বরেন্দ্রর শুষ্ক মাটিতে আজ আর শুধু পানির তৃষ্ণা নেই লুকিয়ে আছে মৃত্যুর নীরব ফাঁদ। যে নলকূপ একদিন জীবন বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, অবহেলা আর উদাসীনতায় সেগুলোই হয়ে উঠেছে মৃত্যুকূপ। তানোরের কোয়েলহাট পূর্বপাড়ার সেই সরু, অরক্ষিত গর্ত শুধু দুই বছরের শিশু সাজিদের প্রাণ কেড়ে নেয়নি কেঁপে উঠেছে মানবতার বিবেক, সাজিদের নিথর দেহ আমাদের মনে করিয়ে দেয় জীবন রক্ষার অধিকার কোনো দয়া নয়, এটি সংবিধান স্বীকৃত অধিকার।
রাজশাহীর তানোরে পরিত্যক্ত ও অরক্ষিত অগভীর নলকূপের গর্তে পড়ে দুই বছর বয়সী শিশু সাজিদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে সাজিদের পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়াসহ অরক্ষিত নলকূপ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। রোববার, (১৪ ডিসেম্বর ২০২৫) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মনিরুল ইসলাম মিয়া নোটিশটি পাঠান। লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়- রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় শত শত পরিত্যক্ত ও অরক্ষিত নলকূপ জনসাধারণের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। সম্প্রতি রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে একটি পরিত্যক্ত নলকূপের গর্তে পড়ে শিশু সাজিদের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ও প্রশাসনিক উদাসীনতার স্পষ্ট প্রমাণ। নোটিশে সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ১৫ দিনের মধ্যে একাধিক নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সব পরিত্যক্ত নলকূপ চিহ্নিত করে জরিপ, রাষ্ট্রীয় ব্যয়ে সিল/ভরাট বা স্থায়ীভাবে বন্ধকরণ, অবৈধ নলকূপ খননে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা, নিরাপদ নলকূপ ব্যবস্থাপনায় মানসম্মত কার্যপ্রণালি প্রণয়ন, অননুমোদিত নলকূপ স্থাপনা রোধে কঠোর নজরদারি এবং দায়িত্বে অবহেলাকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে জানানো হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে বিষয়টি জনস্বার্থ মামলা (চওখ) হিসেবে হাইকোর্ট ডিভিশনে দায়ের করা হবে। এ ঘটনায় বিভিন্ন
সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে তানোরসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে অরক্ষিত নলকূপকে ‘মৃত্যুকূপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে শিশুদের জীবন ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরা হয়।