ঘিওর ( মানিকগঞ্জ) : খেজুর গাছ পরিচর্যা করছেন গাছি -সংবাদ
শীতের শুরুতেই প্রতি বছরের মত এবারও মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার গাছিরা আগাম খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। শীত শুরু হবার সাথে সাথেই খেজুর গাছ কাটার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে গাছিদের মধ্যে। হালকা কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় চলছে শীতের আমেজ।
রস আহরণের জন্য গাছিরা এখন থেকেই গাছের অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ঝেড়ে পেলার পরে গাছের বুক চিড়ে সাদা ছাল বের করার কাজ ইতোমধ্যে সেরে ফেলা হয়েছে। মানিকগঞ্জে প্রায় তিন হাজার মানুষ রস সংগ্রহে জড়িত বলে জানা গেছে। বছর জুরে অযত্নে পরে থাকা খেজুর গাছগুলো পড়ে থাকলেও শীতকালে গাছের চাহিদা ও যতœ বেড়ে যায়। কারন,গাছ থেকে আহরিত হয় সুমধুর রস। রস জাল করে পাটালিগুর, ঝোলাগুর, দানাগুরসহ বিভিন্ন ধরনের গুড় তৈরি করে দেশ বিদেশে বিক্রিয় করা হয়ে থাকে। খেজুর রসের তৈরি পাটালি গুরের ঘ্রাণ এলাকা মৈমৈ করে। তবে যত বেশি ঠান্ডা পরবে তত বেশি খেজুরের রস উৎপাদন হবে। পুরো মৌসুম চলবে রস আহরণ। গাছিরা রস আহরণ করে বাড়িতে জাল দিয়ে গুড় তৈরি করে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে থাকেন। আর কয়েক দিন পরে নতুন গুড়ের মিষ্টি গন্ধে ধীরে ধীরে আমোদিত হয়ে উঠবে গ্রাম-বাংলা। গ্রামীণ জীবনে প্রত্যহিক উৎসব শুরু হয় খেজুরের মিষ্টি রস ও গুড়কে ঘিরে। পুরো শীত মৌসুমে চলে সুস্বাধে ভরা বিভিন্ন ধরনের পিঠা যার ঘ্রাণে ম-ম করে পুরো এলাকার আকাশ বাতাস । তবে সবে মাত্র শুরু হয়েছে রস সংগ্রহের কাজ।
রস জাল দেবার পরে গুড় তৈরি করে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি খাটি গুর ৭শ’৫০ টাকা থেকে ৮’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়ে থাকে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা হাজারী গুড় সারা দেশের নাম করা। ঝিটকা হাজারীগুর দেশ বিদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। প্রতি কেজি হাজারী গুড় ২২শ’ টাকা থেকে ২৫’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়া দৌলতপুর, সাটুরিয়া, সিংগাইরে প্রচুর পরিমানে খেজুর গুর তৈরি হয়। তবে এ সময়ে এক শ্রেণির অসাধু গুড় ব্যবসায়ীরা চিনি, রং এবং মোকামি গুর দিয়ে কৃত্তিম উপায়ে বিভিন্ন উপকরনের সাহায়্যে খেজুর গুর তৈরি করে বিক্রি করে হাট বাজারে বিক্রি করেন। প্রতি বছর শীত মৌসুমে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ীরা জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে নকল খেজুরের গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন। তবে উপজেলার হাট বাজারগুলোতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নকল খেজুর গুড় তৈরিকারীদের বিরুদ্ধে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি গ্রামের পরিদ মিয়া বলেন, শীত মৌসুমে শহর থেকে আমার ভাগনে ও ভাগ্নি রস ও গুড়ের পিঠা খেতে আমাদের বাড়িতে আসে। শীতের সকালে রৌদ্রে বসে খেজুরের রস আর মুড়ি খেতে অনেক মজা লাগে। এ ছাড়া খেজেুরের গুড় দিয়ে ভাপা, পাটিসাপটাসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা খেতে খুবই মজা লাগে। কিন্তু খেজুর গাছ কমে যাবার কারনে চিরচেনা সেই সাধ ও গন্ধ থেকে আমরা হারিয়ে যাচ্ছি।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (খামার বাড়ি) শাহজাহান সিরাজ জানান, সারাদেশের মতো মানিকগঞ্জে প্রচুর পরিমানে খেজুর গাছ রোপণ করা দরকার। তাহলে শীত মৌসুমে রস পাওয়া যাবে। আমাদের বাড়ির আঙ্গীনায় খেজুর গাছ রোপন করা প্রয়োজন। খেজুরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমাদের সবাই এগিয়ে আসতে হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ঘিওর ( মানিকগঞ্জ) : খেজুর গাছ পরিচর্যা করছেন গাছি -সংবাদ
