image
বিরামপুর (দিনাজপুর) : কাটা খড় বস্তায় ভরছেন শ্রমিকরা -সংবাদ

বিরামপুরে কাটা খড় বিক্রি করে স্বচ্ছলতার পথে সুসেন রায়

বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, বিরামপুর (দিনাজপুর)

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কলাবাগান এলাকার মৃত শ্যামল চন্দ্র রায়ের ছেলে শ্রী সুসেন চন্দ্র রায় একজন পরিশ্রমী, সংগ্রামী ও অদম্য মনোবলের অধিকারী মানুষ। ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর কারণে আর্থিক সংকটে বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে জীবিকার তাগিদে নেমে পড়েন সংগ্রামের মাঠে।

২০১৫ সালে স্বল্প পুঁজিতে শুরু করেছিলেন খড় ক্রয়-বিক্রয়ের ছোট্ট উদ্যোগ। কঠোর পরিশ্রম, সততা ও ধৈর্যকে পুঁজি করে সেই সামান্য উদ্যোগই আজ তাকে এনে দিয়েছে স্বচ্ছলতা এবং এলাকায় এক সফল উদ্যোক্তার মর্যাদা।

বর্তমানে সুসেন রায় দুটি অধুনিক মেশিনে প্রতিদিন খড় উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছেন। সপ্তাহে দুই দিন বিরামপুর থেকে ট্রাকভর্তি ৩০০ থেকে ৬০০ বস্তা কাটা খড় পাঠানো হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নাটোর, পাবনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রতিটি বস্তায় থাকে ২৫ কেজি উন্নতমানের কাটা খড়, যা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যায় সাশ্রয়ী পাইকারি দামে। গ্রাহক সুবিধার কথা ভেবে চালু করেছেন দেশব্যাপী ক্যাশ অন ডেলিভারি (ঈঙউ) ব্যবস্থা। শুধু ডেলিভারি চার্জ পাঠালেই দেশের যে কোনো জায়গায় পৌঁছে যায় গুণগতমানের কাটা খড়। যোগাযোগ

গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি ১০০টি খড়ের আটি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে সংগ্রহ করেন সুসেন। পরে মেশিনে কেটে বস্তাবন্দি করে তৈরি করেন উচ্চ মানের গো-খাদ্য। এই খড় পেয়ে এলাকার অসংখ্য খামারি গরু, ছাগল, হাঁস ও অন্যান্য গৃহপালিত পশু পালন আরও সহজে করতে পারছেন ফলে বাড়ছে তাদের আয় এবং উন্নত হচ্ছে জীবনমান। তিনি বলেন, আমি চাই এলাকার কেউ পশুখাদ্যের অভাবে পিছিয়ে না পড়ুক। আমার কাটা খড় থেকে যদি মানুষ উপকার পায় এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ। তার উদ্যোগে বর্তমানে ৬ জন শ্রমিক প্রতিদিন ৬০০ টাকা মজুরি পেয়ে নিয়মিত কাজ করছেন—যা স্থানীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।

আয়ের মানুষের কথা ভেবে ২৫ কেজির বস্তার দাম রাখা হয়েছে ন্যায্যমূল্যে। যারা কম পরিমাণ নিতে চান, তাদের জন্য প্রতি কেজি মাত্র ২০ টাকায় কাটা খড় বিক্রি করা হচ্ছে। গরুর পাশাপাশি ছাগল ও হাঁসের খাবার হিসেবেও এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শুরুতে সুসেন রায় প্রতিদিন খড় কেটে মাত্র ২০০ টাকা আয় করতেন। কখনও কখনও অভাবে না খেয়েও দিন কাটাতে হয়েছে তবুও থেমে যাননি। পরিশ্রম, ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাসই ছিল তার এগিয়ে চলার মূল শক্তি। আজ নিজের দুইটি মেশিন, ছয়জন শ্রমিক এবং নিয়মিত বাণিজ্যিক ডেলিভারির মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠেছেন এলাকার রোল মডেল। সামনে আরও পাঁচটি মেশিন স্থাপন করে ব্যবসাকে বৃহৎ পরিসরে সম্প্রসারণের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

সম্প্রতি