নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা লাইনম্যান নামক চাঁদাবাজদের দৌরাত্মে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিগত হাছিনা সরকার পতনের পর থেকে অল্প কিছুদিন চাঁদা আদায় বন্ধ থাকলেও আবার শুরু হয় লাইনম্যান নামক চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম। আগে উপজেলার যেকোনো প্রান্ত থেকে সিএনজি পৌর শহরে ঢুকা মাত্রই পৌর ট্যাক্সের নামে ১০ টাকা করে আদায় করা হতো। এখন তা আদায় হচ্ছে ১৫ টাকা হারে। এছাড়া লাইনম্যানেরা পৌর শহরে সিএনজি স্ট্যান্ডে গাড়ি অবস্থান করতে হলে ভর্তির নামে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। যে চালকেরা এ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি করে তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে চালকদের। তাছাড়াও এসব চাঁদাবাজরা পৌর শহরে বিভিন্ন নামেও যানবাহন শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সরকারের আমলে লাইনম্যান মো. সোলেমান ও মিলন পৌর ট্যাক্স হিসেবে ১০ টাকা লাইনম্যানদের খরচের নামে ১০ টাকা পুলিশের নামে প্রতি সিএনজি থেকে মাসিক ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করতো। গত বছরের ৫ আগস্টের পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এ চাঁদা আদায় বন্ধ করে দেয়। এরপর অল্প কিছুদিন চাঁদা আদায় বন্ধ থাকলেও আবার ঐ লাইনম্যান সোলেমান ও মিলনসহ অন্যান্যরা চাঁদা আদায়ে সক্রিয় হয়ে উঠে। তখন থেকে সিএনজি প্রতি পৌর ট্যাক্স ১০ টাকার স্থলে ১৫ টাকা, লাইনম্যানদের খরচের জন্য ১০ টাকা এবং সিএনজি স্ট্যান্ডে রাখতে হলে তাদেরকে ১ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। আগে পুলিশের নামে প্রতি সিএনজি থেকে মাসিক ১০০ টাকা নিলেও তা এখন বন্ধ রয়েছে। তবে শ্রমিক সংগঠনের নামধারী নেতারা গাড়ি রিকুজিশনের ভয় দেখিয়ে ৪০০/৫০০ টাকা করে আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। কেউ এ চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করলে তাদেরকে জনসম্মুখে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হয়।
শ্রমিক দল নেতা সিএনজি চালক আরিফ হোসেন জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক যানজট রোধে দশঘরিয়া থেকে আসা সিএনজি গুলো রাখার স্ট্যান্ড নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু এ স্ট্যান্ডে গাড়ি রাখতে হলে লাইনম্যানেরা ১ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে নিচ্ছে।
সিএনজি অটোরিক্সা চালক নুর নবী, সজিব হোসেন, মো. আজাদ, সোহাগসহ অনেকে জানান, এ চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে তারা গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের নিকট চাঁদাবাজি বন্ধের আবেদন করেন।
এই বিষয়ে ল্যাইনম্যান মো. সোলেমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তিনি এখন আর ল্যাইনম্যানের কাজ করেন না, শুধু থানাকে গাড়ি রিকুজিশনের কাজ করেন। ল্যাইনম্যান হিসেবে কাজ করেন মো. কামাল, নুর হোসেন, আলাউদ্দিন লক্ষ্মী, শাহ আলম।
এই বিষয়ে ল্যাইনম্যান শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি লাইনম্যান হিসেবে দশঘরিয়া বাজারে কাজ করি। চাটখিল পৌর শহরে গাড়ি ঢুকলেই বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে চাঁদা আদায় করে থাকে। সিএনজি চালকেরা আরো জানান, প্রতি মাসে সাধারণ চালকের গাড়ি থানা রিকুজিশনে পাঠানো হয়, এতে তাদের অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু কতিপয় শ্রমিক নেতাদের গাড়ি ৩/৪ মাসেও রিকুজিশনে পাঠায় না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, জনস্বার্থে পৌর শহরে যানজট নিরসনকল্পে এই সিএনজি স্ট্যান্ড করে দিয়েছেন। এখান থেকে কেউ অবৈধ চাঁদাবাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে তিনি যানবাহন শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন কেউ অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করতে গেলে তিনি তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলার পরামর্শ দেন।