মাতৃত্বকালীন সময়ে কোলাহল মুখর পরিবেশ এড়িয়ে নিবিড় পরিচর্যায় কোয়ারান্টাইনে রেখে সেবা দেয়ার সুফল হিসেবে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের প্রাণীকুলে বেড়েছে ব্যাপক প্রজনন সক্ষমতা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বারোমাসে সাফারি পার্কের শতাধিক প্রাণীর সংসারে চমকে উঠার মতো বংশ বিস্তার ঘটেছে। এরইমধ্যে পার্কের অন্যতম আকর্ষণ জেব্রা, জলহস্তী ও নীলগাই পরিবারে এসেছে চার নতুন শাবক।
একদিকে অবকাঠামোগত উন্নয়নে অনিন্দ্য সুন্দর পরিবেশে বদলে যাচ্ছে সাফারি পার্কের পর্যটন স্পটসমূহ। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের নিবিড় তদারকিতে কোলাহলমুক্ত পরিবেশে রাখা প্রাণীকুলে এসেছে একের পর এক নতুন অতিথি। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তেমন রোগবালাই না থাকায় পার্কের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর সংসারে সুস্থভাবে শতাধিক নতুন অতিথি (শাবক) জন্ম নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পার্কের রেঞ্জ অফিসার মো. মনজুরুল আলম।
সাফারি পার্কের রেঞ্জ অফিসার মো. মনজুরুল আলম বলেন, গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সাফারি পার্কের বিভিন্ন অবকাঠামোত উন্নয়ন কাজ এখনও চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় সাফারি পার্কের নির্ধারিত বেষ্টনীর প্রাণী ছাড়া সন্তানসম্ভবা বেশিরভাগ প্রাণীকে মাতৃত্বকালীন সময়ে কোলাহলমুক্ত পরিবেশ এড়িয়ে নিবিড় পরিচর্যায় কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়। ফলে এ প্রচেষ্টার সুফল হিসেবে এক বছরে সাফারি পার্কের প্রাণীকুলে এসেছে একের পর নতুন অতিথি।
জন্ম নেয়া প্রাণীর মধ্যে রয়েছে চার গয়াল শাবক। আগে থেকে আছে ২২টি গয়াল। নিরীহ তৃণভোজী প্রাণী গয়ালের প্রধান খাবার ঘাস। গয়াল আট মাসে প্রজননে সক্ষম। পার্কে আগে থেকে নীলগাই আছে দুটি। এ বছর জন্ম দিয়েছে একটি পুরুষ শাবক। বয়স দুইমাস অতিক্রম করেছে। একইভাবে সাফারি পার্কে আগে থেকে জেব্রা আছে ৬টি, নতুন জন্ম হয়েছে দুটি। এখন জেব্রা পরিবারে সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আটে। এই প্রাণীকে দিনে একবেলা ভূষি ও দু’বেলা সবজি খেতে দিতে হয়। জলহস্তী আছে ১০টি। এ বছর জন্ম দিয়েছে একটি শাবক। তিনমাস বয়সী শাবকটি এখন মায়ের সঙ্গে বেষ্টনীতে ঘুরেফিরে বেড়ে উঠছে। তৃণভোজী প্রাণী জলহস্তীর খাদ্য হিসেবে দিতে হয় ঘাস ও সবজি।
সাফারি পার্কের ৫৫ হেক্টর জমির বিশাল বেষ্টনীতে আগে থেকে আছে তিনটি ওয়াইল্ডবিস্ট। তার মধ্যে একটি স্ত্রী লিঙ্গের। এ বছর তাদের সংসারে এসেছে দুটি শাবক। পার্কের বেষ্টনীতে আগে থেকে আছে ৪৩টি চিত্রা হরিণ ও ৬টি মায়া হরিণ। এ বছর নতুন এসেছে ৬টি চিত্রা হরিণ শাবক। ইতোমধ্যে এসব হরিণ শাবকের বয়স চারমাস পেরিয়েছে। পাশাপাশি বন মোরগ, ময়ূর, কালিমপাখি এ বছরও ব্যাপক প্রজনন সক্ষমতা দেখিয়েছে।
সাফারি পার্কের রেঞ্জ অফিসার মনজুরুল আলম বলেন, ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে এ বছর সুদূর আফ্রিকা থেকে কার্গো বিমানে করে আনা হয়েছে তিনটি বাঘ। এই তিনটি বাঘের বয়স এখন ১৫-১৮ মাস। টানা ২১ দিন নিবিড় পরিচর্যায় কোয়ারান্টাইনে পর্যবেক্ষণে রাখার পর ইতোমধ্যে বাঘগুলোকে বেষ্টনীতে অবমুক্ত করা হয়েছে।
পার্কে আগে থেকে চারটি বাঘ রয়েছে, যার মধ্যে দুটি পুরুষ ও দুটি নারী বাঘ। নতুন করে সংগ্রহ করা তিনটির মধ্যে রয়েছে দুটি নারী ও একটি পুরুষ বাঘ। এখন ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে মোট বাঘের সংখ্যা দাঁড়ালো সাতটি।
এছাড়াও পার্কের বেষ্টনীতে মিঠাপানির কুমির আছে ১৯টি ও নোনা পানির কুমির আছে ১১টি। কুমিরগুলোকে সপ্তাহে একবার খাবার দেয়া হয়। ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে আগে থেকে রয়েছে তিনটি সিংহ, প্রশিক্ষতি একাধিক হাতি, ভাল্লুক, বিপুল পরিমাণ বানর, অজগর সাপ, লামচিতা, শকুন, ধনেশ, বন গরু, কচ্ছপ, পাখির মধ্যে- শকুন, রাজ ধনেশ, ইগল, সাদা বক, রঙ্গিলা বক, সারস, কাস্তে চরা, মথুরা, নিশিবক, কানিবকসহ নানা ধরনের দেশি-বিদেশি প্রাণী রয়েছে। এসবের মধ্যে অনেক প্রজাতির প্রাণী বর্তমানে বাংলাদেশের বনাঞ্চল থেকে বিপন্ন বা বিলুপ্তির পথে রয়েছে।
সারাদেশ: যশোরে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
অপরাধ ও দুর্নীতি: লক্ষ্মীপুরে ঘরে ঢুকে বৃদ্ধাকে কুপিয়ে হত্যা