প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, পর্যটন নগরী ও চায়ের স্বর্গরাজ্য হিসেবে দেশবিদেশে পরিচিত শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের ফুলছড়া গারো লাইনে দিনব্যাপী উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো গারো জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রাচীন নবান্ন উৎসব—ওয়ানগালা। গত সকাল থেকেই এ উৎসবকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে জমে ওঠে এক বর্ণিল মিলনমেলা। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত গারো নারী-পুরুষদের জড়ো হওয়ায় প্যান্ডেল ভরে ওঠে নাচগান ও আনন্দোচ্ছ্বাসে। হারমোনিয়াম, গিটার ও স্থানীয় বাদ্যযন্ত্রের সুরে শিল্পীরা পরিবেশন করেন ওয়ানগালার গান। সেই সুরের তালে নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দে নেচে ওঠেন সবাই। নতুন শস্য সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে উৎসর্গের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়। গারো খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনা, নতুন ধান উৎসর্গ এবং ঐতিহ্যবাহী নাচগানের পরিবেশনায় রঙিন হয়ে ওঠে পুরো আয়োজনস্থল। ওয়ানগালা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অনুপ চিসিম সঞ্চালনায় ছিলেন গারো নকমা এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সামুয়েল যোসেফ হাজং। স্বাগত বক্তব্য দেন ফাদার শ্যামল জেমস গমেজ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মুজিবুর রহমান, প্রভাস সিংহ, নিলয় রশিদ ও ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া।
গারো সম্প্রদায়ের সদস্যরা জানান, ওয়ানা মানে দেবদেবীর দানের উপকরণ এবং ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ। ফসল ঘরে তোলার আগে শস্যদেবতা মিসি সালজংয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোই এই উৎসবের প্রধান তাৎপর্য। বর্তমানে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পর নতুন শস্য উৎসর্গ করা হয় যিশু খ্রিস্টের নামে। গারো নকমা এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সামুয়েল যোসেফ হাজং বলেন, ওয়ানগালা আমাদের সবচেয়ে প্রাচীন নবান্ন উৎসব। দেবতার নামে উৎসর্গ ছাড়া আমরা নতুন শস্য গ্রহণ করি না। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি ধরে রাখতে এই আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাচগান, উৎসর্গ ও মিলনমেলার মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হলেও, গারো সমাজের সংস্কৃতি ও স্মৃতিতে থেকে যায় ওয়ানগালার বর্ণিল আনন্দ।