বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় রোপা আমন ধান কাটা-মাড়াই গত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি শুরু হয়েছে। মাঠে এখন মৌসুমি শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্য। তবে ধানের আশানুরূপ দাম না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ৭৫ শতাংশ ধান ইতিমধ্যে কাটা হয়েছে। সরকার-নির্ধারিত ধানের প্রতি কেজি ৩৪ টাকা দরে প্রতি মণের দাম ১ হাজার ৩৬০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে বাজারদর সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম। শেরপুরের বিভিন্ন হাটে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। কম দামের কারণে অনেক কৃষক উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন ধানের অতিরিক্ত জোগান ও ভারত থেকে চাল আমদানির খবরে বাজারে ধস নেমেছে।
বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, ব্রি-৫ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, স্বর্ণা ৫ ধান ১ হাজার ১২০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় এবং ব্রি ৪৯ ধান ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩২০ টাকায়। নতুন কাটারি ধান ১ হাজার ৫৫০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায়, পুরোনো কাটারি ১ হাজার ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৮২০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। কৃষকেরা বলছেন, সার, বালাইনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় অনেকে ঋণ করে চাষ করেছেন। সেই ঋণের চাপে বাধ্য হয়ে আগেভাগে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। ভাটরা গ্রামের কৃষক সোনা মিয়া বলেন, ‘সার-বালাইনাশক আর মজুরি সবকিছুর দামই বেড়েছে। ঝড়-বৃষ্টিতে ধান নষ্টও হয়েছে। বিঘায় ১৪ মণ ধান পেয়েছি, এতে খরচই উঠছে না। এ দরে বিক্রি করলে লোকসান হবেই।’কৃষক জুলফিকার আলী জানান, এক সপ্তাহ আগেও স্বর্ণা ৫ ধান ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন পাইকাররা ১ হাজার ১০০ টাকার বেশি দিতে চাচ্ছেন না। অনেক কৃষক বলছেন, শেষের দিকের ঝড়-বৃষ্টিতে ফলনে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। স্বর্ণা ৫ ধানের যেখানে বিঘায় ২০ মণ ফলন প্রত্যাশিত, সেখানে অনেকের জমিতে মিলছে মাত্র ১৩/১৪ মণ। খরচ হচ্ছে ১হাজার ১১২ টাকা।বাজারে চালের দর কমে যাওয়ার পেছনে ভারত থেকে শুল্কমুক্ত এক লাখ টন চাল আমদানির ঘোষণাকে দায়ী করছেন পাইকাররা। তাঁদের দাবি, আমদানির খবরে চালের দাম কমেছে।
শেরপুর হাটে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, বিদেশ থেকে চাল আমদানির খবর ছড়ানোর পর থেকে পাইকাররা দাম কমিয়ে দিয়েছেন। ধান নিয়ে হাটে এলেও ঠিকমতো দাম পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল হান্নান শেখ জানান, শেরপুর উপজেলায় এ মৌসুমে সরকারি ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২৪০ টন এবং চাল ৮ হাজার ৮৮০ টন। তিনি বলেন, প্রতি কেজি ধান ৩৪ টাকা ও চাল ৫০ টাকায় সংগ্রহ করা হবে। কৃষকেরা অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করেছেন, তালিকা অনুযায়ী সরাসরি তাঁদের কাছ থেকে ধান নেওয়া হবে। বাজারদর কম থাকায় সরকারি সংগ্রহ কার্যক্রম কৃষকদের কিছুটা স্বস্তি দেবে।