রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে ৮ ইঞ্চি ব্যাসের সরু গর্তে পড়ে মাটির গভীরে আটকে যাওয়া দুই বছর বয়সী শিশু সাজিদকে শেষ পর্যন্ত জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। টানা কয়েক ঘণ্টার জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানের পর বৃহস্পতিবার, (১১ ডিসেম্বর ২০২৫) রাত ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিস তাকে নিরাপদে তুলে আনতে সক্ষম হয়।
ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেনেন্স বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, গর্তটি অত্যন্ত সরু হওয়ায় উদ্ধার কাজ শুরু থেকেই কঠিন হয়ে উঠে। ক্যামেরা নামিয়ে শিশুটির অবস্থান শনাক্ত করতে সময় লেগেছে। এরপর পাশ থেকে খনন করে ধীরে ধীরে সুড়ঙ্গ তৈরি করে উদ্ধারকারীরা লক্ষ্যস্থলে পৌঁছান।
তিনি বলেন, ‘গর্তটি প্রায় ৮ ইঞ্চি ব্যাসের এবং গভীরও অনেক। শিশু জীবিত আছে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি দিয়েছে। ধৈর্য্যরে সঙ্গে কাজ চালাতে হয়েছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক বছর আগে সেচের জন্য একটি সেমিডিপ নলকূপ বসাতে গিয়ে জমির মালিক গর্তটি তৈরি করেছিলেন। ৩৫ ফুট পর্যন্ত বোরিং করার পর পানি না পেয়ে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। খোলা অবস্থায় থাকা ওই গর্তের পাশেই গতকাল বুধবার দুপুরে সাজিদ তার মায়ের সঙ্গে মাঠে যায়। খেলতে খেলতে হঠাৎই শিশুটি গর্তে পড়ে নিচে নেমে যায়।
ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধার চেষ্টা চালালেও সংকীর্ণতার কারণে সফল হতে পারেননি। পরে তানোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মোট আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
অভিযানের পুরো সময় শিশুকে বাঁচিয়ে রাখতে পাইপ দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া সদস্যরা জানান, গর্তের ভেতরের কিছু অংশে মাটি জমে থাকায় কাজ আরও ধীরগতির হয়ে পড়ে। তবুও মরিয়া চেষ্টায় অবশেষে শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় ওপরে তোলা হয়।উদ্ধার হওয়ার পর শিশুটিকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটি চেতনাসম্পন্ন থাকলেও শ্বাসকষ্ট ও আঘাতের কারণে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ঘটনার সময় শিশুটির মা রুনা খাতুন ভেঙে পড়েন। সন্তানকে জীবিত ফিরে পেয়ে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আল্লাহ আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।’
গ্রামজুড়ে এখন স্বস্তির বাতাস। স্থানীয়দের মতে, এ ধরনের গর্ত খোলা অবস্থায় রাখা বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় সতর্কতা বেড়েছে।