অনুকূল আবহাওয়া থাকায় পাবনার চাটমোহরে পানের ফলন আশানুরুপ হলেও দাম না পাওয়ায় বিপাকে করেছে পান বরজ চাষিরা। উৎপাদন খরচ তুলতেই তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। চাটমোহর কৃষি অধিদপ্তর সূত্র বলছে, পান চাষিদের কারিগরি সহায়তার পাশাপাশি তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। বাংলা সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ পান। এই পান নিয়েই রচিত হয়েছে অসংখ্য গান, কবিতা, বাঙালির আতিথেয়তা থেকে শুরু করে ধর্মীয় উৎসব, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান সবখানেই রয়েছে একখিলি পানের বিশেষ কদর। আর দীর্ঘদিন ধরেই পান চাষ করছেন চাটমোহর উপজেলার পশ্চিম অঞ্চলের কৃষকরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা হরিপুর ইউনিয়নেই পানের বরজ রয়েছে সবচেয়ে বেশে। এদের পান চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে ডিবিগ্রামেও শুরু হয়েছে পানের চাষ। সবুজের সমারহে আকাশমুখি হয়ে উঠছে একেকটি পান গাছ। লতানো গাছগুলো জিগা গাছের সাথে লেপ্টে আছে। একটি পান গাছ থেকে আরেকটি পান গাছের দূরত্ব ৩ ফুট। এই ৩ ফুট জায়গা চলাচলের জন্য রেখেছে চাষিরা। বিভিন্ন সময় গাছের পরিচর্চা আর পান ভাঙ্গার জন্য এই জায়গা তারা ব্যবহার করে থাকেন। পান চাষে দরকার উঁচু, বন্যামুক্ত, বেলে দোআঁশ বা এটেল দোআঁশযুক্ত জমি। ছায়াযুক্ত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া পান চাষের জন্য ভাল। পান চাষি আব্দুল হাই জানান, পান চাষের জন্য প্রথমে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করে মই দিয়ে মাটি সমান করতে হয়। এরপর ৩ ফুট পর পর বাঁশের কাবারি অথবা জিগা গাছের লগা দিয়ে পিলি তৈরী করতে হয়। অনেকে জিআই তার লোহার রডও ব্যবহার করে থাকে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে মাটি কাঁদা কাঁদা করে পানের ডগা লাগাতে হয়। এরপর কাগজ দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হয়। কয়েকদিন পর কাঁদা মাটি শুকিয়ে গেলে পান গাছের গোড়া মাটি দিয়ে উচু করে দিতে হয়। এরপর প্রতিটি পান গাছ উপরে ওঠার জন্য দিতে হয় রড, জিগা গাছ অথবা জিআই তার। এছাড়া ৭ ফুট উচুতে তৈরী করতে চাতাল। কারণ ৭ ফুট পান গাছ হবার পর মাথা মুড়ে না দিলে ফলন ভাল হয়না। একটি পান গাছ ৪০/৫০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। পান তুলে নেবার পর একই ডগায় আবার পান আসে। তিনি জানান, আমি ৩ বিঘা জমিতে পান চাষ করছি। তবে এ বছর বাজার মন্দা হওয়ায় আয় করা সম্ভব হবেনা। তেবাড়িয়া গ্রামের পান চাষি, নুরুল,রাজ্জাক, স্বপন জানান, প্রতি বিঘা জমিতে পান চাষ করতে বীজ,খৈল, সার, খিল, বিষ এবং শ্রমিক বাবদ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। পানের বাম্পার ফলন হলেও এ বছর পান চাষে লাভ হবে না। সোন্দভা পুকুরপাড় গ্রামের তৈয়ব, জলিল, রহিম, আলাউদ্দিন জানান, আমরা পান চাষ করে বিগত বছর গুলোতে সকল খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি ৪০/৫০ হাজার টাকা আয় করেছি। কিন্তু বর্তমানে পানের বাজার খারাপ হওয়ায় এ বছর লাভের মুখ দেখা কঠিন হচ্ছে। গোপালপুর গ্রামের পান চাষি মগর, করিম, কোমেদ, ফজলু জানান, আমাদের এলাকার পান ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনায় সরবরাহ করা হয়। ৮০টি পান দিয়ে একটি করে বেরি তৈরী করা হয়। বর্তমান বাজারে ১ বেরি পানের দাম ১০০ টাকা। ১ হাজার ৫’শ বেরিতে এক খাচি পান হয়। প্রতিদিন ট্রাকে করে হাজার হাজার খাচি পান যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ধুলাউড়ি গ্রামের পান চাষি মকবুল, ইন্তাজ, গোলজার, মামুদ, মোবারক জানান, হরিপুরে বিঘা প্রতি পানের জমি ৪০ হাজার টাকা করে লীজ দেয়া হয়। সে হিসাব করলে এ বছর পান চাষিদের লোকসানে পড়তে হবে। তারা আরও জানান, সরকার কৃষিতে অনেক ভূর্তকি দিলেও আমরা পান চাষিরা কোন কৃষি বিভাগ থেকে সুযোগ-সুবিধা পাই না। সরকার আমাদের সহযোগীতা করলে আমরা পান চাষে লাভের মুখ দেখতে পারতাম। চাটমোহর উপজেলা কৃষি অফিসার কুন্তলা ঘোষ জানান, বর্তমানে চাটমোহর উপজেলার ৩১ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হচ্ছে। ফলনও ভাল হয়েছে। তবে দামের বিষয়টি বাজার অনুযায়ী হয়। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী পান চাষিদের সহায়তা প্রদান করছি। তিনি আরও জানান, চলতি বছর চাটমোহরে ২৫০ মেট্রিন টন পান উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে।
অর্থ-বাণিজ্য: স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা
অপরাধ ও দুর্নীতি: সাবেক মন্ত্রী গাজীসহ ৮জনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা