image

মরছে মাছ, কাজ হচ্ছে না ওষুধে

রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)

ময়মনসিংহের ত্রিশালে পাঙ্গাশ মাছের ভয়াবহ মড়কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শতাধিক মৎস্য চাষি। প্রতিদিন বিভিন্ন খামারে ভেসে উঠছে শতশত বিক্রিযোগ্য পাঙ্গাশ মাছ। মাত্র ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে উপজেলার বিভিন্ন ফিসারিতে এ অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি চাষিদের। তাদের অভিযোগ, নানা কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার করেও মাছ মারা কমছে না; বরং দিন দিন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হচ্ছে।

ত্রিশাল মাছ উৎপাদনে সারাদেশে সুপরিচিত। দেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ২২ শতাংশই ময়মনসিংহ জেলায় হয়, যার একটি বড় অংশ আসে ত্রিশাল উপজেলা থেকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ফিসারির পাড়জুড়ে স্তূপ আকারে ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে হাজার হাজার মরা পাঙ্গাশ মাছ। অরক্ষিত এসব মৃত মাছ থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, বাড়ছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি।

ফিসারির পাড়ে জমে থাকা মৃত মাছের স্তুপ যেন একেকটি চাষির স্বপ্নভঙ্গের প্রতীক। শুরুতে কিছু মাছ মাটিচাপা দেয়া হলেও এখন আর সামাল দিতে পারছেন না অনেকেই। ফলে যত্রতত্র পড়ে থাকা মৃত মাছ থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ, ব্যাকটেরিয়া, মশা-মাছি ও পশুপাখির উপদ্রব। এতে পুরো এলাকায় দেখা দিয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি।

চাষিরা জানান, ধার-দেনা করে মাছের খাদ্য কিনে লালন-পালন করেন তারা। হঠাৎ করে মাছ মারা শুরু হওয়ায় দুই দিক থেকেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন- একদিকে মাছ বিক্রি করতে না পারায় ঋণের চাপ, অন্যদিকে খামারে বাড়ছে লোকসান। তাদের অভিযোগ, পরিস্থিতি ভয়াবহ হলেও মৎস্য বিভাগ থেকে তেমন কোনো সহায়তা বা কার্যকর তদারকি নেই।

ত্রিশাল উপজেলার চিকনামনোহর, মঠবাড়ী, অলহরী ও দুর্গাপুর এলাকায় সরেজমিনে একই চিত্র দেখা গেছে। প্রায় প্রতিটি ফিসারিতেই উদ্বেগজনক হারে মাছ মারা যাচ্ছে। মৃত মাছ ফেলে রাখার কারণে এলাকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় চাষিদের মধ্যে চিকনামনোহর গ্রামের নজরুল ইসলাম ম-ল, ইমরান হোসেন, আবু সাঈদ খবীর, শাহাদাত হোসেন, মঠবাড়ী ইউনিয়নের অলহরী দুর্গাপুর এলাকার দেলোয়ার হোসেন, মঠবাড়ীর আবু নোমান রুবেল ও হেলাল উদ্দিনসহ শতাধিক চাষির খামারে লাখ লাখ টাকার মাছ মারা গেছে। কেউ কেউ জানান, প্রতিদিন কয়েকশ’ মাছ উঠছে; আবার কারও হিসাবে মাত্র দশ দিনে প্রায় ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে।

অলহরী দুর্গাপুর এলাকার চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘কী কারণে মাছ মরছে বুঝতে পারছি না। দেড় লাখ টাকার মতো ওষুধ ব্যবহার করেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সকালে পুকুরে নামলেই শতশত মাছ ভেসে ওঠে। এই ক্ষতি কীভাবে সামাল দেব, বুঝতে পারছি না।’

মঠবাড়ীর চাষি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার ফিশারিতে প্রতিদিন ২০০-৩০০টি মাছ মরছে। মৎস্য অফিসের কেউ কখনো খোঁজখবর নেয় না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা সবাই পথে বসবো।’

স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘মরা মাছ সঠিকভাবে মাটিচাপা না দিলে রোগজীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। এতে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে ত্রিশাল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সামসুজ্জামান মাসুম বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তবে মাছ মৃত্যুর বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

পানির গুণগত মানের সমস্যা, দূষণ কিংবা ঋতু পরিবর্তনের কারণেও এমনটি হতে পারে। দ্রুত মাঠপর্যায়ে তদন্ত শুরু হবে। চাষিদের আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি। অনেক সময় দেখা যায়, চাষিরা আমাদের কাছে না এসে নন-ফিসারিজ গ্র্যাজুয়েটদের পরামর্শ নেন। এতে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় মাছ মারা যায়।’

চাষিদের দাবি- দ্রুত সরকারি তদারকি, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। নইলে ত্রিশালের বৃহৎ মৎস্য খাত বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» যশোরে বিধবা বোনকে কুপ্রস্তাবের প্রতিবাদ করায় ভাই খুন, দু’জন আটক

সম্প্রতি