image

জয়পুরহাটে খেজুর রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা

বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, জয়পুরহাট

ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ,ঋতুর চক্রের বৈশিষ্ট্যর দিক থেকে এ দেশে সাক-সবজী,ফুল-ফসল,ফলমূল সহ বহুমাত্রিক ক্ষেত ফসল চাষাবাদে ঋতুর চক্রের তারতম্য ঠিক থাকলেও আপাত দৃষ্টিতে বছরে প্রায় ৬ মাস শীত আবার ৬ মাস যেন ঘরমের রেশ থেকেই যায়। উরাঞ্চলের শস্য ভান্ডার খ্যাত সীমান্তের কোলঘেষা ছোট্ট এ জেলা শহর একেবারে শীত প্রবণ নাহলেও শীতের দাপট খুব একটা কম নয়। তাইতো হেমন্তের মাঝরাত আর সকালটাই কনকনে শীতের আগমনীর বার্তা পস্টভাবে জানান দেয় এ যেন হেমন্তের সোনালী ডানায? ভর করে শীত নেমেছে।

চিরাযত গ্রাম বাংলার পৌষ শীতে বাহারী স্বাদের রকমারী পিঠার ধুম। বিখ্যাত কবি বেগম সুফিয়া কামাল পিঠাকে নিয়ে এমন বর্ণনা লিখেছেন পলী মায়ের কোল কবিতায়।আমাদের দেশে শীতে মানেই বাঙালির পিঠা-পুলির উৎসব। শীত মানেই ভাঁপাপিঠা, চিতৈই পিঠা, নারকেলিপিঠা, পিঠাপুলিসহ বাহারীপিঠা আর ক্ষির-পায়েস খাওয়ার ধুম। আর শীতের পিঠা-পুলি: বাঙালির শেকড়ের আদি ঐতিহ্য। শীতের পিঠার গোড়াপত্তন গ্রামে। একটা সময় শীতের পিঠার জন্য শহর থেকে গ্রামে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল। গ্রাম-বাংলার সেই রসাল পিঠা-পায়েস আর পরিবারের সবাই মিলে সে পিঠা খাওয়ার উৎসব রীতি এখন অনেকটাই অম্লান। বাড়ির আঙিনায় মাটিুলার ওপর মাটির হাঁড়িতে পিঠা বানানোর যে দৃশ্য, তা এখন আর সহসা চোখে পড়ে না।

স্রষ্টার অপরূপ সৃষ্টি বাংলাদেশের প্রকৃতি, তাইতো রূপসী বাংলার চিরায?ত রূপ আর বহুমাত্রিক উৎসব-পার্বনের দিক থেকে পিছিয়ে নেই এই জেলার মানুষ। ফলে কুয়াশার চাদর মোড়ানো শীতে পৌষপার্বণ বা পিঠেপার্বণ উপলক্ষে গ্রামের ঘরে ঘরে এখন যেন চলছে খেজুর রসের সুস্বাদু পাটালি গুড়ের পিঠা, পায়েসসহ নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরির ধুম। তাই জয়পুরহাটে খেজুর রস সংগ্রহ এবং তা থেকে সুস্বাদু গুড় তৈরিতে এখন ব্যস্থ্য সময় পার করছেন গাছিরা। জেলার ৫ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২৫-২৬ হাজার খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তৈরী করা হচ্ছে এই পাটালি গুড় । শীতের কুয়াশা ভেজা কাক ডাকা ভোরে রস ভর্তি মাটির হাড়ি গাছ থেকে নামিয়ে বড় বড় টিনের ডোঙ্গায় দীর্ঘ সময় জ্বাল করে পাটালি ও লালিস (ঝোলা গুড়) গুড় তৈরি করেন তারা। গুড়ের গুনগতমান ভালো হওয়ায় দূরদূরান্তথেকে এগুলো কিনতে আসেন সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। আবার অনেকে আসেন খেজুরের রস খেতে। তবে নিপা ভাইরাস সহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে কাঁচা রস না খেয়ে ফুটিয়ে বা গুড় করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন।

