image
বেনাপোল: পণ্য আমদানি নেই, অলস পড়ে আছে মালবাহী ট্রেন -সংবাদ

বেনাপোল রেলপথে পণ্য আমদানিতে ধস, ছয় মাসে আসেনি কোনো পণ্য

রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
জামাল হোসেন, বেনাপোল

বাংলাদেশ ও ভারতে বাণিজ্যের প্রধান প্রবেশদ্বার বেনাপোল রেলপথে পণ্য আমদানিতে নেমেছে নজিরবিহীন ধস। বেনাপোল পেট্রাপোল রেল স্টেশন দিয়ে কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রীর আমদানি। গত ছয় মাস ধরে রেলপথে কোনো খাদ্যপণ্য কিংবা অন্য পণ্য আসেনি। ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা ও উৎকণ্ঠা। বাড়ছে অনিশ্চয়তা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে এ রেলরুটে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় ২৯ হাজার মেট্রিক টন, যা গত দশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পতন। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও রেলপথে আমদানি বাড়বে এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীদের মতে, ভারতীয় রেলওয়ের রেক সরবরাহ সংকট, বেনাপোল স্টেশনের দুর্বল অবকাঠামো, আধুনিক যন্ত্রাংশের অভাব, শ্রমিক সংকট এবং কাস্টমস, রেল ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতাই এ ধসের প্রধান কারণ।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলপথে আমদানির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা নেমে এসেছে ৭৮ হাজার ২০০ মেট্রিক টনে। এ পতনকে চরম উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বর্তমানে ক্লিংকার, স্টোন চিপ, কয়লা, খাদ্যশস্য, সিমেন্টের কাঁচামাল, তুলা, ট্রাক্টর এবং গার্মেন্টস উপকরণ রেলরুটে আমদানির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রায় ২৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি কম হয়েছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, আগে প্রতি সপ্তাহে চার থেকে ছয়টি রেক পাওয়া যেত। এখন কোনো কোনো সপ্তাহে একটি রেকও আসে না। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে সড়কপথে ঝুঁকতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভারতীয় রেলের রেক সময়মতো না আসাই আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ। দিনের পর দিন পণ্য আটকে থাকে, লোকসান গুনতে হয়।

একই অভিযোগ করেন আমদানিকারক মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ১২ বছর ধরে রেলরুটে পণ্য আনছি। রেলরুটে বাল্ক কার্গো তুলনামূলক কম খরচে আনার সুবিধা থাকলেও আমরা তা পাচ্ছি না। বেনাপোল রেলস্টেশনের অবকাঠামো পুরোনো, ফর্কলিফট কম এবং শ্রমিক সংকট লেগেই থাকে। ফলে একটি রেক খালাস করতেই পুরো দিন শেষ হয়ে যায়। ভারতের পেট্রাপোলে যেখানে দুই ঘণ্টায় একটি রেক খালাস হয়, সেখানে বেনাপোলে লাগে আট থেকে দশ ঘণ্টা। এতে ব্যবসার হিসাব মেলে না।

বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রেলপথে পণ্য আমদানিতে স্বল্প সময়ে কম খরচে লাভবান হওয়া যেত। সরকারও পেতো উল্লেখযোগ্য রাজস্ব। এই দুই বন্দর দিয়ে রেলে খাদ্যপণ্য, কাঁচামাল, কটনসহ বিভিন্ন পণ্য ও ট্রাক্টর আমদানি হতো। তবে ভিসা জটিলতাসহ দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে গত ছয় মাস ধরে বেনাপোল–পেট্রাপোল রেল স্টেশন দিয়ে কোনো খাদ্যপণ্য বা কাঁচামাল আসেনি। ফলে সরকার, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ীসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, রেলপথ দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা। এ রুটে আমদানি কমে গেলে পরিবহন খরচ বাড়বে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে বাজারে পণ্যের দামের ওপর। এ অবস্থায় ভারতীয় রেলের সঙ্গে স্থায়ী রেক সরবরাহ চুক্তি, আধুনিক রেল টার্মিনাল নির্মাণ, দ্রুত খালাস ব্যবস্থা এবং কাস্টমস, রেল ও বন্দর-এই তিন পক্ষের সমন্বয় জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

বেনাপোল রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, গত ছয় মাসে ট্রেনে চাল, গম, ভুট্টা, মরিচ, পেঁয়াজ, আলুসহ কোনো খাদ্যপণ্য আসেনি। রেক সংকট আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ভারতীয় রেলওয়ে নিয়মিত রেক সরবরাহ না করায় আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। তবে আগামীতে সমস্যার সমাধান হলে রেলপথে পণ্য আমদানি বাড়বে বলে আশা করছে রেল কর্তৃপক্ষ।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামিম হোসেন বলেন, রেলপথে আমদানি কমে যাওয়া আমাদের জন্যও উদ্বেগজনক। রেলপথ দ্রুত, নিরাপদ এবং বাল্ক পরিবহনে লাভজনক হওয়ার কথা। কিন্তু রেলের সমস্যা, ইয়ার্ড সংকট এবং ভারতীয় রেলওয়ের অনিয়মিত রেক সরবরাহের কারণে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। খালাসের সময় কমানো এবং কাগজপত্রের জটিলতা দূর করতে রেল বিভাগ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করা হচ্ছে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» যশোরে বিধবা বোনকে কুপ্রস্তাবের প্রতিবাদ করায় ভাই খুন, দু’জন আটক

সম্প্রতি