ঘোড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার আয়ে চলতো হালিমা ও তার পরিবারের জীবিকা। কয়েক বছর ধরে এই ঘোড়াকে কেন্দ্র করেই চলছিল তাদের সংসার। হাটে-বাজারে মালামাল পরিবহন ও গ্রামাঞ্চলে ছোটোখাটো কাজে ঘোড়াটি ভাড়া দেওয়া ও ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে যা আয় হতো তা দিয়ে, নিজের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ মেটাতেন তারা।
গতকাল বুধবার বিকালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নিতাই ইউনিয়নের কেরানীপাড়ায় ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে হালিমার ঘোড়াটি। হালিমা আক্তার নওগাঁর ধামরাই এলাকার ওয়াবদুল ইসলামের মেয়ে।
জানা যায়, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত দুই দিনব্যাপি ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ঘোড়া নিয়ে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আসেন হালিমা আক্তার ও তার বাবা। গত মঙ্গলবার দুপুরে খেলা শুরুর সময়ে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে তার ঘোড়াটি। পরে তারা সেটিকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম দিয়ে রওনা করে বাড়ির উদ্দেশ্য। তবে তারাগঞ্জ বাজারের পথিমধ্যে পৌঁছাতে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে যায় ঘোড়াটি। পরে সেটিকে তারাগঞ্জ প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
ঘোড়াটি দিয়ে হালিমার বড়বোন তাসমিনা আক্তার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। বড়বোনের হাত ধরেই সেই স্বপ্ন যাত্রা শুরু করেন হালিমা তবে ঘোড়াটির মৃত্যুতে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে পুরোটাই ভেঙ্গে পড়েছে হালিমা।
একসময়ে তার বড়বোন তাসমিনা অন্যের ঘোড়া দিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতো। পরে বিভিন্ন মানুষের সহায়তায় তাকে একটি ঘোড়া কিনে দেওয়া হয়। সেই ঘোড়া ছিলো তাদের পরিবারের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন। সেটিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার।
হালিমার বাবা ওয়াবদুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার পিকআপ গাড়িতে নওগাঁ থেকে ঘোড়াটি নিয়ে এসেছি। আসার সময়ে ঘোড়াটি সুস্থ ছিলো এখানে নিয়ে আসার পর হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে তাকে নিয়ে চলে যাচ্ছিলাম তারাগঞ্জ এলাকায় আসলে সেটি আরও অসুস্থ হয়ে যায়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যায়। ঘোড়াটি দিয়ে আমাদের পরিবার চলতো, সেটি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেটির মাধ্যমে পরিবারের সবার পেট চলতো এখন সেটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গেলাম।
কান্নাজড়িত কন্ঠে হালিমা আক্তার বলেন, ঘোড়া দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যেতাম সেটি দিয়ে আমাদের পরিবার চলতো। ঘোড়াটিকে আমি অনেক পছন্দ করি সেটিকে ভালোবেসে আমরা লালনপালন করেছিলাম। ঘোড়া নিয়ে আমরা খেলা দেখাতে আসছিলাম এসময়ে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। ঘোড়া মারা যাওয়ার কারনে আমরা অসহায় হয়ে গেলাম এখন কীভাবে চলবো। এটির উর্পাজনে আমাদের পরিবার আমরা এখন নিংস্ব হয়ে গেলাম।
ঘোড়া খেলায় আসা দর্শক মিজু সরকার হৃদয় বলেন, আমাদের এখানে যতবার ঘোড়া খেলার আয়োজন করা হয়। ততবার হালিমা বেগম তার ঘোড়া নিয়ে এখানে আসেন সে অংশগ্রহণ করেন। তবে গতকাল বুধবার ঘোড়া নিয়ে আসছিলেন হঠাৎ করে ঘোড়াটি অসুস্থ হয়ে যায়। পরে তারা ঘোড়াটিকে পাশ্ববর্তী রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যায়। সমাজের বিত্তবানদের তার পরিবারকে সহায়তা করার আহ্বান জানাই।
তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ইসরাতুজ্জাহান ইমা বলেন, ঘোড়াটি প্রচ- ব্যথায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলো, অনেক জ্বর ছিল। তিন দিন থেকে ঘোড়াটি অসুস্থ ছিল। ঘোড়াটিকে আমাদের কাছে আনার পর আমরা পর্যবেক্ষণ করি, আমরা দুই ঘণ্টা ধরে চিকিৎসাসেবা দিই। কিন্তু গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় ঘোড়াটি মারা যায়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: টেইক অফ ইস্তাম্বুল ২০২৫ এ বাক্কো’র অংশগ্রহণ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: টিএমজিবি সদস্যদের জন্য কনটেন্ট তৈরির কর্মশালা আয়োজন