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
শীতের শুরুতেই প্রতি বছরের মত এবারও মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার গাছিরা আগাম খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। শীত শুরু হবার সাথে সাথেই খেজুর গাছ কাটার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে গাছিদের মধ্যে। হালকা কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় চলছে শীতের আমেজ।
রস আহরণের জন্য গাছিরা এখন থেকেই গাছের অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ঝেড়ে পেলার পরে গাছের বুক চিড়ে সাদা ছাল বের করার কাজ ইতোমধ্যে সেরে ফেলা হয়েছে। মানিকগঞ্জে প্রায় তিন হাজার মানুষ রস সংগ্রহে জড়িত বলে জানা গেছে। বছর জুরে অযত্নে পরে থাকা খেজুর গাছগুলো পড়ে থাকলেও শীতকালে গাছের চাহিদা ও যতœ বেড়ে যায়। কারন,গাছ থেকে আহরিত হয় সুমধুর রস। রস জাল করে পাটালিগুর, ঝোলাগুর, দানাগুরসহ বিভিন্ন ধরনের গুড় তৈরি করে দেশ বিদেশে বিক্রিয় করা হয়ে থাকে। খেজুর রসের তৈরি পাটালি গুরের ঘ্রাণ এলাকা মৈমৈ করে। তবে যত বেশি ঠান্ডা পরবে তত বেশি খেজুরের রস উৎপাদন হবে। পুরো মৌসুম চলবে রস আহরণ। গাছিরা রস আহরণ করে বাড়িতে জাল দিয়ে গুড় তৈরি করে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে থাকেন। আর কয়েক দিন পরে নতুন গুড়ের মিষ্টি গন্ধে ধীরে ধীরে আমোদিত হয়ে উঠবে গ্রাম-বাংলা। গ্রামীণ জীবনে প্রত্যহিক উৎসব শুরু হয় খেজুরের মিষ্টি রস ও গুড়কে ঘিরে। পুরো শীত মৌসুমে চলে সুস্বাধে ভরা বিভিন্ন ধরনের পিঠা যার ঘ্রাণে ম-ম করে পুরো এলাকার আকাশ বাতাস । তবে সবে মাত্র শুরু হয়েছে রস সংগ্রহের কাজ।
রস জাল দেবার পরে গুড় তৈরি করে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি খাটি গুর ৭শ’৫০ টাকা থেকে ৮’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়ে থাকে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা হাজারী গুড় সারা দেশের নাম করা। ঝিটকা হাজারীগুর দেশ বিদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। প্রতি কেজি হাজারী গুড় ২২শ’ টাকা থেকে ২৫’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়া দৌলতপুর, সাটুরিয়া, সিংগাইরে প্রচুর পরিমানে খেজুর গুর তৈরি হয়। তবে এ সময়ে এক শ্রেণির অসাধু গুড় ব্যবসায়ীরা চিনি, রং এবং মোকামি গুর দিয়ে কৃত্তিম উপায়ে বিভিন্ন উপকরনের সাহায়্যে খেজুর গুর তৈরি করে বিক্রি করে হাট বাজারে বিক্রি করেন। প্রতি বছর শীত মৌসুমে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ীরা জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে নকল খেজুরের গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন। তবে উপজেলার হাট বাজারগুলোতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নকল খেজুর গুড় তৈরিকারীদের বিরুদ্ধে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি গ্রামের পরিদ মিয়া বলেন, শীত মৌসুমে শহর থেকে আমার ভাগনে ও ভাগ্নি রস ও গুড়ের পিঠা খেতে আমাদের বাড়িতে আসে। শীতের সকালে রৌদ্রে বসে খেজুরের রস আর মুড়ি খেতে অনেক মজা লাগে। এ ছাড়া খেজেুরের গুড় দিয়ে ভাপা, পাটিসাপটাসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা খেতে খুবই মজা লাগে। কিন্তু খেজুর গাছ কমে যাবার কারনে চিরচেনা সেই সাধ ও গন্ধ থেকে আমরা হারিয়ে যাচ্ছি।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (খামার বাড়ি) শাহজাহান সিরাজ জানান, সারাদেশের মতো মানিকগঞ্জে প্রচুর পরিমানে খেজুর গাছ রোপণ করা দরকার। তাহলে শীত মৌসুমে রস পাওয়া যাবে। আমাদের বাড়ির আঙ্গীনায় খেজুর গাছ রোপন করা প্রয়োজন। খেজুরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমাদের সবাই এগিয়ে আসতে হবে।