image
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

কেরুজ চিনিকলে শ্রমিক নিয়োগে অনিয়ম প্রমাণিত

রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার ঐতিহ্যবাহী রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান কেরুজ চিনিকলে ১০৪ জন মরসুমি শ্রমিককে স্থায়ী করার ঘটনাটি শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের অনিয়ম ও ঘুষ-বাণিজ্যের ঘটনায় রূপ নিয়েছে। দীর্ঘ অনুসন্ধান, আদালতের হস্তক্ষেপ এবং শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের একাধিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনসহ পাচ মহাব্যবস্থাপক ও মোট ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এক যুগের বেশি সময় পর ২০২৩ সালের ১৫ মে কেরুজ চিনিকলে হঠাৎ করে ১০৪ জন মরসুমি শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। শুরু থেকেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে কারখানার ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। অভিযোগ ওঠে, সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে গোপন প্রক্রিয়ায় এবং অস্বাভাবিক তড়িঘড়ি করে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে, যার পেছনে ছিল মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেন।

সূত্র জানায়, স্থায়ী জনবলের ঘাটতির কথা উল্লেখ করে ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনে পাঠায়। পরবর্তীতে ২৫ মার্চ করপোরেশন শূন্য পদ পূরণের নির্দেশনা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন ২ এপ্রিল পাঁচ সদস্যের একটি নিয়োগ কমিটি গঠন করে স্থায়ীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।

তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি কোনো জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ না করে শুধু মিলের নোটিশ বোর্ডে টানানো হয়, যা বিদ্যমান নিয়োগ বিধিমালার স্পষ্ট ব্যত্যয় বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

২৪ এপ্রিল আবেদনকারীদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেন সদর দপ্তরের প্রতিনিধি সাইফুল আলম। এরপর ১৩ ও ১৪ মে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ১৪০ জন মৌসুমি শ্রমিক-কর্মচারী অংশ নেন। পরীক্ষার পরদিন, অর্থাৎ ১৫ মে ১০৪ জনকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অথচ ওই একই দিনে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের তৎকালীন সচিব চৌধুরী রুহুল আমিন কায়ছার কেরুজ চিনিকলসহ দেশের সব চিনিকলে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার লিখিত নির্দেশনা জারি করেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই নির্দেশ উপেক্ষা করে কেরুজ চিনিকলের এমডির স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র দ্রুত শ্রমিকদের হাতে তুলে দিয়ে কৌশলে তাদের যোগদান করানো হয়।

এদিকে নিয়োগের পরপরই অভিযোগ ওঠে, স্থায়ীকরণের জন্য শ্রমিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনায় আসে, এই অর্থের বড় অংশ পাচজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে এবং তৎকালীন স্বৈরাচার সরকারের বিতর্কিত সংসদ সদস্য হাজী আলী আজগর টগর এর সাথে জড়িত ছিলেন।

এদিকে স্থায়ীকরণে মুক্তিযোদ্ধা কোটা মানা হয়নি, এ অভিযোগে কারখানার মৌসুমি ফিল্টার হেলপার ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বাবুল আকতার তৎকালীন এমডি মোশারফ হোসেনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। একই সময়ে মৌসুমি সিনিয়র ক্রয় করণিক মহিদুল ইসলাম শিল্প মন্ত্রণালয় ও করপোরেশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি আদালতে গড়ালে হাইকোর্টের আদেশে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন পৃথকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে। দুটি কমিটি পাচ দফায় কেরুজ চিনিকলে সরেজমিন তদন্ত চালায়। সব প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে করপোরেশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

গত ১০ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রশিদুল হাসানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অসদাচরণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

সে হিসেবে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে যাদেরকে তারা হলেন সাবেক এমডি মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, সাবেক এডিএম ইউসুফ আলী, সদর দপ্তরের তৎকালীন প্রতিনিধি ও বর্তমানে কুষ্টিয়া চিনিকলের এডিএম সাইফুল আলম, কেরুজ চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) আব্দুছ ছাত্তার, মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) সুমন সাহা, মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) আশরাফুল আলম ভূঁইয়া, মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারি) রাজিবুল হাসান, পরিবহন বিভাগের প্রকৌশলী আবু সাঈদ, খামার ব্যবস্থাপক সুমন কুমার সাহা এবং প্রশাসন বিভাগের আলআমিন।

এ বিষয়ে কেরু এন্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বিক হাসান জানান, সদর দপ্তরের চিঠির আলোকে অভিযুক্ত ওই দশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» যশোরে বিধবা বোনকে কুপ্রস্তাবের প্রতিবাদ করায় ভাই খুন, দু’জন আটক

সম্প্রতি