image

পাঁচবিবিতে পানির মিটার চুরির হিড়িক, আতঙ্কে পৌরবাসী

রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, জয়পুরহাট

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌরসভার সরবরাহকৃত বিশুদ্ধ পানির মিটার চুরির ঘটনায় জনজীবণ অতিষ্ঠ। পাঁচবিবি উপজেলার পৌর শহরের বিভিন্ন মহল্লা থেকে প্রতিদিন চুরি হচ্ছে পানির মিটার। কিছুতেই যেন থামছে না না এই চুরি। অভিযোগ করেও মিলছে না কোন সমাধান। গেল দেড় মাসে পৌরসভার বিভিন্ন মহল্লা থেকে চুরি হয়েছে প্রায় ৪’শ মিটার। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছেন, চুরি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করা হয়েছে। কিন্তু চুরি রোধে প্রশাসন থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় তা বন্ধ করা যাচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পৌরসভায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২০২২ সালে এই উপজেলা পৌরসভার ছোট যমুনা নদীর তীরে ৬ লাখ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন পানির ট্যাংক নির্মাণ করেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। পরে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পৌর এলাকার বিভিন্ন মহলার বাসা-বাড়ি ও দোকানে বিশুদ্ধ এবং নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ শুরূ করেন পৌর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পে পানির মিটারের দাম সাড়ে ৬ হাজার টাকার বেশি হলেও রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে গ্রাহকদের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা দাম নিয়ে বাড়ি বাড়ি মিটার স্থাপন করেন পৌর কর্তৃপক্ষ। আর রিডিং নেওয়ার সুবিধার্থে মিটারগুলি গ্রাহকদের বাড়ির বাহিরে স্থাপন করে পানির সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর ৫ আগস্ট-২০২৪ এর পর থেকে মিটার চুরি শুরূ হয় যা বর্তমানে ব্যাপক আকার ধারন করেছে। বিশেষ করে গত অক্টোবর মাস থেকে চুরির ব্যাপকতা বেড়ে এ পর্যন্ত চুরি হয়েছে প্রায় ৪শ’র অধিক মিটার ।

এখন প্রতি রাতেই মিটার চুরির যেন নিত্য নৈমিত্তি ঘটনা। তবে চুরি যাওয়ার পর পৌরসভা থেকে ওইসব বাড়ির পানির লাইন সরাসরি সংযোগ দিয়ে পানি সরবরাহ অব্যাহত রেখেছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। মিটার না থাকায় তাদের কাছ থেকে পানির মিনিমাম বিল ১০০ টাকা নেওয়া হলেও রাজস্ব হারাচ্ছে পৌরসভা। কারণ মিটার থাকলে পানির বিল অনেক বেশি হতো। কিন্তু চুরির ফলে লোকসান মেনেই পানি সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ। উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে নিরাপদ পানি সরবরাহে পাঁচবিবি পৌরসভার বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানে স্থাপন করা হয় ২ হাজার ৬১৫টি পানির এই মিটার।

পৌর এলাকার দমদমা মহলার গ্রাহক জানান, মিটারের রিডিং সহজে নেওয়ার জন্য পৌরসভার লোকজন বাড়ির বাহিরে মিটার স্থাপন করেন। কিন্তু কিছুদিন পরই তা চুরি হয়ে যায়। পৌরসভায় অভিযোগ দিলে তারা থানায় জিডি করতে বলেন, আমরা জিডিও করেছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি।

পৌরর মালঞ্চা মহল্লার গ্রাহক আব্দুল হান্নান জানান, মিটারে কোনো বৈদ্যুতিক লাইন না থাকায় খুব সহজেই চোরেরা একের পর এক মিটার চুরি করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।

পৌর এলাকার নারায়ণপাড়া মহল্লার আর এক গ্রাহক এনামুল জানান, মিটার চুরি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও হয়েছে। কিন্তু কেন যেন প্রশাসনের টনক নড়ছে না। মিটার চুরির ঘটনায় আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। বাড়ির গরু ছাগল ও সহায় সম্বল রক্ষায় রাতে নিজেরা ঘুমোতেও পারছি না।

পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও পানি তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা মারুফ আহসান বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাপকহারে পানির মিটার চুরি শুরু হয়েছে পাঁচবিবিতে। বিগত ৩ মাসেই প্রায় ৪’শর ও অধিক মিটার চুরি হয়েছে। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনা হয়েছে। এলাকার চিহ্নিত একাধিক চোরের নাম উলেখ করে থানায় অভিযোগও করা হয়েছে। কিন্তু চুরি বন্ধ হচ্ছে না। বিভিন্ন সূত্র থেকে জেনেছি এই মিটারগুলো চোরেরা ১ থেকে দেড়শ টাকায় বিক্রি করছে। বিভিন্ন ভাঙ্গারির দোকান ও চিহ্নিত চোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই হয়ত চুরি রোধ করা সম্ভব। সেটাতো আমরা করতে পারছি না। চোরদের দৌরাত্বে আমরাও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। প্রতিমাসে আমরা পানি সরবরাহ করেও চোরদের কারণে হাজার হাজার টাকার রাজস্ব হারাচ্ছি।

পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজ মো. রায়হান বলেন, সবেমাত্র এ থানায় যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আমি এ মুহূর্তে কিছুই বলতে পারছি না। তবে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» যশোরে বিধবা বোনকে কুপ্রস্তাবের প্রতিবাদ করায় ভাই খুন, দু’জন আটক

সম্প্রতি