image
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

দশমিনায় খেজুরের রস সংগ্রহ

বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, দশমিনা (পটুয়াখালী)

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে খেজুর গাছ কেটে গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। খেজুরের রস সংগ্রহের পর প্রতিটি ঘরে ঘরে গুড় তৈরির উৎসব শুরু হবে। এক সময় দিগন্ত জুড়ে মাঠ কিংবা সড়কের দুই পাশে সারি সারি অসংখ্য খেজুর গাছ চোখে পড়ত। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ। শীত মৌসুমের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। এই শীতের সময়ই পাওয়া যায় সুস্বাদু পানীয় খেজুর গাছের রস। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে এই সুস্বাদু খেজুর গাছের রস পানের মজাই যেন আলাদা। শীতের ভরা মৌসুমে রস সংগ্রহের জন্য শীতের আগমনের শুরু থেকেই রস সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে গাছিরা। ফলে অযত্নেঅবহেলায় পড়ে থাকা গ্রামগঞ্জের খেজুর গাছের কদর বেড়েছে। শীতের দেখা মিললেও এরই মধ্যে খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। গাছ সংকটের কারণে প্রতি বছরের মতো এই বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করেছে অনেক গাছি। কয়েক বছর আগেও এলাকার প্রতিটি বাড়িতে, ফসলি জমির আইলের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। প্রকৃতির নিয়মে খেজুর গাছ সাধারন আবহাওয়ায় জন্মে। এমনকি অনেক স্থানে একাধিক গাছ জন্ম নেওয়ায় সৃষ্টি হয় দেশি খেজুর গাছের বাগান। খেজুর গাছ সারা বছর অযতেœ অবহেলায়ই পড়ে থাকে। প্রতিবছরে ৪মাস খেজুর গাছ থেকে মিষ্টি রস সংগ্রহ করে তা দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। এ রস অত্যন্ত সুস্বাদু ও মানবদেহের উপকারিতার কারণে মানুষের কাছে অতি জনপ্রিয় হয়ে থাকে। শীতকালে শহর থেকে মানুষ ছুটে আসতো গ্রাম বাংলার খেজুর রস খেতে। রস আহরণকারী গাছিদের প্রানচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালি তৈরি করতেন তারা। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ রূপে ভিন্ন। এখন অবশ্যই সে কথা নতুন প্রন্মের কাছে রূপকথা মনে হতে পারে। যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ। খেজুর গাছ ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। এটাই তার বৈশিষ্ট্য। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। এ ছাড়া খেজুর পাতা দিয়ে আর্কষণীয় ও মজবুত পাটি তৈরি হয়। এমনকি জ্বালানি কাজেও ব্যাপক ব্যবহার হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, কালের বির্বতনসহ বন বিভাগের নজরদারি না থাকায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশ বান্ধব খেজুর গাছ এখন বিলুপ্তির পথে। বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ফারুক হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শীত মৌসুমের শুরুতেই আমি খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে থাকি। বছরের এই ৪মাস খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে থাকি। কাঁচা রস বিক্রির পাশাপাশি এই রস থেকে ঝোলা গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। উপজেলার কাউনিয়া গ্রামের শফিক হোসেন বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, হয়তো এক সময় আমাদের এলাকা থেকে খেজুর গাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা। যদি আমরা আমাদের এই হাজার বছরের ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে চাই তাহলে এই কাজে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাফর আহমেদ বলেন, আমরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে উপজেলার বিভিন্ন সড়কের দুই ধার দিয়ে খেজুরের গাছ লাগানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। খেজুর গাছ ফসলের কোনো ক্ষতি করে না।

এই গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচ করতে হয় না। যা সকলের রস ও গুড়ের চাহিদা মেটাবে। এ বছর সঠিক সময়ে শীতের আগমণ হওয়াতে বিভিন্ন ইউনিয়নে আগাম খেজুর গাছ ঝুড়া শুরু হয়েছে। এখান থেকে চাষিরা রস আহরণ করবে। তা থেকে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি পণ্য তৈরি করবে এবং যা নিকটস্থ বাজারে বিক্রি করে তারা ব্যাপকভাবে লাভবান হবেন।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি