নোয়াখালীতে জেলের জালে ধরা পড়েছে নিষিদ্ধ প্রজাতির ১০ মণ ওজনের (৪০০ কেজি) বিরল শাপলা পাতা মাছ। ১ লাখ ৩১ হাজার টাকায় মাছটি বিক্রি করা হয়। বিশাল আকারের এই সামুদ্রিক প্রাণীটি ঘীরে স্থানীয় জেলে, ব্যবসায়ী ও কৌতূহলী মানুষের মধ্যে বর্তমানে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নিষিদ্ধ প্রজাতির এই মাছ ধরা ও বিক্রির ঘটনায় এলাকায় তৈরি হয় নানা আলোচনা। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের দানারদোল মাছ বাজারে মাছটি নিলামে তোলা হয়। আইন অনুযায়ী এ মাছ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও শেষ পর্যন্ত স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী খবির উদ্দিন ব্যাপারী ১ লাখ ৩১ হাজার টাকায় মাছটি ক্রয় করনে। গত বুধবার দিবাগত রাতে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার মেঘনার মোহনায় এ মাছটি ধরা পড়ে। জানা যায়, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মেঘনা নদীর মোহনায় সাগরের গ্যাসকূপের কাছে জাল ফেলেছিলেন স্থানীয় জেলে কামাল মাঝি । ওই রাতে নিয়মিত মাছ ধরার কাজ শেষে ফজরের আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করেন তারা। ভোরে জাল টানতে গিয়ে মাঝিদের মনে হয় জালে হয়তো অনেক মাছ উঠে এসেছে। কিšু‘ কিছুক্ষণ পরই তারা বুঝতে পারেন জালের ওজন অস্বাভাবকি ভারি, এটি কোনো সাধারণ মাছ নয়। বোটে থাকা ১৫ জন মাঝি-মাল্লা মিলে জাল টানার চেষ্টা করেও সফল হতে না পেরে পাশের একটি নৌকার জেলেদের সহযোগিতা নেন। দুই নৌকার প্রায় ২৪ জন মানুষের চেষ্টায় অবশেষে উত্তোলন করা হয় বিশালদেহী এ শাপলা পাতা মাছটি।
পরে মাছটি নৌকায় করে নিয়ে আসা হয় দানারদোল নামক মাছ ঘাটে। বিরল মাছটি ধরার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে জেলে কামাল মাঝি আবেগ-আপ্লুত হয়ে বলেন, অনেক দিন ধরেই ধার-দেনা করে নৌকা ও জাল নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছি। বোটের সবাই পরিশ্রম করেছে, তাই মাঝি-মাল্লাদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে দিতে পেরেছি। তবে ভালো দামের ব্যবসায়ী ক্রেতা না থাকায় প্রত্যাশার তুলনায় দাম কম পেয়েছি। মাছ ক্রেতা খবির উদ্দিন ব্যাপারী বলেন, বিরল সামুদ্রিক প্রাণীটি ধরা পড়ায় এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। মোকামে শাপলা পাতা মাছের ভালো চাহিদা থাকে। তাই বেশি দামে বিক্রির আশায় মাছটি কিনেছি।
সব মিলিয়ে হয়তো ২০ হাজার টাকা লাভ হতে পারে। এ ঘটনায় আইনগত বিষয়টি পরিষ্কার করে হাতিয়া উপজেলা মৎস্য র্কমর্কতা (অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব) মো. ফয়জুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী শাপলা পাতা মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়,পরিবহণ ও সংরক্ষন সর্ম্পূণ নিষিদ্ধ। মাছটি বিপন্ন প্রজাতির অর্ন্তভুক্ত। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র রক্ষায় এদের অস্তিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। আইন ভঙ্গ করলে সাজার বিধানও রয়েছে । তিনি আরও জানান, অনেক সময় জেলেরা আইন সর্ম্পকে অবগত না থাকায় অনিচ্ছাকৃত ভাবে এমন ঘটনা ঘটে। এজন্য সচেতনতা বাড়াতে আমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।