image
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

শুক্রবার চান্দিনা মুক্ত দিবস

বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, চান্দিনা (কুমিল্লা)

শুক্রবার ১২ ডিসেম্বর চান্দিনা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের রক্তঝরা এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলাকে মুক্ত করে। কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে মিত্র বাহিনীর সেলিং এর কারণে ১১ ডিসেম্বর ভোরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ময়নামতি সেনানিবাস থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়। বরুড়া হয়ে চান্দিনার উপর দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন স্থানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। আর ওই ঘটনাটি চান্দিনার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর এলে মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় চান্দিনার মুক্তিযোদ্ধারা মানসিক ভাবে দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করতে এগিয়ে যায়।

এদিন দুপুরে বর্তমান উপজেলা সদরের হারং উদালিয়ারপাড় এলাকায় পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ১১ ডিসেম্বর দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গোলাগুলি চলে। এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনীর গোলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে ১২ ডিসেম্বর ভোরে ১৭ শতাধিক পাকিস্তানী সৈনিক মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। উল্লাসিত মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে ধরে নিয়ে বর্তমান চান্দিনা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জড়ো করে।

অপরদিকে ১১ ডিসেম্বর যুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের ধাওয়া খেয়ে হারং উদালিয়ারপাড় থেকে ৬জন হানাদার বাহিনীর সদস্য দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে পালিয়ে যায়। এসময় উপজেলার বর্তমান মাইজখার ইউনিয়নের করতলা গ্রামের কেওড়াতলায় জনতার প্রতিরোধের মুখে পড়ে তারা। জনতা মুক্তিযোদ্ধাদের খবর দিলে মুক্তিযোদ্ধা ও শতাধিক গ্রামবাসী তাদেরকে আটকের চেষ্টা করে। এসময় হানাদার বাহিনীর ওই সদস্যরা চারদিকে এলোপাথারী গুলি ছুড়তে শুরু করে। সে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহমদ, ইউপিআর সদস্য কাজী আব্দুল লতিফসহ ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৩ জন বীর জনতা শহীদ হন। গোলাগুলির এক পর্যায়ে হানাদারদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে যায়। ঘৃণা ও ক্রোধে মুক্তিযোদ্ধা এবং উত্তেজিত জনতার আক্রমণে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ৬ জন সৈনিক সেখানে নিহত হয়।

রক্তঝরা এই দিনে বীরমুক্তিযোদ্ধারা চান্দিনায় উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পাতাকা। আজকের দিনটি একদিকে যেমন আনন্দের অপরদিকে স্বজনহারাদের জন্য বেদনার দিন। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের সময় চান্দিনা ও তার আশ-পাশের বিভিন্ন স্থানে খন্ডযুদ্ধ সংগঠিত হয়। এতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ১০ মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। বহু পাক বাহীনির সদস্যরাও মারা যায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে।

পরবর্তীতে শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় চান্দিনা উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটক সংলগ্ন স্থানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হয়। এছাড়া ফাঐ এএমএফ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম খচিত আরেকটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, চান্দিনা মুক্ত দিবস উপলক্ষে শুক্রবার শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করার লক্ষ্যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্প স্তবক অর্পণ এবং উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়েছে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি