কুয়াশার চাদরে ঢাকা সকাল মাঠ ঘাট প্রান্তর গ্রাম শহড় অলি গলি প্রকৃতির রুপ বদলে চারপাশে লোকজন গায়ে গরম কাপড় জড়িয়ে শীত নিবারণের দৃশ্য বলে দিচ্ছে অগ্রাণের বিদায়ে পৌষের মৌসুমী শীতের আগমনী বার্তা। বিকেল হতেই ঘরে বাইরে হাট বাজার রাস্তাঘাটে সর্বত্রই ছোট বড় সকলকে গরম কাপড় পরিধান করে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ঋতু পরিবর্তনে চারিদিকে অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। ফুটপাতের দোকান গুলিতে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষদের সাধ্যমত পরিবারের সকলের গরম কাপড় কেনার ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। অপরদিকে বিছানায় শীত নিবারণে মধ্যবিত্ত স্বচ্ছল ও উচ্চ বিত্তরা ভীড় করছেন লেপ তোষকের দোকানে পছন্দসই মেট্রেস তৈরীতে।
বেঁচে থাকার জন্য ক্ষুধা নিবারণে খাবার যেমন অতি জরুরী তেমনি শীত নিবারণে মানুষের সামর্থানুসারে শীত বস্ত্র ও রাতে গরম বিছানায় ঘুমানোর জন্য লেপ তোষক কম্বল কাঁথা ইত্যাদি যোগার করাও অত্যাবশ্যক। শীত নিবারণে বামনের গাই বেচে কাঁথা কেনা আদি পুরুষদের প্রবাদটি এখনও লোক মুখে শোনা যায়। আসন্ন শীত নিবারণে গ্রাম গঞ্জের মানুষ ভীড় করতে শুরু করছেন ধুনকরদের দোকানে আর এ সময় লেপ-তোষকে সুঁই ফুটাতে কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। পূর্ব কাল হতেই শীতের ফসল আমন ধান ঘরে তোলে গৃহস্থ পরিবারের বিবাহযোগ্য ছেলে মেয়েদের বিয়ের আয়োজন করা গ্রামের মানুষের প্রথাগত লোকাচারের মধ্যে অন্যতম। বর কনে বিদায়ের সময় মেয়ের বাড়ী হতে লেপ-তোষক বালিশ সাথে না দিলে শশুর বাড়ীর লোকজনের খোটা শুনতে হয় নতুন বৌকে। তাছারা শুধু শীত কেন বিয়ের কনে বিদায়ের সময় নতুন লেপ তোশক সাথে দেয়া গ্রাম বাংলার অতি পুরানো রীতি রেওয়াজ হিসেবেই এখনও প্রচলিত। সরজমিন উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভালুকা পৌর বাজার রোড,পশ্চিম বাজার, থানার মোড় সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ছোটবড় হাট বাজার যেমন বিরুনীয়া বাজার, সিডস্টোর বাজার, ডাকাতিয়া ও আঙ্গারগাড়া বাজার, উথুরা ও চামিয়াদী বাজার, ধলিয়া ও শান্তিগঞ্জ বাজার, ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড বাজার, মল্লিকবাড়ী ও কাচিনা বাজারে লেপ-তোষক বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। দোকানের সামনে বড় মাদুর কিংবা চাটাই পেতে তার উপর মাপের কাপর বিছিয়ে প্রয়োজন মত তুলা দিয়ে শুরু হয় সুঁই ফুটিয়ে সেলাইয়ের কাজ। এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে তৈরী হয়ে যায় একটি লেপ কিংবা তোষক। এ ভাবে একটার পর একটা অর্ডার করা লেপ-তোষক তৈরী করে ক্রেতাদের সরবরাহ করেন ধুনকররা। অনেকে খরচ কমাতে পুড়ানো লেপ তোষকের তুলা ঝেড়ে নতুন কাপড় দিয়ে লেপ তোষক তৈরী করে নিচ্ছেন।
ভালুকা পৌর এলাকার শহীদ নাজিম উদ্দীন রোডে মোস্তফা শাহীন বেডিং হাউজের সত্বাধিকারী ধুনকর সফিকুল ইসলাম জানান, লেপ তোষক তৈরীর কাজ করছেন অনেক বছর ধরে। মৌসুম ছারা বছরের প্রায় প্রতি মাসেই ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন লেপ-তোষক বালিশ ইত্যাদি তৈরী করে। শীতের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে অনেকেই নতুন লেপ তোষকের অগ্রীম অর্ডার দিয়ে যায়। সারা বছরই টুকি টাকি লেপ-তোষক সেলাই করে থাকেন তবে শীত পরলে কাজের চাপ বেড়ে যায়।
লেপ কিনতে আশা ক্রেতা মনোহরপুর গ্রামের ইছমাইল হোসেন জানান, ৪ হাত ৫ হাত সাইজের একটি লেপ ভাল কাপড় দিয়ে তিনি ৩৫শ টাকায় তৈরী করেছেন । শীত শুরু হয়ে গেছে তাই লেপ তোষকের দোকানে ভীড় বেশি।