জানা গেছে, শীতের শুরুতেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক গাছি খেজুরের রস সংগ্রহ করতে এ জেলায় এসেছেন। জেলার প্রায় ২৫-২৬ হাজার খেজুর গাছ ভাড়া নিয়ে রস সংগ্রহ করছেন তারা। সেই রস থেকেই তৈরি করা হচ্ছে সুস্বাদু খেজুরের পাটালি ও লালি গুড় (ঝোলা গুড়)। মনে হয় যেন দিনে-রাতে এতো টুকুন দম ফেলার সময় নেই তাদের। গাছিরা তীব্র শীত উপেক্ষা করে ভোররাতের মধ্যেই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে টিনের বড় বড় ডোঙ্গায় ৩-৪ ঘণ্টা জ্বাল করেন। এরপর বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া শেষে তৈরি করা হয় এই সুস্বাদু গুড়। ভেজালমুক্ত এই গুড় কিনতে দূরদূরান্ত থেকে সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ভিড় জমান গাছিদের অস্থায়ী বাড়ীর আঙ্গীনায়। আবার অনেকেই আসেন খেজুরের কাঁচা রস খেতে পান করতে)। প্রায় ৪ মাস চলবে রস সংগ্রহের এই মহা কর্মযজ্ঞ। চলতি মৌসুমে এ জেলায় ১৯০-১৯৫ মে, টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়েছেন জেলা কৃষি বিভাগ।

রাজশাহী থেকে জয়পুরহাট সদরের খনজনপুর কুঠিবাড়ী ব্রিজ এলাকায় এসেছেন গাছি আনছার আলী। তিনি বলেন, কার্তিক মাসে আমরা জয়পুরহাটে এসে বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছে হাঁড়ি লাগিয়েছি। আমরা ৫ জন মিলে ৩৫০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। প্রতিদিন ৩০-৩৫ মণ রস পাওয়া যায়। এই রস থেকে গুড় উৎপাদন হয় প্রতিদিন ২-৩ মণ।’ হেলাল উদ্দীন নামে এক গাছি বলেন,‘বিভিন্ন জেলা থেকে গাছিরা এসে জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ঘর করে সেখানে গুড় তৈরি করছি। রাত ৩টায় গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে বের হই। প্রতিকেজি ভালো মানের গুড় বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা। আর সাধারণ মানেরটা প্রতি কেজি ২০০ টাকা। পাশাপাশি খেজুরের রস বিক্রি হচ্ছে ৭০/৮০ এবং ৯০ টাকা কেজি দরে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট-বড় গুড় ব্যবসায়ীরা এসব গুড় পাইকারি দামে কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। বেলআমলা গ্রামের ক্রেতা আলমগীর বলেন, ‘এখানে মানসম্মত গুড় ও খেজুরের রস পাওয়া যায়। এ জন্য এসে গুড় কিনলাম রসও খেলাম।’

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এ.কে.এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় এবার খেজুর গাছের সংখ্যা রয়েছে -২৫-২৬ হাজারের মতো, মৌসুম শেষে গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারন করা হয়েছে ১৯০-১৯৫ মে:টন। শীতের এ মৌসুমে গুড়ের চাহিদা থাকলেও গাছির অভাবে গাছ থেকে প্রয়োজনীয় রস নামানো সম্ভব হচ্ছেনা বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

চলতি মৌসুমে রস সংগ্রহের বিষয়ে সরেজমিন তথ্য এবং গাছিদের দেওয়া তথ্য বলছে বহুবিদ প্রতিকূল পরিবেশের কারনে অনেক গাছিরা পেশা পরিবর্তন করেছে যার কারনে এ মৌসুমে গাছির সংখ্যা কিছুটা কমেছে। এ মৌসুমে জেলায় ২০০ মে: টন গুড় উৎপাদন হবে বলে আমরা (গাছিরা) আশা করছি।

জেলার সচেতন মহলের দাবি, বিভিন্ন জেলা থেকে জয়পুরহাট জেলায় গাছিরা এসে খেজুর রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী করছে,অভিযোগ আছে,অনেক ভোররাতে গাছ থেকে রস নামানোর আগেই রস জ্বাল করার ডোঙ্গায় ‘চিনি গোলায়ে রাখা হয়। ফলে ক্রেতাসাধারণ বেশি দমি দিয়েও আসল খেজুর গুড় পাচ্ছেনা ।এই ভেজাল গুড় তৈরী বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা কৃষি বিভাগের নজরদারী জরুরী বলে মনে করেন তারা।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» শামীম ওসমানের ‘ঘনিষ্ঠ অনুসারী’ ও সাত খুনে দন্ডিত নূর হোসেনর ছোট ভাই গ্রেপ্তার

সম্প্রতি