image
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার সাক্ষি বধ্যভূমিগুলোর সংরক্ষণ নেই

বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন সময়ে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা মুক্তিকামী শত শত মানুষকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। অনেক এলাকায় সংখ্যালঘু হিন্দু ও মুক্তিকামী মানুষদেরকে প্রতারণার মাধ্যমে একত্রে জড়ো করে মেশিনগানের গুলি চালিয়ে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃসংশভাবে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে ওই মানুষ নামের পশুরা। স্বাধীনতা ৫৪ বছর পার হতে চললেও ভয়াবহ ও নির্মম ইতিহাসের সাক্ষি এই বধ্যভুমিগুলোর সঠিক সংরক্ষণ নেই। মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ স্বজন ও নতুন প্রজন্ম সকল বধ্যভুমিগুলোতে স্মৃতিসৌধ নিমার্ণ, প্রতিটি বধ্যভূমিতে শহীদদের নামের তালিকা লিপিবদ্ধ করা ও জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণের জোর দাবি জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা জানিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধাসহ সকলের সাথে সভা করে বধ্যভূমিগুলোকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কিশোরগঞ্জের কৃতি সন্তান শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাই শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের জন্মভূমি কিশোরগঞ্জে একাত্তরে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীর দোসর রাজাকার আলবদররা। হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা। এসব হত্যাযজ্ঞের মধ্যে ১৩ অক্টোবর বরইতলা গণহত্যা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। একাত্তরের ১৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ সদরে সৈয়দ নজরুলের গ্রামের বাড়ি যশোদল ইউনিয়নের বীরদামপাড়াসহ আশপাশের লোকজনকে স্থানীয় রাজাকাররা জড়ো করে পার্শ্ববর্তী বরইতলা এলাকায়। এরপর তাদেরকে মেশিনগান দিয়ে উপর্যুপরি গুলি চালিয়ে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ৩৬৫ জন মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে পাকিস্থানী সেনা ও তাদের দোসররা। সেখানে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলেও সঠিক সংরক্ষণ নেই।

পার্শ্ববর্তী কশাকড়িয়াইল ইউনিয়নের ধুলদিয়া রেল সেতুর পাশেই রয়েছে আরেকটি বধ্যভূমি। সেখানে কি পরিমাণ মুক্তিকামী মানুষকে পাকিস্থানী সেনারা হত্যা করে তাদের মরদেহ নরসুন্দা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা কেউ জানেনা। সেখানেও শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলেও শহীদদের নাম নেই। তাছাড়া সদরের শিদ্বেশরী এলাকায় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীপুরুষ ধরে এনে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার পর নরসুন্দা নদীতে তাদের মরদেহ ভাসিয়ে দেয়া হতো।

সদরের মহিনন্দ ইউনিয়নের শোলমারা এলাকায় শতশত মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে শোলমারা ব্রীজ থেকে খালের পানিতে মরদেহ ভাসিয়ে দিতো পাকিস্থানী সেনা ও তাদের দোসররা।

১৭ আগস্টে হোসেনপুরের এক গণহত্যা চালায় পাকিস্থানী সেনারা। ১৬ আগস্টে স্থানীয় রাজাকাররা সংখ্যালঘু হিন্দুদেরকে ভয়ভীতি ছাড়াই কীর্তন করা আহবান জানান। সারারাত কীর্তন শেষে ভোরে অন্তত ১২০ জন হিন্দু নারী-পুরুষ ও শিশুকে কুড়িঘাটে এনে একত্রে জড়ো করে। এদের মধ্যে কয়েকজন স্কুলছাত্রীকে থানায় নিয়ে যায় পাকিস্থানী বাহিনীর সদস্যরা। থানায় নিয়ে ওই ছাত্রীদেরকে পাশবিক নির্যাতন চালায়।

১ সেপ্টেম্বর মিঠামইনের ঘাঘড়া ইউনিয়নের ধোবাজোড়া গ্রামের ২০জন মুক্তিকামী মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল পাকিস্থানী সেনারা। সেখানে কোনো স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়নি।

কিশোরগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম জানু জানান, একাত্তরে পাকিস্থানী বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের বর্বরতার সাক্ষি বধ্যভূমিগুলোতে স্মৃতিসৌধ নিমার্ণ ও শহীদদের নাম সংরক্ষণের করতে হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা জানিয়েছেন, একাত্তরে নির্মমতার সাক্ষি বধ্যভূমিগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাসহ সকলের সাথে সভা করে বধ্যভূমিগুলোকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান।

সম্প্রতি