মাটির ঘর। ছনের ছাইনি। কয়েক ধরনের ছনের নিপুঁন ছাউনি। গ্রামের খেটে খাওয়া শ্রমিকের নিপুঁন হাতের জাদুতে ফোটে উঠতো দারুন কুটির। বাঁশের উপকরণগুলো দা বাগি দিয়ে তৈরি করে স্তরে স্তরে সাজানো হতো। ঘরের চালগুলো হতো কয়েক রকমের। গ্রামের আদি পুরুষরা নাম দিয়ে ছিলে চৌচালা, দোচালাসহ কয়েক নামে। ঘর তৈরির উপকরণগুলোর নামও ছিল ঐতিহ্যের। বাঁশের এসব উপকরণের নাম ছিলরায়া, আটন, উবি, খাম, খামের কাঞ্চন, পাইর ধন্না, কাবারি, বেতিসহ বৈচিত্র্যময় নানা নাম। ছনের সাথে বাঁশের তৈরি চিকন আটনের সাথে পাটের রশি বা সুতলি বাঁধ দিতো নানা ভিন্নতায়। রশি চালের উপর নিচে বাঁধদয়া হতো। এমন দৃশ্য চোখে পড়তো মধুপুরের পথে প্রান্তরে।
প্রাচীনত্যের যুগে তখন বন্য পশুপাখি শিকার করা হয়।বশি ভাগই করা হতোলাহার বিভিন্ন জিনিস দিয়ে। ঐ সময় লোহার জিনিসপত্র দা বাগি, বটি, শাবল, খুনতা, হামাতিসহ নানা তৈজসপত্র ব্যবহার করা হতো। ঘরের কাজে ছন বাঁশের সাথে রশি আটকানোর জন্য হামাতি দিয়ে ঘরের চালের নিচে দাঁড়িয়ে চাল ছিদ্র করে হামাতি উপরেতাললে উপরথকে অপরজন হামাতির ছিদ্র দিয়ে রশি দিলেসটা আবার নিচে নামিয়ে ঘুরিয়ে উপরে দিলে বাঁধ দিতো। এ জন্য ছনের উপরে আটনদয়া হতো। বাঁধ শক্ত করতে দা দিয়ে পিটিয়ে কষনিদয়া হতো। এভাবে চলতো গ্রামের ছনের ঘর তৈরি। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে কথা যায়, এক সময় মধুপুরের প্রায় সব গ্রামেই ছিল মাটির ঘর আর ছনের ছাউনির ঘর। ছিল গ্রামের আদি ঐতিহ্য। প্রচুর পরিমানে বাঁশ ছিল। বন, আনারসের বাগান, জমির আইল ও পতিত জমিতে প্রচুর পরিমানে ছন হতো।
কার্তিক মাসথকে ছন কাটা শুরু হতো। চলতো চৈত্র মাস পর্যন্ত। দলবঁধে ছনের জমিতে থাকারছাট টং ঘরতালে মাস ব্যাপী ছন কাটা হতো। তারা জানান,ঘরের বাঁশ লাগত সাধারণত দু’ধরনের। স্থানীয় জাতের তল্লা বাঁশ, বওড়া বাঁশ, তারাই বাঁশ,জাওয়া বাঁশ ইত্যাদি। তল্লা হচ্ছে পাতলা কম গিট্রি যুক্ত। সহজেই ফাটানো ও কাটাযতে। এ বাঁশ দিয়েবড়া আর চালের উপরের হালকা কাজে ব্যবহার করা হতো। বওড়া বাঁশরাওয়া, পাইর, ধন্না, আটনসহ শক্ত কাজে ব্যবহার করতো। জাওয়া বাঁশ ও তারাইশৗখিন ঘরের কাজে ব্যবহার করা হতো। আব্দুর কাদের জানালেন, কার্তিক মাসথকে চৈত্র মাস পর্যন্ত মাটির ঘর আর ছনের ছাউনির ঘর তৈরি কাজ করা হতো। শুষ্কমৗসুম এ ঘর তৈরির উপযুক্ত সময় বলে তিনি জানান।
আকতারহাসেন জানান, শীতের সময়বশি কাজ করা হতো। কারণ বৃষ্টির সময় মাটির ঘর ছনের কাজ করা যায় না। মাটি পানি দিয়ে মাখামাখি করে এক হাত পরিমান করে দুই তিন দিন পর পরদয়ালেদয়া হতো। শুকিয়েগলে আবার দিতো এ ভাবে ছয় সাত উচু করেবড়া দিতো মাটি দিয়ে। তারপর ছন দিয়ে উপরে ছাউনি হতো। আরশেদ আলী জানান, এ ঘর শীতে গরম আর গরমে ঠান্ডা থাকতো। ঝড় বৃষ্টির সময় শব্দ কম হতো।থকে খুব আরাম ছিল বলে তিনি জানান। স্থানীয়দের তথ্যমতে, নব্বই দশক পর্যন্ত মাটির ঘরের কদর ছিল। ছনের ছাউনির শ্রমিকের আধিক্য ছিল। কালের পরিক্রমায় এখন মাটির ঘর হারিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ দুই একটাচাখে পড়ে। ঘর তৈরিরস সব কারিগররাও এখন আরনই। আগামী প্রজন্ম ভুলে যাবে গ্রামীণ ঐতিহ্যের মাটির ঘর ছনের ছাউনির কথা। রূপ কথার গল্পেরশানবে আদি এ ঘরের আত্ম কাহিনি।
শ্রাবণ আহম্মদে(২৪) জানান,তিনি মাটির ঘরদখেছেন তার কাছে গ্রামের আদি ঐতিহ্যের ঘর গুলো ভালো লাগত। আরামদায়ক ও প্রশান্তির ছিল বলে তার ধারণা। এখন অনেক কপি হাউজ,রস্টুরেন্টে, বিভিন্ন শখের বাংলোতে ছনের ঘর তৈরি করছেন। তাতে দর্শনার্থীদের সাড়াও মিলছে।দখে ভালো মনে করছেন তারা। এখন ছনের অভাব, শ্রমিকের অভাবে করা হয়ে উঠছে না এসব ঘর। একদিন মাটির ঘর হারিয়ে যাবে। ঐতিহ্যও হারাবে গ্রামীণ পরিবেশেরশাভা পাওয়া ভিন্ন মাত্রার ছনের ছাইনি দিয়ে ঢাকা মাটির ঘর। তবে ঐতিহ্য ফিরাতে হলে পরিবেশ বিনাস করে বন জঙ্গলে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারথকে ফিরে এসে বন বিনাসরাধ করতে পারলে প্রাকৃতিক বনে আগের ছন হবে। ছাউনি পাবে আগেরসই মাটির ঘর। এমনটাই জানালেন স্থানীয়রা।
অর্থ-বাণিজ্য: ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা চালুর অনুমোদন পেল বাংলালিংক
অর্থ-বাণিজ্য: ডিসেম্বরের ৯ দিনেই এসেছে ১১৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স
অর্থ-বাণিজ্য: যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাগ রপ্তানি শুরু করল আরএফএল