চিরিরবন্দরে লাভের আশায় আগাম রসুন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকহারে রসুন চাষ করছে স্থানীয় কৃষকরা।
বাজারে রসুনের দাম ভালো থাকায় এমন আগ্রহ চাষিদের। অন্যান্য ফসলের তুলনায় রসুনে লাভও বেশি পাওয়া যায়। আবহাওয়া রসুন চাষের উপযোগী হওয়ার কারণে ফলনও বেশ ভালো হয়। তাই তো অধিক লাভের আশায় রসুন চাষে ঝুঁকছেন এ উপজেলার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যেই প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে আগাম রসুন লাগানো হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ১৫০ হেক্টর জমিতে রসুন লাগানো হবে। ৫ হাজার ২২৫ টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা আশা করা হচ্ছে ।
গত বছর উৎপাদিত রসুনের ভালো দাম পাওয়ায় এ বছরও অধিক মুনাফার আশায় কৃষকরা রসুন চাষে ঝুঁকছেন। সেচ ও সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় এবার উপজেলায় রসুনের ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে উপজেলার তেতুলিয়া, নসরতপুর, ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, কেউ কেউ রসুনের বীজ লাগাচ্ছে, কেউ কেউ জমি প্রস্তুত করছে। আবার কেউ কেউ রসুন চাষের জন্যে খড় সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে।
এছাড়াও পাড়ায় পাড়ায় দল বেঁধে রসুনের বীজ প্রস্তুত করতে কাজ করছেন বাড়ির মহিলা ও শিশুরা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভালো লাভের আশায় অনেকে জমি বর্গা নিয়ে রসুন চাষ করেছেন। গত দুই বছর আগে যেখানে রসুন প্রতি মণের দাম ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা ছিল সেখানে গত বছর সাড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এজন্যই গত বছরে ভালো দাম পাওয়ায় এ বছরও কৃষকরা ব্যাপক হারে এবং গত বছরের তুলনায় এ বছরও রসুনের ফলন বেশি হবে বলে আশা করেন তারা।
১১ নং তেতুলিয়া ইউনিয়নে বৈকন্ঠপুর গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম জানান, ৫ বিঘা জমিতে বারি রসুন ৪ চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে রসুন লাগাতে জমি তৈরি, বীজ, শ্রমিক, সার কীটনাশক,পরিচর্যা ও উত্তোলন করতে ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর রসুনের ফলন ভাল ও বাজারে দাম থাকলে লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। একই ইউনিয়নের বৈকন্ঠপুর গ্রামের রসুন চাষি, মোহাম্মদ নুর ইসলাম বলেন, এবার নিজস্ব বীজ দিয়ে তিন বিঘা জমিতে বারি রসুন চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় চারাগুলো লক লক করে বেড়ে উঠছে। নিজের বাড়িতে রাখা বীজ হওয়ায় বেশি লাভের আশা করছি। সার, সেচ ও পরিচর্যায় সামান্য খরচ হয়েছে।
ফলন ও বাজার দুটিই ভালো হলে পুরো ফসলটাই লাভ হবে বলে মনে করি ।
একজন নারী শ্রমিক জানান, বছরের অন্যান্য সময় তারা খুব একটা কাজ পান না। তবে রসুন চাষ শুরু হলে মাঠে মাঠে কাজের ধুম পড়ে। তখন কাজেরও অভাব হয় না। তবে তার অভিযোগ, পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় তারা কম পারিশ্রমিক পান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা শারমিন জানান, বর্তমানে উপজেলার কৃষকদের কাছে রসুন একটি অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল, এটি রান্নার স্বাদ, গন্ধ ও রুচি বৃদ্ধিতে অনেক বেশি ভূমিকা রাখে। পুষ্টিমূল্য ও ভেষজ গুণে ভরপুর এই রসুন। রসুনে রয়েছে আমিষ, প্রচুর ক্যালসিয়াম ও সামান্য ভিটামিন ‘সি’। রসুনের খরচ কম ও অধিক লাভ হওয়ায় বর্তমানে এই ফসলের ব্যাপক হারে চাষও করা হচ্ছে। রসুন চাষে কৃষককে উৎসাহিত ও সহযোগিতা করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। আশা করছি এবারও কৃষকরা রসুনের ভাল ফলন ও দাম পাবেন।