image
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) : জমিতে আলুবীজ রোপণে ব্যস্ত শ্রমিকরা -সংবাদ

লৌহজংয়ে ঝুঁকি নিয়ে আলু রোপণে ব্যস্ত কৃষক

বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ)

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে শুরু হয়েছে আলু রোপণ মৌসুম। গত বছরের ভয়াবহ লোকসান কাটিয়ে এবারও ঝুঁকি নিয়েই মাঠে নেমেছেন কৃষকেরা। বর্ষার পানি দীর্ঘদিন জমে থাকা, সার ও বীজের সংকট, চড়া উৎপাদন ব্যয়—সব মিলিয়ে আশঙ্কার মধ্যেই শুরু হয়েছে আবাদ।

উপজেলা জুড়ে নালা-খাল দখল-ভরাটের কারণে বর্ষার পানি সময়মতো নামতে না পারায় চলতি মৌসুমেও দুই মাস পিছিয়ে গেছে রোপণ। এখনো অনেক জমিতেই পানি আটকে থাকায় সেচ দিয়ে জমি শুকানোর কাজ চলছে। এই অবস্থায় তুলনামূলক উঁচু জমিতে শুরু হয়েছে রোপণ। মাঠজুড়ে নারী-পুরুষ শ্রমিক, আলুকাটা, চাষ, সার প্রয়োগ ও পানি নিষ্কাশনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

গত বছরের লোকসান এখনো ভুলতে পারেননি কৃষকেরা। উৎপাদন ব্যয় কেজিপ্রতি ২৬ টাকা পড়লেও আলু বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র ৮ টাকায়। ফলে পুঁজির বড় অংশ হারিয়েছেন অনেকেই। তারপরও নতুন করে লাভের আশায় আবাদ করছেন তারা।

হাড়িদিয়া গ্রামের কৃষক কার্তিক দাস বলেন,

গত বছর বড় ধাক্কা খেয়েছি। এবার লোকসানের ভয় নিয়েই ১০ একর জমিতে আলু রোপণ করছি। খরচ অনেক বেড়েছে। প্রতি কানি জমিতে আলুবীজ, সার, জমি চাষ, সেচ, শ্রমিক সব মিলিয়ে খরচ পড়ছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। প্রতি কেজির উৎপাদন ব্যয় হবে প্রায় ১৬ টাকা।

কৃষক সিরাজ মীর জানান, গত মৌসুমে প্রায় ৫০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। নিচু জমিগুলোতে পানি থাকায় এবার আবাদ কমিয়ে দিয়েছি। রোপণের সময় প্রায় শেষ, জমিতে এখনো পানি।

একই কথা জানান কালুরগাঁও গ্রামের কৃষক জসীম শেখ। তার ভাষায়, সারের সংকট ভয়াবহ। ৯৫০ টাকার সার কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে গেছে।

এদিকে স্থানীয় কৃষকদের আর্থিক সংকটে জমির মালিকানা থাকলেও অনেকেই আবাদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। কেউ জমি বর্গা দিচ্ছেন, কেউ আবার লগ্নি খাটাচ্ছেন। ফলে চাষাবাদের কাজে নির্ভরতা বেড়েছে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা শ্রমিকদের ওপর। রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিনই শ্রমিক আসছেন আলুর মাঠে কাজ করতে। কৃষকেরা জানান, রোপণ থেকে উত্তোলন সব কাজেই দিনচুক্তিতে এসব শ্রমিকই ভরসা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ১শ’ ১৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে রোপণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী মার্চের মাঝামাঝি থেকে আলু উত্তোলন শুরু হবে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসান উদ দৌলা। তিনি বলেন, বর্ষার পানি দেরিতে নামায় কিছু জমিতে রোপণ পিছিয়ে গেছে। তবে সার্বিকভাবে আবাদ ভালোভাবে চলছে। কৃষকদের সহায়তায় মাঠপর্যায়ে আমাদের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

সম্প্রতি