বরেন্দ্রের রোদে-ঝলসানো এই গোদাগাড়ীর মাটিতে যেন ফলের বদলে জন্ম নেয় পরিশ্রমের রঙিন স্বপ্ন একসময় বরেন্দ্রর শুষ্কতা ছিল মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামের প্রতীক, আজ সেই একই জমি মানুষকে শিখিয়েছে স্বাবলম্বনের নতুন পাঠ। এ অঞ্চলের কৃষকেরা শুধু ফসল ফলান না তারা নিজেরাই তৈরি করেন জীবনের নতুন দিগন্ত। টমেটোর আঁচলে আজ বদলে গেছে গোদাগাড়ীর অর্থনীতি, বদলে গেছে একসময়ের দরিদ্র কৃষকের ভাগ্য। লাল টমেটো যেন তাদের হাতে রূপ নেয় লাল স্বপ্নে একটি স্বপ্ন যেখানে পরিশ্রমের ঘাম শুকায় না, যেখানে প্রতিটি বীজ হয়ে ওঠে সম্ভাবনার দরজা।
বারোমাসের সঙ্গী এই ফসল এখন গোদাগাড়ীর মানুষের কাছে শুধু কৃষিপণ্য নয় স্বাবলম্বনের প্রতীক, আস্থার অবলম্বন। কয়েক দশকের চাষাবাদ এখন দাঁড়িয়ে গেছে হাজার হাজার কৃষকের আর্থিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির শক্ত ভিত্তিতে। এই মাটি, এই মানুষ, আর তাদের এই লাল টমেটো সব মিলেই যেন গড়ে উঠেছে এক নীরব বিপ্লব, যে বিপ্লবকে প্রতিদিন নতুন করে আলোকিত করে গোদাগাড়ীর কৃষকেরা।
কেবল টমেটো চাষ করেই এবছর ২০০ কোটি টাকা আয় হবে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কৃষকদের। জেলায় যে পরিমাণ টমেটো চাষ হয়, তার মধ্যে অন্তত ৮০ ভাগই উৎপাদন হচ্ছে জেলার বরেন্দ্রের মাটি গোদাগাড়ীতে। এমনকি সারাদেশে যে পরিমাণ টমেটো চাষ হয়, তার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ চাষ হয় গোদাগাড়ীতে। রাজশাহীর পদ্মার চরেও বিপুল পরিমাণ টমেটো চাষ হয়।
এবারও জেলায় প্রায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গোদাগাড়ীতেই হচ্ছে ২ হাজার ৭১০হেক্টর জমিতে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গোদাগাড়ীতে টমেটোর আবাদ হয় ২৬৫০ হেক্টর জমিতে। সেখানে উৎপাদন হয় ৫৮ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে আবাদ ২১৫০ হেক্টর, উৎপাদন ৪৯ হাজার ৫২৫ টন; ২০২০-২১ অর্থবছরে আবাদ ২৪৬০ হেক্টর, উৎপাদন ৫৯ হাজার ৪০ টন; ২০২১-২২ অর্থবছরে আবাদ ২৮৫০ হেক্টর, উৎপাদন ৭১ হাজার ২৫০ টন; ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ ৩০১৫ হেক্টর, উৎপাদন ৮৭ হাজার ৪৩৫ টন; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবাদ ২২৪৫ হেক্টর; উৎপাদন ৬৫ হাজার ১০৫ টন এবং সবশেষ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে টমেটোর আবাদ হয়েছে ২৬৭০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে ৭৪ হাজার ৭৬০ টন টমেটো উৎপাদন হয়। এ বছর প্রায় সাড়ে হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। এখান থেকে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার টন টমেটো উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এসব টমেটো চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আট থেকে নয় হাজার কৃষক। এছাড়াও শ্রমিক প্রয়োজন হয় ২৫-৩০ হাজার। বা তার চেয়েও বেশি।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ জানান, দেশে যে পরিমাণ টমেটো উৎপাদন হয়, তার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ উৎপাদন হয় গোদাগাড়ীতে। এ বছর টমেটোর উৎপাদন ভালো হয়েছে। কৃষকের দামও ভালো পাচ্ছেন। আশা করছি অন্তত ২০০ কোটি টাকার বাজার হবে এবার টমেটোর।
গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি এলাকার টমেটো চাষী আব্দুস সোবহান জানান, তিনি বিপুল প্লাস জাতের টমেটোর চারা জমিতে রোপন করেছিলেন। এরই মধ্যে গাছে টমেটো এসেছে। আর কিছুদিন পর বাজারজাত করা যাবে। প্রতি বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রথম দিকে দাম ভালো থাকায় বিঘাপ্রতি অন্তত ৫০-৭০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি হবে। কিন্তু দাম আস্তে আস্তে কমতে থাকে। বিঘাপ্রতি ৬০-৭০ মণ টমেটো উৎপান হয়।
আরে টমেটো চাষী আকবর আলী বলেন, টমেটো চাষের প্রথম দিকে ভালোই দাম পাওয়া যায়। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা পুরো জমির টমেটো কিনে নেয়। দুই-তিন মাসের মধ্যে টমেটো নিয়ে জমি ছেড়ে দেন। তবে বেশির ভাগ চাষী নিজেরাই টমেটো বাজারজাত করেন। টমেটো ঘিরে গোদাগাড়ীর মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠে ছোট ছোট বাজার।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে , গত বছর গোদাগাড়ীতেই প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার টমেটো বিক্রি হয়েছে। এছাড়া পরিবহন ও শ্রমিক মিলে আরো ২৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়। টমেটো কেনা-বেচাকে কেন্দ্র করে সবমিলে প্রায় ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হয় প্রতি বছর।’
টমেটো উৎপাদন মৌসুম সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (চার মাস) ধরা হয়। এই অঞ্চলে টমেটো দু’বারে চাষ হয়। এর মধ্যে একটি রবি মৌসুমের আগে ওঠে। এই টমেটোর বেশি দাম পান চাষীরা। যা বাজারে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। আরেকটি বাজারে আসে রবি মৌসুমে। এ মৌসুমের টমেটো বিক্রি হয় ৫০ টাকা বা সর্বনিম্ন ৫ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে। কখনো কখনো তার চেয়েও দাম কমে যায়।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নাসির উদ্দিন জানান, ৩৬ জাতের টমেটো চাষ হয় রাজশাহীতে। জেলায় সবচেয়ে বেশি গোদাগাড়ীতে টমেটো চাষ হয়। আগাম ওঠায় চাষিরা বাজারে ভালো দাম পান। চাহিদা বাড়ায় প্রতি বছরই চাষের পরিধি বাড়ছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
বরেন্দ্রের রোদে-ঝলসানো এই গোদাগাড়ীর মাটিতে যেন ফলের বদলে জন্ম নেয় পরিশ্রমের রঙিন স্বপ্ন একসময় বরেন্দ্রর শুষ্কতা ছিল মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামের প্রতীক, আজ সেই একই জমি মানুষকে শিখিয়েছে স্বাবলম্বনের নতুন পাঠ। এ অঞ্চলের কৃষকেরা শুধু ফসল ফলান না তারা নিজেরাই তৈরি করেন জীবনের নতুন দিগন্ত। টমেটোর আঁচলে আজ বদলে গেছে গোদাগাড়ীর অর্থনীতি, বদলে গেছে একসময়ের দরিদ্র কৃষকের ভাগ্য। লাল টমেটো যেন তাদের হাতে রূপ নেয় লাল স্বপ্নে একটি স্বপ্ন যেখানে পরিশ্রমের ঘাম শুকায় না, যেখানে প্রতিটি বীজ হয়ে ওঠে সম্ভাবনার দরজা।
বারোমাসের সঙ্গী এই ফসল এখন গোদাগাড়ীর মানুষের কাছে শুধু কৃষিপণ্য নয় স্বাবলম্বনের প্রতীক, আস্থার অবলম্বন। কয়েক দশকের চাষাবাদ এখন দাঁড়িয়ে গেছে হাজার হাজার কৃষকের আর্থিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির শক্ত ভিত্তিতে। এই মাটি, এই মানুষ, আর তাদের এই লাল টমেটো সব মিলেই যেন গড়ে উঠেছে এক নীরব বিপ্লব, যে বিপ্লবকে প্রতিদিন নতুন করে আলোকিত করে গোদাগাড়ীর কৃষকেরা।
কেবল টমেটো চাষ করেই এবছর ২০০ কোটি টাকা আয় হবে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কৃষকদের। জেলায় যে পরিমাণ টমেটো চাষ হয়, তার মধ্যে অন্তত ৮০ ভাগই উৎপাদন হচ্ছে জেলার বরেন্দ্রের মাটি গোদাগাড়ীতে। এমনকি সারাদেশে যে পরিমাণ টমেটো চাষ হয়, তার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ চাষ হয় গোদাগাড়ীতে। রাজশাহীর পদ্মার চরেও বিপুল পরিমাণ টমেটো চাষ হয়।
