পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ১৫টি চরাঞ্চলসহ ৭টি ইউনিয়নের প্রানী সম্পদ উন্নয়নে গরু-মহিষ লালন পালনের পরিমান বেড়ে গেছে। উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা গরু ও মহিষ পালন করে তারা বাড়তি আয়ের চেষ্টা করছে। ব্যাংক থেকে কোন লোন গ্রহন না করেই কৃষকরা বাড়তি আয়ের পথ তৈরি করে সংসারের দারিদ্রতা দূর করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অবহেলিত ও উপেক্ষিত জনপদ দশমিনা উপজেলার চরাঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকদের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে নতুন সাফল্যের মাত্রা যোগ হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকার পরও চরাঞ্চল প্রধান অত্র উপজেলায় গৃহপালিত প্রানী গরু ও মহিষ পালনে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি।
উপজেলা প্রানী সম্পদ কার্যালয় সূত্র জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ১৫টি ছোট-বড় চরগুলোর মধ্যে চরবাঁশবাড়িয়া, চরফতেমা, চরআজমাইন, লালচর, চরহাদি, চর শাহজালাল, চরবোরহান, চরসামাদ, চরহায়দার, চরবুথাম, চরচঙ্গা, চরঘুনি, পাতারচর অন্যতম। এই সমস্ত চরাঞ্চলে চর জীবিকায়ন প্রকল্পের আওতায় অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসাবে গড়ে তোলা যায়। অথচ শুধুমাত্র পরিকল্পনার অভাবেই চরাঞ্চলগুলো অবহেলায় পড়ে থাকছে। জানা যায়, এসব চর উপজেলার মূল ভূ-খন্ডের চার ভাগের এক ভাগ। উপজেলার ১০ ভাগ অনাবাদি এবং ফসলি জমির শতকরা ৭৫ ভাগ এক ফসলি জমি। এক ফসলি জমি বছরে ৬ মাস উৎপাদনশীল ফসল উৎপাদন হয় অথবা অনাবাদি থেকে যায়। ফলে এলাকার বিশাল একটা অংশ থেকে কোন অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, অত্র উপজেলার রনগোপালদী ও চর বোরহান ইউনিয়নে ২ হাজার ৫০০টি, আলীপুরায় ১ হাজার ৩০০টি, বেতাগী-সানকিপুরে ১ হাজার ১০০টি, বহরমপুরে ১ হাজার ১৫০টি, বাঁশবাড়িয়ায় ১ হাজার ৯০০টি ও সদর ইউনিয়নে ১ হাজার ৯৫০ টি সহ মোট ৫ হাজার ৬২০টি গরু-মহিষ পালন করা হচ্ছে। গৃহপালিত প্রানী গরু-মহিষ পালন করে অভাবী জনগোষ্ঠী ভাগ্য বদলের সুযোগ থাকার পরও সরকারি-বেসরকারি ভাবে কোন উদ্যোগ গ্রহন না করায় কারও ভাগ্যেরই পরিবর্তন হচ্ছে না।
অবহেলিত ও উপেক্ষিত জনপদ হিসাবে খ্যাত জেলার দশমিনা উপজেলার ভাগ্য বঞ্চিত অভাবী মানুষেরা কৃষির পাশাপাশি গরু ও মহিষের খামারের মাধ্যমে আজ স¦াবলম্বী হয়ে উঠার চেষ্টা করছে। এর ফলে পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। এছাড়া অভাবী পরিবার গুলোতে জীবনযাত্রার মানও পরিবর্তন হচ্ছে। জানা যায়, একটি মহিষ সাধারনভাবে গৃহপালিত গরুর দ্বিগুন দুধ ও দেড় গুন মাংশ উৎপাদন করতে সক্ষম। ফলে প্রতি বছর মহিষ থেকে ১০ লক্ষ ৫০ হাজার ২০০ লিটার দুধ ও ৭ লক্ষ ৪০ হাজার ৯০০ কেজি মাংশ উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমানে অভাবকে দূর করার জন্য গৃহপালিত প্রানী লালন-পালন করে চর এলাকার মানুষ বাড়তি আয় করার চেষ্টা করছে। সরকারি-বেসরকারি ভাবে গরু ও মহিষ পালনের উদ্যোগ নিয়ে উপজেলার চরাঞ্চলগুলোকে চারনভূমি ঘোষনা দিয়ে উন্নত ঘাস চাষাবাদ করলে একদিকে জেলার দুধ ও মাংশের চাহিদা পূরন সহ কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে। সরকারের পক্ষ সহযোগিতা করা হলে কৃষকরা বেশী করে খামার স্থাপন করতে পারবে। এছাড়া ব্যক্তি কেন্দ্রিক ব্যাপক হারে গরু ও মহিষ পালন করলে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরন করা সম্ভব হবে। এছাড়া ব্যাপক হারে গরু ও মহিষের খামার স্থাপন করা হলে অত্র এলাকায় দারিদ্রতার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে।