image
কুষ্টিয়া : বিজয় স্থম্ভ -সংবাদ

কুষ্টিয়া হানাদার মুক্ত দিবস আজ

বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
জেলা বার্তা পরিবেশক, কুষ্টিয়া

আজ ১১ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা কুষ্টিয়া জেলাকে শত্রুমুক্ত করেন। কুষ্টিয়া হয় পাক হানাদার মুক্ত, শীতের আমেজে লাল-সবুজের পতাকা উড়তে থাকে কুষ্টিয়ার ঘরে ঘরে বিভিন্ন ভবনে। বীর জনতা নেমে আসেন রাস্তায়। বাধভাঙ্গা আনন্দে মেতে উঠে বাঙালী। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের ৫ দিন আগেই কুষ্টিয়ার জনগণ অর্জন করেছিলো বিজয় নিশানা। একদিকে স্বজনের গলিত লাশ আর সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের আর্তনাদ সবকিছুকে ম্লাম করে সেদিন বিজয়ের আনন্দে মানুষ রাস্তায় নেমে উল্লাস করেছিল।

অত্যাধুনিক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হানাদার পাকসেনার বিরুদ্ধে সাহসী বাঙালি তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা অমিত তেজে অসীম সাহসিকতার সাথে ছোট-বড় ৪৪টি যুদ্ধ করে কুষ্টিয়ার পবিত্র মাটি পাক হানাদার সেনাদের হটিয়ে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষের গগণবিদারী ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে সেদিন কুষ্টিয়ার আকাশ-বাতাস মুখোরিত হয়ে উঠেছিল। পথে প্রান্তরে গড়ে তোলা হয়েছিল বেরিকেড। লাঠি-সড়কি, ঢাল-তলোয়ার নিয়ে বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ ছুটে এসেছিল কুষ্টিয়া শহরে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ যুদ্ধ পরিকল্পনা হিসেবে পাক সেনাবাহিনীর ২৭ বেলুচ রেজিমেন্টের এক কোম্পানী সৈন্য ২৫ মার্চ রাতে যশোর সেনানিবাস থেকে কুষ্টিয়া এসে অবস্থান গ্রহণ করে। মেজর আবু ওসমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কুষ্টিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দের সাথে আলাপ করে ক্যাপঃ আযম চৌধুরীকে যশোরে ঝিকর গাছায় প্রেরণ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য। স্বাধীনতা প্রিয় কুষ্টিয়ার মানুষ পাক বাহিনীর এ জাতীয় কার্যক্রম সেদিন মেনে নিতে পারেনি। সান্ধ্য আইন ভেঙ্গে তারা বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। যুদ্ধকালিন সময়ে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা ৮নং সেকটরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মেজর আবু ওসমান চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০ মার্চ ভোর ৪ টায় তিনদিক থেকে অতর্কিতভাবে কুষ্টিয়ায় আক্রমন শুরু হয়। স্থানীয় হাজার হাজার জনগণের গগণবিদারী ‘জয় বাংলা’ জয়ধ্বনিতে শক্র পক্ষের মনোবল মারাত্মক ভাবে ভেঙে পড়ে। মাত্র এক ঘন্টা তুমুল যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর দখলে থাকা কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন দখল করে নেয়। ৩১ মার্চ তুমূল যুদ্ধ চলে। পাকবাহিনী ২টি জীপ ও ১টি ডজ গাড়ি নিয়ে কুষ্টিয়া থেকে পালানোর সময় গাড়াগঞ্জের ব্রিজের গর্তে গাড়ি দুটো পড়ে গিয়ে মেজর শোয়েবসহ শক্র সেনারা মারা যায়। ১ এপ্রিল কুষ্টিয়া স¤পূর্ণ রূপে শক্রমুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে চলে যায়। এই যুদ্ধে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং অনেকে আহত হন। দীর্ঘ ১৭ দিন মুক্ত থাকার পর কুষ্টিয়া পুনরায় পাকবাহিনীর দখলে চলে যায়। এর পর পাকসেনারা শহরে প্রবেশ করেই অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা এবং ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে যায়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মরণ করতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ৯ মাস ধরে যখন থেমে থেমে যুদ্ধ হয়,তখন বাঙালী নিধন আর গনহত্যার উৎসবে মেতে উঠেছিল পাক বাহিনী। ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ কুষ্টিয়া শহরের কোহিনুর ভিলায় ১৬ জন শহীদ হন। এটি এ জেলার একটি পরিবারের উপর সংঘটিত সবচেয়ে বড় গনহত্যা। ১০ ডিসেম্বর সকালে কুষ্টিয়া শহরের দক্ষিণে চৌড়হাস জিকে ক্যানেলের ব্রীজের উত্তর পাশে মেইন রাস্তায় মুক্তিবাহিনী-মিত্র বাহিনী যৌথভাবে পাকিস্তানবাহিনীর সাথে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এখানেও মিত্র বাহিনীর ৭০ জন শহীদ হন।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি