ডিমলা কৃষি দপ্তরের সহায়তায় একাদশী রানি এখন স্বাবলম্বী

সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, ডিমলা (নীলফামারী)

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডিমলা সদর ইউনিয়নের আদর্শপাড়া (হাইস্কুলপাড়া) গ্রামের তরুণী একাদশী রানি আজ স্বাবলম্বিতার এক অনুপ্রেরণামূলক নাম। কৃষি দপ্তরের পরিকল্পিত সহায়তা, নিজ উদ্যোগ ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে হতদরিদ্রতার গ-ি পেরিয়ে তিনি আজ একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। ২৩ বছর বয়সী একাদশী রানীর বিয়ে হয় চার বছর আগে। তাদের সংসারে রয়েছে দুই বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান। স্বামী দ্বিপক রায় একজন ক্ষুদ্র কৃষক। এক সময় একমাত্র সম্বল ছিল একটি ভিটেবাড়ি। নিয়মিত আয়ের কোনো উৎস না থাকায় পরিবারটিকে দিন কাটাতে হতো চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে অনেক সময় অনাহার-অর্ধাহারও ছিল নিত্যসঙ্গী। এই বাস্তবতায় ডিমলা উপজেলা কৃষি দপ্তর মাটির প্রাকৃতিক উর্বরতা রক্ষা এবং রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি এলাকা ভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মসূচির আওতায় জৈবসার বা ভার্মি কম্পোস্ট (কেচো সার) উৎপাদনে আগ্রহী, পরিশ্রমী ও সম্ভাবনাময় হতদরিদ্র পরিবার হিসেবে নির্বাচিত হয় দ্বিপক রায় ও একাদশী রানীর পরিবার।

পরবর্তীতে কৃষি দপ্তরের কারিগরি পরামর্শ, প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ সহায়তায় তাদের বসতভিটায় একটি কমিউনিটি বেসড ভার্মিকম্পোস্ট চেম্বার স্থাপন করে দেওয়া হয়। কেচো সার উৎপাদনের আধুনিক পদ্ধতি হাতে কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শেখানো হয় একাদশী রানিকে। নিয়মিত তদারকি ও পরামর্শের ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়ায় দক্ষতা অর্জন করেন।

বর্তমানে একাদশী ও তার স্বামী নিয়মিত কেচো সার উৎপাদন করছেন এবং কৃষি দপ্তরের সহযোগিতায় সেই সার স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। এতে পরিবারটির মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এই আয়ের মাধ্যমে তারা চারটি গাভি কিনেছেন এবং প্রায় দুই লাখ টাকা দিয়ে এক বিঘা আবাদি জমি বন্দক নিয়েছেন। জীবনে প্রথমবারের মতো আর্থিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার স্বাদ পাচ্ছে পরিবারটি। একাদশী রানি বলেন, একসময় সংসার চালানোই ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ। এখন নিজের হাতে তৈরি সারের আয়েই পরিবার চলে। সন্তানের পড়াশোনা, ভালো খাবার—সবকিছু নিয়েই এখন স্বপ্ন দেখি। তার উদ্যোম, সাহস ও সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছরে বেগম রোকেয়া দিবসে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচজন ‘জয়িতা’র একজন হিসেবে একাদশী রানী ক্রেস্ট ও সনদপত্র লাভ করেন যা তার জীবনের এক বড় অর্জন।

দ্বিপক রায় জানান, কৃষি দপ্তরের এই সহায়তা না পেলে আমরা কোনোদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম না। সামনে আমরা এই প্রকল্পের পরিধি আরও বাড়াতে চাই। আয় বাড়লে একটি ভালো পাকা বাড়ি করার ইচ্ছা আছে। একাদশী ও দ্বিপক দম্পতির এই সাফল্য প্রমাণ করে সঠিক পরিকল্পনা, সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ এবং কার্যকর সরকারি সহায়তা পেলে হতদরিদ্র পরিবারও স্বাবলম্বী হতে পারে। একই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষা, মাটির উর্বরতা সংরক্ষণ এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থার বিকাশে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানোর ক্ষেত্রেও তাদের উদ্যোগ হয়ে উঠেছে গ্রামীণ উন্নয়নের এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি