সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের কৃষক মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন। তিনি কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। ২০২৪ সালের এই সময়ে ইউনিয়নের গুলিয়াখালি এলাকায় ৩২ শতক কৃষি জমিতে সর্জন পদ্ধতিতে আগাম টমেটো চাষ করে তিন লক্ষ টাকার টমেটো বিক্রি করেন। তার মধ্যে লাভ হয় প্রায় দুই লক্ষ টাকা। এ বছরও লাভের আশায় জমিতে আগাম টমেটো চাষ করেন। সে আশা এখন তাঁর গলার কাঁটা। হঠাৎ আগাম ধ্বসা (আরলি বাইট) রোগে আক্রান্ত হয়ে জ্বলসে যায় পুরো ক্ষেত। রোগ দমনে কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যয় করতে করতে ঋণের ফাঁদে পড়েন আলতাফ হোসেন। একদিকে সংসারের খরচের চাপ আরেক দিকে ঋণের বোঝা। উভয় সংকটে পড়ে তিনি হতাশাগ্রস্থ জীবন কাটাচ্ছেন। আলতাফ হোসেনের মত আগাম টমেটো ক্ষেত নিয়ে একই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের হাজার হাজার কৃষক। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দাবি, কৃষকরা চাষে কৃষি নীতিমালা না মানার কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। একই জমিতে প্রতিবছর একই ধরনের ফসল রোপন করলে এই ক্ষতি হয়। তাছাড়া কৃষকরা ফসলি জমিতে রোগ দেখা দিলে নিজের মত করে কীটনাশক ব্যবহার করে। যার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। গ্রীষ্মকালীন সময়ে আগাম টমেটো ক্ষেতে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। এই সময় কৃষকদেরকে সচেতন থাকতে হবে। কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মোট ১৫০ হেক্টর আগাম টমেটো চাষ করা হয়েছে। তারমধ্যে শুধু সৈয়পুর ও মুরাদপুর ইউনিয়নে প্রায় ১৩০ হেক্টর জমিতে আগাম টমেটো চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২০ হেক্টর জমিতে আগাম টমেটো ক্ষেত তুলবে এমন সময় আরলি বাইট রোগে আক্রান্ত হয়ে পুড়ে গেছে। গত বছর চাহিদা, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় কয়েক বছর ধরে শীতকালীন হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার ‘আরলি বাইট’ রোগ লাভের আশায় থাকা কৃষকের চেহারায় দুচিন্তার ছাপ ফেলেছে। এদিকে রোগের কারণে আগাম টমেটো ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বাজারে টমেটোর দাম অনেকটা বেশি। সরজমিনে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছর আগাম টমেটো চাষে যথেষ্ট লাভবান হয়েছে কৃষকরা। কিন্তু এই বছর আরলি বাইট রোগে আক্রান্ত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আগাম টমেটো ক্ষেতে। গত বছর এমন দিনে টমেটো প্রতি কেজি পাইকারি দরে বিক্রি হয় ৫০-৬০ টাকা। কিন্তু এবছর পাইকার দরে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। আগাম টমেটো পাইকারদাররা কৃষক থেকে কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করে। যার ফলে কৃষকরা ভালো মূল্য পায়।
গুলিয়াখালী এলাকার কৃষক ওসমান জানান, আগাম টমেটো চাষ করার ক্ষেত্রে শ্রমিক থেকে বাঁশের কঞ্চি সবকিছু দাম বেশি। তাই একটি সমতল কৃষি জমিকে আগাম টমেটো চাষের জন্য তৈরী করতে শতকে খরচ ৭-৮ হাজার টাকা। আবার আগাম টমেটো চাষের উপযোগী হওয়া ক্ষেত পরবর্তী বছরে চাষ করলে প্রতি শতকে খরচ ৪-৫ হাজার টাকা। সে তুলনায় এবার আগাম টমেটো চাষে ১২০ হেক্টর জমিতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি টাকার মত। বগাচতর এলাকার কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, এ রোগ টমেটো ক্ষেতে দেখা দেওয়ার একদিনের মধ্যে গাছ নুয়ে পড়ে। এরপর বিভিন্ন স্থানে কালো দাগ হয়ে গাছে আসা ফল (টমেটো) ঝরে পড়ে। পর্যায়ক্রমে পুরো ক্ষেতের টমেটো গাছ রোগে আক্রান্ত হয়। একের পর এক কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করেও রোগ দমন করা যাচ্ছে না। সৈয়দপুর ইউনিয়নের কৃষক শাহাবুদ্দিন বলেন, আমি এক একর জায়গা জুড়ে আগাম টমেটো চাষ করেছি। আরলি বাইট রোগে আক্রান্ত হয়ে পুরো ক্ষেত পুড়ে গেছে। আগাম টমেটো কাজ করতে গিয়ে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ঋণগ্রস্থ হয়েছি। সংসার ও ঋণের বোঝা নিয়ে অনেকটা কষ্ট আছি। আর কয়েক দিন পরই তিনি টমেটো তুলতে পারতেন। এখন ‘না খেয়ে থাকলেও ঋণের কিস্তি দিতেই হবে। এটা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তায় আছি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিব উল্লাহ বলেন, টমেটো হলো শীতকালীন সবজি। আগাম টমেটো চাষের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। এবার গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি ও অতিরিক্ত তাপমাত্রা কারনে আগাম টমেটো চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে উৎপাদন করতে হবে। এই বছর যে জমিতে টমেটো চাষ করবে, সেই জমিতে আগামী বছর অন্য ফসল চাষ করবে। ফসলে রোগ দেখার সাথে সাথে নিজের মত করে ঔষধ ব্যবহার না করে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
অর্থ-বাণিজ্য: রিজার্ভ ফের ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো
অর্থ-বাণিজ্য: স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা
অপরাধ ও দুর্নীতি: সাবেক মন্ত্রী গাজীসহ ৮জনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা