টাঙ্গাইল ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরকারি সব সুবিধা গ্রহণ করলেও কতিপয় কর্মচারী, নার্স ও দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে প্রতিনিয়তই হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগীসহ তাদের স্বজনরা।
এছাড়া হাসপাতালের কর্মচারী ও নার্সদের বিরুদ্ধে রয়েছে দায়সারা দায়িত্ব পালন আর রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ। এতে দিন দিন এ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান ভেঙ্গে পড়ছে। খাবারও নিম্নমানের রোগীদের জন্য তিন বেলা যে খাবার বরাদ্দ দেওয়া আছে সেখানে সকালের নাস্তা ৯ টার মধ্যে দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা দেওয়া হয়, বেলা ১১টায় দুপুরে খাবার ৩-৪টা রাতের খাবার ৭-৮টা। তিন বেলার খাবার প্রতিটা রোগীর বেডে পৌঁছে দেওয়া নিয়ম থাকলেও খাবারের বিতরণের সময় প্রতিটি তলার মাঝা মাঝি দাঁড়িয়ে রোগীদের ডাকেন খাবার নিয়ে যান এসময় কেউ জানেন আবার কেউ জানেনা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তখন বলেন, রান্নাতো আমাদের এখানে হয় না, সদর হাসপাতাল থেকে রান্না করে আনার কারণে সঠিক সময়ে খাবার দিতে পারি না। হাসপাতালটির চলাচলের সুবিধার জন্য লিফট স্থাপনা করা হলেও বেশি ভাগই অচল। মেডিকেল কলেজের ১৪টি আবাসিক ভবনে গত দুই বছর যাবত বরাদ্দ ছাড়াই ফ্রি সুবিধা।
এদিকে যখন রোগী ভর্তি হয় তখন থেকে ছুটি পর্যন্ত যত ওষুধ লাগে সবই কিনে নিতে হয়। শুধু তাই নয়, যে কোন অপারেশন সহ ডেলিভারি হওয়া রোগীদের অপারেশন রুম থেকে বেড পর্যন্ত যে আয়া নিয়ে যান তাকে দিতে হয় ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। আর এসব অনিয়ম করে চলেছেন হাসপাতালের কতিপয় নার্স ও আয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক সিনিয়র নার্স জানান, হাসপাতালে ৫০০ জন রোগীর জন্য যে ওষুধ প্রয়োজন সরকার তা সবই দিয়ে থাকে। যে পরিমাণ ওষুধ হাসপাতালে সরকার দেয়, তাতে আর বাইরে থেকে রোগীদের ঔষধ কিনতে হয় না। এখানে হাসপাতালের কিছু লোক ঔষধ নিজের মতো করে সরিয়ে ফেলে যার কারণে হাসপাতালের এঅবস্থা।
কালিহাতী উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের বানিয়াফৈর গ্রামের লাইলা জানান, জরায়ু অপারেশনের জন্য আমি ২১ দিন যাবত ভর্তি আছি। আমার কোনো মানুষ না থাকাতে এতদিন হাসপাতালে ভর্তি আছি, কবে অপারেশন হবে তাও জানিনা।
নাগরপুর উপজেলার শ্রী বরদিয়া থেকে আসা আব্দুল লতিফ (৬০) জানান, নাপা প্যারাসিটামল ও শরীরে পুশ করার স্যালাইন ছাড়া কোন ওষুধ দেয়নি হাসপাতাল থেকে। বাকি সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪টি আবাসিক ভবনে প্রায় ৪০/৫০ জন কর্মকর্তা / কর্মচারী গত দুই বছর যাবত বরাদ্দ ছাড়াই পরিচালকের সিন্ডিকেটে ফ্রি সুবিধা ভোগ করছেন তারা। গত দুই বছরে আনুমানিক ৪০ লক্ষ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তবে অডিট পাটির চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য গত মে মাসে কর্মকর্তা / কর্মচারীদের মধ্যে বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ অডিট টিম এসেছিল গত ১০ অক্টোবরে। তাতে অধিকাংশ কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের ভিতরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে দুই বছর যাবত বাসা ভাড়া কর্তন করা হয় নাই।
সরজমিনে দেখা মিলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবন নির্মাণের সময়ে রান্নার জন্য কিচেন রুম তৈরি করা আছে ভবনটির দক্ষিণ পশ্চিম কনারে সেখানে গত চার বছর যাবত আনসারদের বাসস্থান। প্রতিটি ফ্লোর এবং ওয়াশরুম নোংরা, অপরিষ্কার, ময়লা ফেলার যে পাইপটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি ২০ ইঞ্চি দেওয়ার কথা থাকলেও ব্যবহার করা হয়েছে ১০ ইঞ্চি। ভবনের প্রশ্চিম ও পূর্ব পাশের ওয়াল বেয়ে সবসময় ময়লা পানি নিচে নামাতে ওয়াল অনেকটাই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ঠিকমত ফ্লোর মুছা ও অপরিষ্কারও করা হয়না। রোগীদের সাথে নার্সদের অসৌজন্যমূলক আচরণ। মেডিকেলের কোনো ওয়াডে নেই জর মাপার থার্মোমিটার। প্রতিটি ফ্লোরেই ড্রেসিংরুম থাকা সত্যেও অন্য অন্য রোগীদের সামনে লাগানো বা খোলা হয় কেনেলা। খাবারের মধ্যে যেই পরিমাণ মাছ মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও তার মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ দেওয়া হচ্ছে। কোন অপারেশনের রোগী সিটে দিতে গেলে আয়াকে ট্রলির জন্য দিতে হয়, দুই শত থেকে ৫শত টাকা। রোগীদের চলাচলের জন্য ১২টি লিফট স্থাপনা করা হলেও সেখানে ৩-৪ টি লিফট ব্যবহার হচ্ছে বাকিগুলো অচল থাকার কারণে রোগীদের আধা ঘণ্টা বা এক ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে সিড়ি দিয়ে ফাস্ট ফ্লোর থেকে ১১ তলা পর্যন্ত উঠা নামা করতে হয়। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি লিফটে একজন করে লিফট ম্যান দেওয়া আছে তাদের কে নিয়ে বিভিন্ন ডাক্তারদের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এজন্যই বেশির ভাগ লিফটের অচল অবস্থা।
এসব বিষয়ে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আব্দুল কদ্দুস জানান, আমি সকল বিষয়ে অবগত আছি। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ডিজির কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনেক ঔষধ সাপ্লাই চলমান রয়েছে তবে নিম্নমানের ঔষধের কারণে হয়তো অপারেশনের জন্য বাহির থেকে ঔষধ ক্রয় করতে হইছে। হিসাবরক্ষক মো. মজনুর মামলার বিষয়টা এসপির সাথে কথা বলে শেষ করার চেষ্টা করছেন তিনি।