জয়পুরহাট : পোড়ানোর জন্য তৈরি কাচাইট -সংবাদ
জয়পুরহাটে ৪৫ ইটভাটর পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন নেই ২৭টির। জেলায় সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে অবাধে চলে আসছে বেশিরভাগ ইটভাটা। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে ভাটা এলাকার ফসলি জমি, বিভিন্ন গাছপালা ও পরিবেশ। আর ভাটার কালো ধোঁয়ায় বিষিয়ে উঠছে জনজীবন। ইটভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকরী তেমন কোন পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। এতে চরম ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও জেলা পরিবেশ অধিদফতর ও প্রশাসন এসব অবৈধ ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আশ্বাস দিয়েছেন।
জানা গেছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাট-বাজারসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রতিষ্ঠানের আশপাশে বা ফসলি জমিতে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু এ আইনের বাস্তবায়ন নেই এ জেলায়। সরকারি নিয়ম না মেনেই জেলায় যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ৪৫টি ইটভাটা। এর বেশিরভাগেরই নেই লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র। অভিযোগ রয়েছে, ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় জেলাজুড়ে দেদারসে চালাচ্ছেন এমন অবৈধ ইটভাটা। আবার বিগত বছরগুলোতে জেলার কোনো কোনো ভাটাতে শিশু শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে এবছরও তার ব্যতিক্রম নয় যদিও চলতি মৌসুমে ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম সবে শুরু । এছাড়া আইন অমান্য করে বিগত বছরগুলোতে পোড়ানো হয়েছে কাঠ খড়ি। আর এসব ইটভাটার কালো ধোয়ায় বিষিয়ে উঠেছে জনজীবন। এতে শ্বাসকষ্টসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে স্থানীয় মানুষ, বিপর্যয় হচ্ছে পরিবেশ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার কারণে ক্ষতি হচ্ছে ভাটা এলাকার বিভিন্ন গাছপালা, ফল-মূল ও ফসল। আইনকে তোয়াক্কা না করেই চলছে এসব ভাটা। তাই প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এখনি বলে মনে করেন তারা।
জেলার সদর উপজেলার তাজপুর গ্রামের ললিত নামের এক ব্যক্তি বলেন, ইটভাটার কারণে বাড়ির পাশের ফুলমূল ও গাছপালার ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে ফসলেরও। একই গ্রামের জয়ন্তী বলেন, ভাটার কার্যক্রম যখন শেষের দিকে তখন বিষাক্ত ধোয়া ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে ফলমূল ও জমির ধান নষ্ট হয়ে যায়। আমের গাছে ওষুধ দিয়েও কাজ হয় না, ঝড়ে যায় আমের বুঁড়ি। নিয়ম মেনে ভাটা চলছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে, সদর উপজেলার তাজপুর এলাকার ভাটা মালিক আফতাব আলী কথা বলতে রাজী হননি। তবে পুরানাপৈল এলাকার ভাটা মালিক লেবু হাজী বলেন, আমরাতো নিয়ম মেনেই ভাটা পরিচালনা করছি।
বেলআমলা এলাকার ভাটা মালিক মতিয়র বলেন, একজনের কাছ থেকে ভাটাটি কিনে নিয়েছি। এরপর সদস্য হওয়ার জন্য সমিতিকে ১ লাখ টাকা ফি দিয়েছি। বিভিন্ন জায়গায় ব্যয় হয় বলে এই টাকা নিয়েছে। আমার ভাটার পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য অনলাইনে দরখাস্ত করেছি। পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকলে তো লাইসেন্স দিবে না। তিনি বলেন, দেশে এতো ভাটা, সবার কি পরিবেশ ছাড়পত্র আছে কি? তারা যেভাবে ভাটা চালাচ্ছে আমিও সেইভাবে চালাচ্ছি।
জয়পুরহাট জেলা ইটভাটা মালিক সমিতি ও জেলা চেম্বারের সভাপতি আব্দুল হাকিম মল বলেন, আমরা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিই। এজন্য জেলায় অবৈধ কোনো ইটভাটা নেই। সব ইট ভাটায় বৈধ।
অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের এবারের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে, পরিবেশ অধিদফতর জয়পুরহাট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফারূক হোসেন বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপনা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল-ক্লিনিকের আশপাশে ও কৃষি জমিতে ইটভাটা গড়ে তোলা যাবে না। এ জেলায় ৪৫টি ইটভাটা রয়েছে। তার মধ্যে ২৭টি ইট ভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন নেই,১৮ টির আছে। ২৭টি ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন নেই কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে, মোহাম্মদ ফারূক হোসেন আরও বলেন, পরিবেশগত দিক থেকে ওই ইটভাটা পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন পাওয়ার অযোগ্য তাই নবায়ন হয়নি। আমরা অবৈধ ইটভাটার বিরূদ্ধে মোবাইল কোর্টসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর এ জন্য জেলা প্রশাসক মহদয়ের সাথে এবিষয়ে কথাও হয়েছে। ইটভাটার মৌসুম শুরূ, জেলায় অবৈধ ইটভাটা বা পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন নেই এমন ইটভাটা মালকেদের বিরূদ্ধে আইনানুগ কি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলা প্রশাসন।এমন প্রশ্নের জবাবে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক মো. আল-মামুন মিয়া বলেন, নীতিমালার আলোকে জেলা প্রশাসন ইটভাটার লাইসেন্স দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে পরিবেশ ছাড়পত্র থাকতে হবে। জেলা প্রশাসন থেকে পরিবেশ ছাড়পত্র বিহীন কোনো লাইসেন্স অনুমোদন করা হয় না। আমি নতুন এসেছি, তবে যাদের পরিবেশ চাড়পত্র নবায়ন নেই তাদের ভাটা চলবেনা,আর এসব বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান জেলার এই শীর্ষ।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
জয়পুরহাট : পোড়ানোর জন্য তৈরি কাচাইট -সংবাদ
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
জয়পুরহাটে ৪৫ ইটভাটর পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন নেই ২৭টির। জেলায় সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে অবাধে চলে আসছে বেশিরভাগ ইটভাটা। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে ভাটা এলাকার ফসলি জমি, বিভিন্ন গাছপালা ও পরিবেশ। আর ভাটার কালো ধোঁয়ায় বিষিয়ে উঠছে জনজীবন। ইটভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকরী তেমন কোন পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। এতে চরম ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও জেলা পরিবেশ অধিদফতর ও প্রশাসন এসব অবৈধ ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আশ্বাস দিয়েছেন।
জানা গেছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাট-বাজারসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রতিষ্ঠানের আশপাশে বা ফসলি জমিতে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু এ আইনের বাস্তবায়ন নেই এ জেলায়। সরকারি নিয়ম না মেনেই জেলায় যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ৪৫টি ইটভাটা। এর বেশিরভাগেরই নেই লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র। অভিযোগ রয়েছে, ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় জেলাজুড়ে দেদারসে চালাচ্ছেন এমন অবৈধ ইটভাটা। আবার বিগত বছরগুলোতে জেলার কোনো কোনো ভাটাতে শিশু শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে এবছরও তার ব্যতিক্রম নয় যদিও চলতি মৌসুমে ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম সবে শুরু । এছাড়া আইন অমান্য করে বিগত বছরগুলোতে পোড়ানো হয়েছে কাঠ খড়ি। আর এসব ইটভাটার কালো ধোয়ায় বিষিয়ে উঠেছে জনজীবন। এতে শ্বাসকষ্টসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে স্থানীয় মানুষ, বিপর্যয় হচ্ছে পরিবেশ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার কারণে ক্ষতি হচ্ছে ভাটা এলাকার বিভিন্ন গাছপালা, ফল-মূল ও ফসল। আইনকে তোয়াক্কা না করেই চলছে এসব ভাটা। তাই প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এখনি বলে মনে করেন তারা।
