আজ মোহনগঞ্জ মুক্ত দিবস
আজ মোহনগঞ্জ মুক্ত দিবস
আজ ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবস, ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকহানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিল চাঁদপুর জেলা লাকসাম ও মুদাফ্ফরগঞ্জ মুক্ত হবার পর তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমা জেলায় সর্বশেষ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর।
মিত্রবাহিনী এবং মুক্তিযোদ্ধারা সড়কপথে হাজীগঞ্জ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর আসতে থাকলে হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়, ভারতের মাউন্টেন ব্রিগেড ও ইস্টার্ন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা যৌথ আক্রমণ চালান।
যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তান ৩৯ অস্থায়ী ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল রহিম খান পাকসেনাদের নিয়ে চাঁদপুর থেকে পলায়ন করেন, হাজীগঞ্জে ৩৬ ঘণ্টার এবং বড় স্টেশন এলাকায় তীব্র লড়াইয়ের পর ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত হয়। চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংকার মো. মুজিবুর রহমান জানান, চাঁদপুর থানার সম্মুখে বিএলএফ বাহিনীর প্রধান মরহুম রবিউল আউয়াল কিরণ প্রথম চাঁদপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জীবন কানাই চক্রবর্তী এর ভাষ্যমতেথ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল চাঁদপুরে দখলদার বাহিনী দুটি বিমান থেকে সেলিংয়ের মাধ্যমে প্রথম আক্রমণের সূচনা করে, ৮ এপ্রিল ১৯৭১ বিকেলে প্রায় ৮০০ পাকসেনার একটি বহর চাঁদপুর আসে, শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে,ওই দিন রাতেই চাঁদপুরে অবস্থানরত ২ নাম্বার সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্নভাবে পাকহানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালায়, হামলা দেখে পাকহানাদার বাহিনী এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে, এতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মক আহত হন,৯ এপ্রিল পাকবাহিনী ভোরে শহরে প্রবেশ করে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইসমাইল খান ভলান্টিয়ার (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ।
মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী মরহুম দেলোয়ার আহমেদের তথ্য অনুযায়ী, চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেড এলাকায় হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের মেরে মেঘনা নদীতে ফেলে দিত, এ সময় পাকসেনারা চাঁদপুরসহ আশপাশের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করে বড় স্টেশন এলাকায় মেঘনা নদীতে ফেলেছে।
জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সামনে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ, হাজীগঞ্জ নাছিরকোর্টেও ১১ জন শহীদের কবরসহ স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।
আজ সোমবার সকাল ১০ টায় অঙ্গীকার পাদদেশে চাঁদপুর মুক্ত দিবস উদযাপন করা হবে। গত ২ ডিসেম্বর চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. এরশাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত পত্রে এ তথ্য জানা যায়।
এতে বলা হয়, দিবসটির কর্মসূচিতে বীর শহিদদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি, বেলুন ফেস্টুন উড়িয়ে দিবসটির শুভ সূচনা ও শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে যথাসময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়।
আজ মোহনগঞ্জ মুক্ত দিবস
বাঙালির জাতীয় জীবনে মহান মুক্তিযুদ্ধ এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। ১৯৭১ সালে নয় মাসব্যাপি সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের আগে ক্রমে ক্রমে দেশের বিভিন্ন এলাকা হানাদার মুক্ত হয়। আজ ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ মুক্ত দিবস। এ দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের চতুর্মুখী আক্রমণে পাক হানাদাররা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়। হানাদার মুক্ত হয় মোহনগঞ্জ। বিজয় আনন্দে ফেটে পড়ে মোহনগঞ্জবাসী। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মোহনগঞ্জ উপজেলা কমাণ্ড প্রতি বছরের মতো এবারো মুক্ত দিবস উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ১১টায় আনন্দ শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা, দুপুর ১২টায় মিলাদ মাহফিল, সন্ধায় মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে আলোকসজ্জা। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আশরাফ উদ্দিন খান, আহবায়ক জেলা ইউনিট কমাণ্ড, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,নেত্রকোনা ও সাবেক সংসদ সদস্য, বিশেষ অতিথি হিসেবে শামছুল হক মাহবুব, যুগ্ম আহবায়ক, আব্দুল মান্নান, সদস্য সচিব, নেত্রকোনা জেলা ইউনিট কমা- উপস্থিত থাকবেন।