এবারও জেলায় প্রায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গোদাগাড়ীতেই হচ্ছে ২ হাজার ৭১০হেক্টর জমিতে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গোদাগাড়ীতে টমেটোর আবাদ হয় ২৬৫০ হেক্টর জমিতে। সেখানে উৎপাদন হয় ৫৮ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে আবাদ ২১৫০ হেক্টর, উৎপাদন ৪৯ হাজার ৫২৫ টন; ২০২০-২১ অর্থবছরে আবাদ ২৪৬০ হেক্টর, উৎপাদন ৫৯ হাজার ৪০ টন; ২০২১-২২ অর্থবছরে আবাদ ২৮৫০ হেক্টর, উৎপাদন ৭১ হাজার ২৫০ টন; ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ ৩০১৫ হেক্টর, উৎপাদন ৮৭ হাজার ৪৩৫ টন; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবাদ ২২৪৫ হেক্টর; উৎপাদন ৬৫ হাজার ১০৫ টন এবং সবশেষ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে টমেটোর আবাদ হয়েছে ২৬৭০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে ৭৪ হাজার ৭৬০ টন টমেটো উৎপাদন হয়। এ বছর প্রায় সাড়ে হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। এখান থেকে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার টন টমেটো উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এসব টমেটো চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আট থেকে নয় হাজার কৃষক। এছাড়াও শ্রমিক প্রয়োজন হয় ২৫-৩০ হাজার। বা তার চেয়েও বেশি।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ জানান, দেশে যে পরিমাণ টমেটো উৎপাদন হয়, তার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ উৎপাদন হয় গোদাগাড়ীতে। এ বছর টমেটোর উৎপাদন ভালো হয়েছে। কৃষকের দামও ভালো পাচ্ছেন। আশা করছি অন্তত ২০০ কোটি টাকার বাজার হবে এবার টমেটোর।
গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি এলাকার টমেটো চাষী আব্দুস সোবহান জানান, তিনি বিপুল প্লাস জাতের টমেটোর চারা জমিতে রোপন করেছিলেন। এরই মধ্যে গাছে টমেটো এসেছে। আর কিছুদিন পর বাজারজাত করা যাবে। প্রতি বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রথম দিকে দাম ভালো থাকায় বিঘাপ্রতি অন্তত ৫০-৭০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি হবে। কিন্তু দাম আস্তে আস্তে কমতে থাকে। বিঘাপ্রতি ৬০-৭০ মণ টমেটো উৎপান হয়।
আরে টমেটো চাষী আকবর আলী বলেন, টমেটো চাষের প্রথম দিকে ভালোই দাম পাওয়া যায়। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা পুরো জমির টমেটো কিনে নেয়। দুই-তিন মাসের মধ্যে টমেটো নিয়ে জমি ছেড়ে দেন। তবে বেশির ভাগ চাষী নিজেরাই টমেটো বাজারজাত করেন। টমেটো ঘিরে গোদাগাড়ীর মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠে ছোট ছোট বাজার।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে , গত বছর গোদাগাড়ীতেই প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার টমেটো বিক্রি হয়েছে। এছাড়া পরিবহন ও শ্রমিক মিলে আরো ২৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়। টমেটো কেনা-বেচাকে কেন্দ্র করে সবমিলে প্রায় ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হয় প্রতি বছর।’
টমেটো উৎপাদন মৌসুম সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (চার মাস) ধরা হয়। এই অঞ্চলে টমেটো দু’বারে চাষ হয়। এর মধ্যে একটি রবি মৌসুমের আগে ওঠে। এই টমেটোর বেশি দাম পান চাষীরা। যা বাজারে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। আরেকটি বাজারে আসে রবি মৌসুমে। এ মৌসুমের টমেটো বিক্রি হয় ৫০ টাকা বা সর্বনিম্ন ৫ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে। কখনো কখনো তার চেয়েও দাম কমে যায়।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নাসির উদ্দিন জানান, ৩৬ জাতের টমেটো চাষ হয় রাজশাহীতে। জেলায় সবচেয়ে বেশি গোদাগাড়ীতে টমেটো চাষ হয়। আগাম ওঠায় চাষিরা বাজারে ভালো দাম পান। চাহিদা বাড়ায় প্রতি বছরই চাষের পরিধি বাড়ছে।