image
বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম : নানান প্রজাতির অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকে পুরো প্রকৃতি -সংবাদ

বোয়ালখালীতে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির আগমন

মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম)

শীতের সময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নানান প্রজাতির অতিথি পাখি আসে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে। এসব অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকে পুরো প্রকৃতি।

জানা গেছে, প্রকৃতি যখন পাখিদের জীবনধারণের জন্য অনুকূলে থাকে না, তখন পাখিগুলো অপেক্ষাকৃত কম শীত ও অনুকূল প্রকৃতির দেশে অতিথি হয়ে আসে। নাতিশীতোষ্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবছর এসব অতিথি পাখির আগমন ঘটে। তখন এ সময়টা হয়ে ওঠে অতিথি পাখিদের খাদ্য ও জীবনধারণের নিরাপদ আবাসস্থল। হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আসা পাখিগুলো হয়ে ওঠে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম।

তবে শীতের প্রকোপ কমলে অতিথি পাখিরা আবারো হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ছুটে যায় নিজ জন্মভূমিতে।

গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীর কালুরঘাট এলাকায় ও উপজেলার কধুরখীল এলাকার পার্বতী চরণ দীঘিতে ওড়াউড়ি করতে দেখা গেছে অতিথি পাখির।

তবে আগের চাইতে পাখির সংখ্যা অনেকটা কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

কধুরখীল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রাবন্ধিক বাবুল কান্তি দাশ বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, পাখির সাথে অমানবিক আচরণ ও আবাস্থল ধ্বংসের কারণে অনেক পাখি বিলুপ্তির পথে। আগে মাঠে-ঘাটে, ক্ষেতে-খামারে বিচিত্র ধরণের পাখিদের বিচরণ ছিল। এছাড়াও গ্রামের আনাচে কানাচে ব্যাপক হারে জাতীয় পাখি দোয়েল, টুনটুনি, চিল, পানকৌড়ি, ডাহুক, বক, শালিক, ঘুঘু, বাবুই, কাক, কাঠ ঠোকরা, কোকিল, ডাহুক, ক্যাসমেচি, মাছরাঙা,ও প্যাচাসহ চিরচেনা অনেক পাখি এখন দেখাও যায় না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেছেন, প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে অতিথি পাখির আগমন ঘটে উত্তর মেরু থেকে। পৃথিবীর উত্তর মেরুর দেশ সাইবেরিয়া, ফিলিপস, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, এন্টার্কটিকাসহ অনেক অঞ্চলে তাপমাত্রা যখন মাইনাস শূন্য ডিগ্রিতে নেমে আসে, তখন সেগুলোতে দেখা দেয় খাদ্যাভাব।

খাদ্যের প্রাচুর্যতা দেখা দিয়ে প্রকৃতি যখন পাখিদের জীবনধারণের জন্য অনুকূলে থাকে না, তখন পাখিগুলো খাদ্যের সন্ধানে অনুকূল প্রকৃতির দেশে অতিথি হয়ে আসে।

এরা সাধারণত নিরিবিলি এলাকা বেছে নেয়। তবে খাদ্য সংকট ও উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়ার কারণে ইদানীং অতিথি পাখি আসার হার আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। এর মধ্যে দুটি কারণ হলো- যেসব এলাকায় এসব পাখি আশ্রয় নেয় তার পরিবেশ বিঘিœত হওয়া ও শিকারিদের উৎপাত। পাখি শিকার করা আইনত অপরাধ। এ বিষয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, নির্বিচারে পাখি শিকার চলতে থাকলে অতিথি পাখির আগমন ভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রুমন তালুকদার বলেন, তীব্র শীতের হাত থেকে বাঁচতে ও খাবারের সন্ধানে এ দেশে পাড়ি জমায় পাখিগুলো।

শীত প্রধান দেশ-হিমালয়, সাইবেরিয়া, রাশিয়া, ফিনল্যান্ডসহ বরফাচ্ছন্ন দেশে খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাব দেখা দিলে এসব পাখি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বালী হাঁস, কুস্তি হাঁস, জিরিয়া হাঁস, পাতারি হাঁস, নীলশির, ধূসর বক, জল ময়ূর, ডুবুরি, পানকৌড়ি, গঙ্গা কবুতর, দলপিপি, রাজসরালিসহ বহু জাত রয়েছে।

তবে পাখিগুলো যেভাবেই আসুক বাংলাদেশের মানুষের প্রাণ সঞ্চার করে প্রকৃতির অনিন্দ্য সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। পাখির আবাসস্থল ধ্বংস, খাদ্য সংকটের ফলে দিন দিন পরিযায়ীসহ অতিথি পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি গাছপালা কেটে বন উজাড়ে স্বাভাবিক পরিবেশ হারাচ্ছে পাখিদের । অতিথি পাখিদের রক্ষায় আমাদের আরও সচেতন ও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» আগামী নির্বাচন শুধু ক্ষমতার পালা বদল নয়, বাংলাদেশের আগামী ১শ বছরের রূপরেখা -চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক

সম্প্রতি