image
বরিশালের চরফ্যাশনের মুজিব নগরে তরমুজ চাষে ব্যস্ত কৃষকরা -সংবাদ

তরমুজ চাষের ‘আতুড়ঘর’ চরফ্যাশন, ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
শহিদুল ইসলাম জামাল, চরফ্যাশন (ভোলা)

ভোরের আকাশে সূর্যের আলো ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গেই আবাদি জমিতে শুরু হয় হাজারখানেক অস্থায়ী কৃষি শ্রমিকের এক কর্মকৌশল। পশ্চিমাকাশে সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত চলে নিপুণতার প্রতিযোগিতা। কেউ পাওয়ার টিলার চালিয়ে জমি চাষ দিচ্ছে, কেউ কেউ দলবেঁধে জমি প্রস্তুত ও তরমুজ গাছের পরিচর্যা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কেউবা সহকর্মীদের ক্ষুধা মেটানোর খাবার যোগানে শামিল হচ্ছে। প্রতিদিনের এই কর্ম-আয়োজন ৬ হাজার ৪৩৭ একর আয়তন বেষ্টিত বিচ্ছিন্ন ‘চর’ মুজিবনগরে। এই চরটি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আওতাধীন। পুরো চরঘেরা তেতুলিয়া নদী। চরের কয়েকটি জায়গায় মানুষের বসতি হলেও এক চতুর্থাংশই আবাদি জমি। নদীপথে খেয়া পারাপারেই এখানকার বাসিন্দাদের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম।  শুক্রবার, (১২ ডিসেম্বর ২০২৫) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো চরঘুরে এসব শ্রমিকের এই কর্মকৌশল দেখা গেছে। প্রধানত রসালো ফল তরমুজ আবাদের জন্য প্রতি বছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এ চার মাস তারা শ্রম বিনিময় করেন। ফসল তোলার পর আবার নিজ এলাকায় ফিরে যাবেন এসব শ্রমিক। খেতের পাশে ছনের দোচালা খাটিয়ে অস্থায়ী বসতি স্থাপন করেছেন শ্রমিকরা। এমন অস্থায়ী বসতির সংখ্যা প্রায় শ’খানেক। অস্থায়ী শৌচাগারও স্থাপন করেছেন। 

বিগত তিন বছর তরমুজের ফলন ভালো হওয়ায় তরমুজ চাষিদের মাঝে প্রাণোচ্ছলতা দেখা গেছে এ অঞ্চলে। তেতুলিয়া নদীসহ মিলিত খালগুলোতে মিঠা পানির উৎস থাকায় এ চরে তরমুজের আবাদ প্রতি বছরই বাড়ছে। এমনটায় জানিয়েছেন, শ্রম বিনিময় করতে আসা চর কলমি এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রমিক মো. হোসেন। তিনি বলেন, ‘তরমুজ চাষের জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে তরমুজ বিক্রি করা পর্যন্ত পরিচর্যার জন্য মাসিক চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন শ্রমিকরা। আমি প্রতি মাসে ২২ হাজার টাকা করে তিন মাসের চুক্তিভিত্তিক কাজ করছি। থাকা খাওয়া তরমুজ চাষির। এ জমির পাশে টং ঘরে রাতে ঘুমাই, দিনে কাজ করি।’ মো. হোসেনের মতো একই চরে হাজারখানেক শ্রমিক তরমুজ চাষের জমিতে কর্ম ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

ওই সময় তরমুজ গাছের পরিচর্যা করছিলেন মুজিব নগর ইউনিয়নের তরমুজ চাষি মো. ইসমাইল। তরমুজ আবাদের বিষয়ে কথা হয়েছে তার সঙ্গে। তিনি তার কাজ শেষে বলেন, ‘১৩ একর জমিতে থাই সুপার, থাই কিং ও আরলি ওয়ান জাতের তরমুজ চাষ করেছি। গত বছর ১৫ গন্ডা জমির তরমুজ ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। আল্লাহ রহমত করলে এ বছর ৮০-৯০ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। শেষ পর্যন্ত ২০ লাখ টাকা খরচ হবে। যেহেতু আগাম চাষ করেছি, তাই এই তরমুজগুলো কেজি দরে বিক্রি করবো। ৬-১০ কেজি ওজনের তরমুজ আমার জমিতে আছে।’ 

একই এলাকার কৃষক রাকিব হোসেন ৩ কানি (৪৮০ শতাংশ) জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। ৩০ হাজার টাকা করে কানিপ্রতি লগ্নি নিয়েছেন। তার মোট খরচ সাড়ে চার লাখ টাকা হবে। ১১-১২ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। পাশের ৬ কানি (৯৬০ শতাংশ) জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক আবুল হাসেম। তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ৩২ হাজার টাকা করে কানিপ্রতি লগ্নি নিয়েছেন। তার ১১ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। 

ওই চরের আবাদি জমির মালিকরা জানান, প্রতি কানি (১৬০ শতাংশ) জমি ৩০-৪০ হাজার করে লগ্নি দিয়েছেন। যা, গত বছর ছিল ২২-২৬ হাজারের মধ্যে। তরমুজ চাষের জন্য অনেক কৃষক গত বছর লগ্নির টাকা দিয়ে রেখেছেন। 

কৃষি ব্যাংক চরফ্যাশন শাখা ব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বিগত বছরে কৃষকদের কৃষি প্রনোদনার আওতায় ৪% সুদে ঋণ দেয়া হয়েছে, তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া সাধারণত ১২% হারে কৃষকদের ঋণ দেয়া হয়। বিনা জামানতে বর্গাচাষি কৃষকদের ঋণ সহায়তা দিয়ে থাকি। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই আমরা কৃষকদের ঋণ প্রদান করে থাকি।’ 

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১০ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে তরমুজের আবাদ গত অর্থবছরের তুলনায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হুদা বলেন, ‘চরফ্যাশন উপজেলার চরাঞ্চলগুলো তরমুজ চাষের ‘আতুড়ঘর’। এখানকার মাটি খুবই ঊর্বর। এ উপজেলায় ৬ হাজার তরমুজ চাষি রয়েছে। এছাড়াও তরমুজ উৎপাদন প্রকৃয়ায় ৫০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। বিশেষকরে মুজিব নগর ইউনিয়নে ৫ হাজার একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন কৃষকরা। পশ্চিমাঞ্চলের এই এলাকাটিতে মিঠা পানির উৎস থাকায় অর্থাৎ তেঁতুলিয়া নদীতে মিঠা পানি থাকায় তরমুজ চাষিরা বেশি ঝুঁকছে।’

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি