বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে শাহজাদপুরের পোতাজিয়া, রেশমবাড়ি সহ যমুনা চরের বিভিন্ন চারণ ভুমি জেগে উঠেছে। আর এই চারণ ভূমিতে গজিয়ে উঠা কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর জন্য খামারীরা গবাদি পশু নিয়ে এসেছে বাথানে। এর ফলে খামারীরা গবাদি পশুকে উচ্চমুল্যের দানদার খাবার খাওয়ানের খরচ থেকে স্বস্তি পেয়েছে। কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর ফলে গাভীর দুধ উৎপাদন বেড়েছে বলে খামারীরা জানান।
এছাড়া কাঁচা ঘাস খাওয়ানের ফলে পশুগুলি রোগ বালাইও কমে গেছে । দীর্ঘ দিন গোয়ালে থাকায় পশু গুলি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল বাথানে নেয়ার ফলে পশু গুলি সতেজ হয়ে উঠেছে । এবং দুধের উৎপাদনও বাড়তে শুরু করেছে বলে খামারিরা জানান। এছাড়া প্রতি বছরই এই ভ্রাম্যমান বাথান গুলো দেশের বিভিন্ন জেলা হতে একত্রিত হয়ে মহিষ ও গরু ঘাস খাওয়ানের জন্য নিয়ে আসে যমুনার বিভিন্ন চরে ।
শাহজাদপুরে পোতাজিয়া ও রেশমবাড়ি চারণ ভুমিতে স্থানীয় বাথানের মালিকেরা তাদের গবাদি পশু নিয়ে আসেন । এই সব এলাকাতে গজিয়ে উঠা সবুজ ঘাস দিয়ে মহিষ ও গরুর খাদ্যের যোগান দিচ্ছেন।
যমুনা চরাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর থেকে চৌহালি ঘাটাবাড়ী, বাঐখোলা, উতুলি, মালিপাড়া, নওহাটা, তেগুরী, গোসাইবাড়ি, কুচেমোড়া, কাজিপুরের তেকানীসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে। এইসব বাথানে প্রায় ৪শ ছোট বড় মহিষ ছাড়াও কয়েক সহস্রাধিক গরু রয়েছে।
বাথান পরিচালনাকারী রইজ উদ্দিন বলেন, কাজিপুরের বিভিন্ন চরে প্রায় ১০-১২টি বাথান রয়েছে। প্রতিটি বাথানে ২৫ থেকে ৩০টি গরু ও দেড় থেকে ২শ মহিষ আছে। এসকল বাথানগুলো শীতের আগমনের শুরুতেই এই এলাকায় আসে। এ সময়ের মধ্যে গরু/ মহিষের খাদ্যের জন্য ঘাস এক থেকে দেড় লাখ টাকায় স্থানীয় জমির মালিকদের থেকে চর ইজারা নেওয়া হয়। আয় হিসেবে প্রতিটি বাথান থেকে প্রতিদিন ১৭০ থেকে ১৮০ লিটার দুধ সংগ্রহ করা হয়। যা ৮০ টাকা লিটার দরে বিক্রয় করা হয়।
গরু ও মহিষ এর রাখাল হাবিব বলেন, আমার বাথানে ৫০ টি মহিষ রয়েছে। আমরা অনেকে একসাথে এসে এখানে মহিষ ও গরু গুলো খাওয়াই। তিনি আরো বলেন, আমাদের এলাকায় ঘাস কম থাকায় এখানে এসেছি, প্রায় ছয় মাস যাবৎ অবস্থান করব।
আরেক রাখাল আব্দুল আজিজ বলেন, এখানে নদী নিকটে হওয়ায় এবং সবুজ ঘাস বেশি হওয়ার কারনে খামার পরিচালনা করতে খুব সহজ হয়। স্থানীয় লোকজনদের আমরা বিভিন্ন সহয়োগিতা পাই।
শাহজাদপুরের পেতাজিয়া এলাকায় খামারী মোমতাজ উদ্দিন বলেন, গত এক সপ্তাহ হলো গবাদি পশু নিয়ে খামারে এসেছি । বাথানের কাঁচা ঘাস খেয়ে দুধের উৎপাদন বাড়তে শুরু করেছে । আমার খামারে শতাধিক পশু রয়েছে । আগে প্রতিদিন দুই বেলা মিলে ৭ মন দুধ উৎপাদন হতো বর্তমানে বাথানে আনার পর ১ মন দুধ বেড়ে ৮ মন হচ্ছে । আরো দুধ বাড়বে বলে তিনি জানান ।
শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বেলাল হোসেন জানান, ইতিমধ্যেই খামারীরা গবাদি পশু বাথানে নেয়া শুরু করেছে। এত করে তাদের পশুর দানাদার খাবারে খরচ কমে যাবে। তাছাড়া কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর ফলে দুধের উৎপাদন বাড়বে। পাশপাশি পশু গুলি রোগবালাইও কম হবে। ইতিমধ্যেই আমরা বাথান গুলিতে গলা ফুলা রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন দিয়ে চলেছি। এছাড়া আমাদের মোবাইল নম্বর দেয়া আছে জরুরী প্রয়োজনে আমাদের সাখে যোগাযোগ করলে সহায়তা দেয়া হবে ।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ওমর ফারুক জানান, প্রতি বছরই ন্যায় এবারও সিরাজগঞ্জে যমুনা চরে বিভিন্ন জেলা থেকে বেশ কিছু বাথানীরা গবাদি পশু নিয়ে এসেছে। চরাঞ্চলে গজিয়ে উঠা সবুজ ঘাস খাওয়ানোর জন্য প্রতিটি বাথান থেকে বাথানিরা দুধ সংগ্রহের পরিমান বেড়ে গেছে। এছাড়া শাহজাদপুরে স্থানীয খামারীরা গবাদি পশুনিয়ে রেশমবাড়ি পোতাজিয়া বাথানে এসেছে। কাঁচা ঘাস ফলে বাথানিরা অনেকটাই লাভবান হচ্ছে। তিনি জানান পুরো শীতকালই গরু গুলি বাথানে থাকবে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আসা বাথান গুলি গরু মহিষকে রোগ প্রতিরোধে যাবতীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
অপরাধ ও দুর্নীতি: নবীগঞ্জে তিন মাস পর অপহৃত স্কুলছাত্রী উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১