image
ভালুকায় ফসলি জমির পাশে ইটভাটা -সংবাদ

ভালুকায় ফসলি জমিতে ইটভাটা, পুড়ছে কাঠ, হুমকিতে পরিবেশ

বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
আতাউর রহমান তরফদার, ভালুকা (ময়মনসিংহ)

ময়মনসিংহের ভালুকায় আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি পাকা রাস্তার ধারে ফসলী জমিতে গড়ে উঠা প্রায় ১৫টি লাইসেন্স বিহীন ইটভাটা নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করে চলেছে। ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। অন্যদিকে ভাটা হতে অনবরত নির্গত ধোঁয়া এলাকায় ছড়িয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ফল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসহ ছোট-বড় সবার সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও নানা রকম রোগ-ব্যাধির সৃষ্টি হয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এলাকার বনাঞ্চল হতে চোরাইভাবে কাঠ কেটে ট্রাকভরে দিন-রাত এসব ভাটায় নিয়ে পোড়ানোর ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। অন্যদিকে জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ার কারণে উর্বরতা শক্তি কমে যাওয়ায় ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে বলে স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ রয়েছে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুসারে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির অর্থাৎ জিগজ্যাগ ক্লিন, হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, বার্টিক্যাল শফট ক্লিন, টানেল ক্লিন বা অনুরূপ উন্নততর কোনো প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে, আবাসিক ও জনবসতি, সংরক্ষিত এলাকার বনভূমি ও জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা করা যাবে না এবং সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা হতে দুই কিলোমিটার দূরত্বে ভাটা স্থাপন করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর হতে ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বা লাইসেন্স না নিয়ে ইটভাটা চালু করা যাবে না। আর এসব ইটভাটা তদারকি করার জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্থানীয় বন বিভাগ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান থাকলেও তাদের রহস্যজনক নীরবতার কারণে ভালুকার অধিকাংশ ইটভাটা মালিক এসব আইন না মেনে অবৈধভাবে ফসলী জমির টপসয়েল ব্যবহার কওে দেদারছে তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আশপাশ এলাকার আবাদি জমির উর্বরতা হ্রাস এবং বিভিন্ন প্রজাতীয় ফলজ ও বনজ গাছপালাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। সরেজমিন উপজেলার ধলিয়া পলাশতলী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, পলাশতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তরপাশে সোহাগ খানের আলসাফা ব্রিক্স, আনিছুর রহমানের রিফাত ব্রিক্স ও জালাল উদ্দিনের সেবা ব্রিক্স নামক তিনটি ইটভাটা। এসব ইটভাটার চারপাশে মজুদ করে রাখা হয়েছে শত শত মন লাকড়ি। চিমনি দিয়ে প্রচণ্ড বেগে বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। আর সেই ধোঁয়া পাশের পূর্ব ধলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০০শ’ কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীসহ আশপাশের বসতি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে। তাছাড়া উপজেলার মেদুয়ারী গ্রামে জাহিন ব্রিক্স বাদে পুরুড়া মিরাজ ব্রিকস, মেদিলা খোরশেদ আলমের আলম ব্রিক্স, উড়াহাটি গ্রামে সুরুজ তালুকদারের টিএলএ ব্রিক্সসহ বেশ কয়েকটি ইটভাটায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দিনরাত ইট পোড়ানো হচ্ছে।

পলাশতলী গ্রামের লোকজন জানান, ইট পোড়ানোর কারণে সৃষ্ট কালো ধোঁয়া আর উড়ে আসা ছাই ও ধুলাবালিতে পূর্বধলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, নষ্ট হচ্ছে বিদ্যালয়ের পাঠদানের পরিবেশ। শিশুসহ নানা বয়সের লোকজন শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। তাছাড়া ইটভাটার বিরূপ প্রভাবে আশপাশের এলাকায় ফলজ ও সবজিসহ সবধরনের ফসলাদি ফলানো সম্ভব হচ্ছে না। ভালুকা বিরুনীয়া, মেদিলা, উরাহাটি ও শান্তিগঞ্জ সাইনবোর্ড সড়কের পাশে অধিকাংশ লাইসেন্স বিহীন ইটভাটা চালু রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় ১৫/১৬টির মতো ইটভাটা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ভালুকা আঞ্চলিক শাখার সদস্য সচিব কামরুল হাসান পাঠান কামাল জানান, উপজেলার বেশিরভাগ ইটভাটারই লাইসেন্স নেই। এমনকি তারা নীতিমালারও কোনো তোয়াক্কা করছে না। রহস্যজনক কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর নির্বিকার। স্থানীয়ভাবে ইউএনও এবং বন বিভাগ তদারকি করলে হয়তো কিছুটা অনিয়ম দূর হতো। ভালুকা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা ও কমিটির সদস্য সাদিকুজ্জামান জানান, এ ব্যাপারে তাকে কখনো ডাকা হয়নি। ইটভাটা তদারকি কমিটির সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন জানান, এ ব্যাপারে খোঁজ নেয়ার পর যে সব ভাটায় অনিয়ম পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি