পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নেমেছে ৮ ডিগ্রিতে, বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
সফিকুল আলম দোলন, পঞ্চগড়

দেশের উত্তর জনপদে তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। দিন যতই যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ ততই বেড়েই চলছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছে ৮ ডিগ্রির ঘরে। সেই সঙ্গে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন।

পঞ্চগড়ে অগ্রহায়ণ মাসের শেষে ক্রমশ পাল্লা দিয়ে কমছে দিনের তাপমাত্রা। টানা পাঁচদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ঘরে অবস্থান করলেও এবার তা নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রিতে। যা মৌসুমের সর্বনিম্ন বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বৃহস্পতিবার, (১১ ডিসেম্বর ২০২৫) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে এই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৭৮ শতাংশ। সামনের দিকে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে । গতকাল বুধবার একই সময়ে এখানে তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৭৭ শতাংশ।

রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা দেখা যায়।

তেঁতুলিয়া প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, টানা পাঁচদিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে অবস্থান করার পর বৃহস্পতিবার (বৃহস্পতিবার) তা আরও কমেছে। এ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে।

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগও। নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঠে-ঘাটে বের হতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রাস্তাঘাট, বাড়ির সামনে কিংবা চা-স্টলের পাশে খড়কুটো জ্বালিয়ে অনেকে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। অনেকেই গায়ে অতিরিক্ত মোটা কাপড় জড়িয়েও কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। বয়স্ক ও শিশুদের ওপর তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় প্রভাব বেশি পড়ছে।

কয়েকদিন ধরে উত্তর হিমালয় থেকে বয়ে আসা হিমশীতল ঠাণ্ডা বাতাস আর হালকা কুয়াশায় সূর্যের দেখা মিলছে না। সন্ধ্যার পর গ্রাম ও সমতলের চা বাগানে বেশ ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। ঠাণ্ডার পাশাপাশি হিমেল বাতাসের কারণে বিপাকে পড়েন শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষজন। বিশেষ করে সমতল ও নদী বিধৌত চা বাগানগুলোয় শীতের প্রকোপ বেশি অনুভূত হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দেশের কোনো এলাকায় ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, ৪-৬ ডিগ্রি থাকলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, ৬-৮ ডিগ্রি থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, আর ৮-১০ ডিগ্রি থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়।

তেঁতুলিয়ার বুড়াবুড়ি এলাকার পাথর শ্রমিক খোরশেদ আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘শীতের কারণে নদীতে নামতে পারছি না। ঠাণ্ডায় পানিতে নামলে হাত-পা অবশ হয়ে যায়। তারপরও পেটের তাগিদে কাজ করতে হয়।’

পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলারহাট ইউনিয়নের শিংরোড় এলাকার কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘শীতকালে আমাদের কাজের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। প্রতিদিন ভোর হলেই খেত থেকে বিভিন্ন শাকসবজি উত্তোলন করে বাজারে নেয়ার জন্য প্রস্তুত করতে হয়।’

বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ী এলাকার ভ্যান চালক আইজুল ইসলাম বলেন, ‘কয়দিন থেকে খুব শীত করতেছে। আমরা গরিব মানুষ কাজ না করলে তো ভাত জোটে না। তাই বাধ্য হয়ে শীতকে উপেক্ষা করে ভ্যান নিয়ে বাইরে বের হয়েছি।’

স্থানীয় লোকজন জানান, হেমন্তের শেষ দিকে উত্তরের এই এলাকায় প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশা নামে, যা পরদিন সকাল পর্যন্ত থাকে। সঙ্গে যুক্ত হয় হিমেল বাতাস। হালকা কুয়াশার মধ্যে প্রবেশ করা উত্তরের ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাস রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কনকনে শীত তৈরি করেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশার মধ্যে সূর্য উঁকি দিয়েছে। হিমেল বাতাসে মানুষ কনকনে শীত অনুভব করছেন। এরই মধ্যে অনেকেই গরম কাপড় জড়িয়ে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছেন। কেউ ফসলি জমিতে হালচাষ করছেন, কেউ খেত থেকে সবজি তুলে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান জানান, এই দুর্যোগে জেলা প্রশাসন নিয়মিত শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এবার দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ অর্থ দিয়ে ৮ হাজার ৬৪০টি কম্বল ক্রয় করে পাঁচটি উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৬৫ হাজার কম্বলের চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» চাকরি স্থায়ী হচ্ছে না চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মচারীদের, কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ

» পীরগঞ্জে ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে শিশুর মৃত্যু

» র‌্যাব কর্মকর্তার স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে স্বর্ণালঙ্কার লুট

» ডেঙ্গু: আরও ৪১১ জন ভর্তি, মৃত্যু ৩

সম্প্রতি