায় ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষক আটক

ছবি

শিমুলিয়া ঘাটে পোর্ট অফিসারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে আটকে মারধরের অভিযোগ

ছবি

শিমুলিয়া ঘাটে পোর্ট অফিসারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে আটকে মারধরের অভিযোগ

ছবি

ঝালকাঠিতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

ছবি

বেগম জিয়া দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে সমান জনপ্রিয় -ড. মঈন খান

ছবি

সরবরাহ বাড়লেও সীমার বাইরে শীতকালীন সবজির দাম

ছবি

বরেন্দ্রের লাল মাটিতে টমেটো বিপ্লব স্বাবলম্বী হাজারো কৃষক

ছবি

শেরপুরে ২৪ ঘণ্টায় ৩টি মোটরসাইকেল চুরি

ছবি

তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে জেগে উঠা ডুবোচর

ছবি

তারাগঞ্জে সার সংকট গুজব, ডিলারের বিশ হাজার জরিমানা

ছবি

শীতে গরম জিলাপির ঘ্রাণে মুখর চরফ্যাসন বিক্রি বাড়ছে কয়েকগুণ

ছবি

মহম্মদপুর আদিবাসী পল্লীতে মতুয়া সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ছবি

রৌমারতে শীতার্ত মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণ

ছবি

দুমকিতে জনবল সংকটে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কার্যক্রম ব্যাহত

ছবি

সাপাহারে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ

ছবি

জয়পুরহাটে ৪৫ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন নেই ২৭টির

ছবি

বদলি- প্রশিক্ষণে শূন্য চুনারুঘাট, থমকে আছে জরুরি সেবা

ছবি

বিএনপির মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবীতে প্রতিবাদ সভা

ছবি

মহম্মদপুরে ঘোপ বাঁওড়ে অতিথি পাখির বিচরণে মুখরিত

ছবি

টাঙ্গাইলে কৃষকের রোপা আমন চাষে সাফল্য

ছবি

বেতাগীতে শীতবস্ত্রের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে

ছবি

গাইবান্ধা হানাদার মুক্ত দিবস আজ

ছবি

আজ বেগমগঞ্জ মুক্ত দিবস

ছবি

নরসিংদীতে গাঁজাসহ আটক ২

ছবি

দেলদুয়ারে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও শীতবস্ত্র বিতরণ

ছবি

মাগুরায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পেট্রোল বোমা হামলায় দলিলপত্র পুড়ে ছাই

ছবি

রূপগঞ্জে প্রবাসীর ছেলের ডাকাতির নাটক, ৩ কিশোর গ্রেপ্তার

ছবি

জগন্নাথপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১০ দোকান পুড়ে ছাই

ছবি

খুলশীতে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ছবি

কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রিতে, ঠাণ্ডায় নাকাল জনজীবন

ছবি

ফরিদপুরে নির্মাণাধীন ভবন ধসে ২০ কোটি টাকার ক্ষতি

ছবি

ডিমলায় বুড়ি তিস্তা খননের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মশাল মিছিল

ছবি

রাজশাহীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বাড়ি থেকে ৪৪৪ বস্তা সার জব্দ

tab

তরমুজের লোভে বন উজাড়, ভেঙে পড়ছে উপকূলের সবুজ বেষ্টনী

প্রতিনিধি, পটুয়াখালী

পটুয়াখালীর গলাচিপার চর পাঙ্গাশিয়া থেকে তোলা -সংবাদ

শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

পটুয়াখালীর উপকূলীয় গলাচিপা, দশমিনা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় বন ভূমি দখলেল উদ্দেশ্যে বন উজার করা হচ্ছে। স্থানীয় ভূমি অফিসের সম্মতি নিয়েই তরমুজ মৌসুমে এভাবে বন ও নদীভূমি দখলের ঘটনা ঘটছে। এতে করে সংরক্ষিত বনে ভয়াবহ হুমকি তৈরি হয়েছে। তরমুজ চাষাবাদকে কেন্দ্র করে স্থানীয় একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি ম্যানগ্রোভ বনের গাছ কেটে তৈরি করছেন কৃষিজমি। ভেকুর (এক্সাকা?ভেটর) শক্তিশালী দাঁতে উপড়ে পড়ছে শত শত কেওড়া, ছৈলা, ঝাউ ও গেওড়াগাছ। এতে নদীভাঙন ও জলোচ্ছ্বাস-ঝুঁকি আরও বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন পরিবেশবিদরা।

গলাচিপার পাঙ্গাশিয়া চর, রাঙ্গাবালীর চর সাইনবোর্ড ও নয়ার চর, দশমিনার চর ফাতেমা এলাকার সংরক্ষিত বন এখন দখলের বড় চাপের মুখে। বন বিভাগের হিসাব বলছে, চারটি সংরক্ষিত বনের অন্তত ১০০ একর বনভূমিতে তরমুজ খেত তৈরির উদ্যোগ চলছে। এ জন্য কাটা পড়েছে ম্যানগ্রোভ বনের সহস্রাধিক গাছ। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ আর নদীভাঙনের প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে এই ম্যানগ্রোভ বন। তরমুজ ফলে ভেঙে পড়ছে উপকূলের সবুজ বেষ্টনী।

বন বিভাগ, পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা গলাচিপার চর আগস্তি বীচের আওতায় পাঙ্গাশিয়া চরে চর সাইনবোর্ড এলাকা ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল ১১৫ একর সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই সংরক্ষিত বনের ভিতরের ছোট ছোট কেওড়া ও ছৈলা গাছ কেটে অন্তত ৩০ একর জায়গায় তরমুজ ক্ষেতের জন্য দখলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে দুইটি ভেকু মেশিন নামিয়ে চারিদিকে মাটির বেড়িবাঁধ দেওয়া হচ্ছে। জনৈক গিয়াস হাওলাদার ও মো, নোমানসহ কয়েকজন মিলে এই বনভূমি দখলের চেষ্টা করছেন।

এদিকে গলাচিপার চরকাজলের, ১২৩ নং জেএলভুক্ত চরমায়া মৌজার মায়ার চরের এক নং খাস খতিয়ানভুক্ত ৩০ একর সরকারি কৃষি খাস জমি তাকেসহ ২০জন ভুমিহীন কৃষকের অনুকূলে বরাদ্ধ পেয়েছেন। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল তৎকালিন সহকারি কমিশনার (ভুমি) এই জমি এক বছরের জন্য চাষের অনুমতি প্রদান করেছেন।

চাষের অনুমতি পাওয়া মাজহারুল ইসলাম দাবি করেছেন, তাঁরা সংশ্লিষ্ট উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে মৌসুমি চাষাবাদের অনুমতি নিয়েছেন। তিনি যেই অনুমতি পত্র দেখিয়েছেন তা ছিল স্মারকবিহীন । কিন্তু সংরক্ষিত বনভূমি কোনোভাবেই কৃষি খেত হিসেবে ইজারা দেওয়ার নিয়ম নেই। আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে এই বিষয়টি স্পষ্ট করেছে বন বিভাগ।

বন বিভাগের গলাচিপা রেঞ্জ কর্মকর্তা নয়ন মিস্ত্রী বলেন, সংরক্ষিত বনে ভেকু নামিয়ে বাঁধ দেওয়ার খবর পাওয়ার পর কাজ বন্ধ করতে বলেছি। কিন্তু তারা শুনছে না। ইতিমধ্যে দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি থানার ওসিকে জানিয়েছি। তারপর দিনে কাজ বন্ধ হলেও রাতে বনের জমিতে বাঁধ নির্মানের কাজ চলছে। গলাচিপার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম সাহিদ বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। তাই অনুমতির ব্যাপারে খোজ নিয়ে বলতো পারবো। সরবরাহকৃত অনুমতিপত্র ঘেটে তিনি বলেন, তাড়াহুড়ার কারনে অনুমতিপত্রে কিছুটা দ্রুতি রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে বন বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। সেই অভিযোগের একটা অনুলিপি আমার কাছেও এসেছে। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে কোন নির্দেশনা আসেনি।

এদিকে রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চর সাইনবোর্ড এলাকা ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ৪১৫ একর সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ঘোষণায় এও উল্লেখ ছিল, ভবিষ্যতে এ চরের সঙ্গে যে নতুন চর জাগবে, তাও বন বিভাগের আওতায় থাকবে। ঘোষণার পর থেকেই বন বিভাগ চরটিতে ম্যানগ্রোভসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করে বনায়ন শুরু করে।

গত ১৮ নভেম্বর এই সংরক্ষিত বনে প্রথমে তিনটি ভেকু মেশিন নামিয়ে রাতের আধারে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করে তরমুজ ক্ষেত তৈরির কাজ শুরু করে। স্থানীয় মানিক মোল্লা নামে এক ব্যক্তি এই দখল পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বনের চারিদিকে ও নদীর তীর ঘেসে বাঁধ নির্মাণের জন্য অন্তত দুই শতাধিক ঝাউ, কেওড়া, গেওড়া ও বাইনগাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে।

বনভূমিতে ক্ষেত তৈরির কাজে জড়িত মানিক মোল্লা বলেন, তাঁরাও রাঙ্গাবালী উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের তহসিলদার জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই চরে তরমুজ খেত করছেন বলে জানিয়েছেন।

এছাড়াও রাঙ্গাবালীর নয়ার চরে সংরক্ষিত বনের প্রায় ৩০ একর কৃষিক্ষেত করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বন বিভাগের বাধার মুখে এখন সেখানে কাজ বন্ধ রয়েছে।

বন বিভাগের রাঙ্গাবালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, চর সাইবোর্ডে সংরক্ষিত বন দখলের খবর পাওয়ার পর তিনি বিষয়টি রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। সংরক্ষিত বন ধ্বংসের কোনো সুযোগ নেই। যারা বন নষ্ট করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

দশমিনা উপজেলার চর হায়দার ক্যাম্পের চর ফাতেমায় তরমুজ চাষের জন্য বন ধ্বংস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় ২০ একর বনভূমির গাছ নস্ট করে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তারা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবরে অবহিত করেছেন।

উপকূলীয় বন বিভাগ পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. জাহিদুর রহমান মিয়া বলেন, ইদানিং পটুয়াখালীর গলাচিপা, দশমিনা. রাঙ্গাবালী উপজেলায় সরকারি সংরক্ষিত (২০ ধারা) বনে কতিপয় দুস্কৃতিকারী ব্যাক্তি

তরমুজ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য বনের সৃজিত বাগান ও প্রকৃতিক ভাবে সৃষ্ট কেওড়া,ছৈলা গাছ দিনে-রাতে কর্তন ও অপসারণ করে বনভূমি জবরদখলের চেষ্টা করছে। এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে জেলা প্রশাসককে অবহিতসহ বন রক্ষায় সহযোগিতা চেয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ড. শহীদ হোসেন চৌধুরী বলেন,বন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র আমাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। আমরা যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে আমাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

back to top