জেলার সদর উপজেলার তাজপুর গ্রামের ললিত নামের এক ব্যক্তি বলেন, ইটভাটার কারণে বাড়ির পাশের ফুলমূল ও গাছপালার ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে ফসলেরও। একই গ্রামের জয়ন্তী বলেন, ভাটার কার্যক্রম যখন শেষের দিকে তখন বিষাক্ত ধোয়া ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে ফলমূল ও জমির ধান নষ্ট হয়ে যায়। আমের গাছে ওষুধ দিয়েও কাজ হয় না, ঝড়ে যায় আমের বুঁড়ি। নিয়ম মেনে ভাটা চলছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে, সদর উপজেলার তাজপুর এলাকার ভাটা মালিক আফতাব আলী কথা বলতে রাজী হননি। তবে পুরানাপৈল এলাকার ভাটা মালিক লেবু হাজী বলেন, আমরাতো নিয়ম মেনেই ভাটা পরিচালনা করছি।
বেলআমলা এলাকার ভাটা মালিক মতিয়র বলেন, একজনের কাছ থেকে ভাটাটি কিনে নিয়েছি। এরপর সদস্য হওয়ার জন্য সমিতিকে ১ লাখ টাকা ফি দিয়েছি। বিভিন্ন জায়গায় ব্যয় হয় বলে এই টাকা নিয়েছে। আমার ভাটার পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য অনলাইনে দরখাস্ত করেছি। পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকলে তো লাইসেন্স দিবে না। তিনি বলেন, দেশে এতো ভাটা, সবার কি পরিবেশ ছাড়পত্র আছে কি? তারা যেভাবে ভাটা চালাচ্ছে আমিও সেইভাবে চালাচ্ছি।
জয়পুরহাট জেলা ইটভাটা মালিক সমিতি ও জেলা চেম্বারের সভাপতি আব্দুল হাকিম মল বলেন, আমরা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিই। এজন্য জেলায় অবৈধ কোনো ইটভাটা নেই। সব ইট ভাটায় বৈধ।
অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের এবারের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে, পরিবেশ অধিদফতর জয়পুরহাট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফারূক হোসেন বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপনা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল-ক্লিনিকের আশপাশে ও কৃষি জমিতে ইটভাটা গড়ে তোলা যাবে না। এ জেলায় ৪৫টি ইটভাটা রয়েছে। তার মধ্যে ২৭টি ইট ভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন নেই,১৮ টির আছে। ২৭টি ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন নেই কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে, মোহাম্মদ ফারূক হোসেন আরও বলেন, পরিবেশগত দিক থেকে ওই ইটভাটা পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন পাওয়ার অযোগ্য তাই নবায়ন হয়নি। আমরা অবৈধ ইটভাটার বিরূদ্ধে মোবাইল কোর্টসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর এ জন্য জেলা প্রশাসক মহদয়ের সাথে এবিষয়ে কথাও হয়েছে। ইটভাটার মৌসুম শুরূ, জেলায় অবৈধ ইটভাটা বা পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন নেই এমন ইটভাটা মালকেদের বিরূদ্ধে আইনানুগ কি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলা প্রশাসন।এমন প্রশ্নের জবাবে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক মো. আল-মামুন মিয়া বলেন, নীতিমালার আলোকে জেলা প্রশাসন ইটভাটার লাইসেন্স দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে পরিবেশ ছাড়পত্র থাকতে হবে। জেলা প্রশাসন থেকে পরিবেশ ছাড়পত্র বিহীন কোনো লাইসেন্স অনুমোদন করা হয় না। আমি নতুন এসেছি, তবে যাদের পরিবেশ চাড়পত্র নবায়ন নেই তাদের ভাটা চলবেনা,আর এসব বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান জেলার এই শীর্ষ।