নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো এখনো অরক্ষিত। বিগত সময়ে স্থানীয়দের ও মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির পেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে এই চিহ্নগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলেও তা যথাযথ নয়। প্রজন্ম ‘৭১’, কালাপোল বধ্যভূমি, চৌমুহনী শহীদ মিনার, বেগমগঞ্জের গোপালপুরে এক দিনে চুয়ান্ন জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়। সেজন্য গোপালপুরে ওই মুক্তিযোদ্ধাদের ম্মরনে নির্মান করা হয় আরো একটি ম্মৃতিস্তম্ব, মুক্তিযুদ্ধাদের গোরস্থানসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতি গুলো বর্তমানে অযন্তে ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে। অধিকাংশ স্মৃতিচিহ্নগুলো ময়লা-আবর্জনা, ঝোঁপঝাড়সহ বর্তমানে মাদকসেবীদের নিরাপদ আড্ডারস্থানে পরিণত হয়েছে। এই স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ থাকলে নতুন প্রজন্মরা সঠিক ইতিহাস লালন করতে পারবে। তবে ইতিমধ্যে চৌরাস্তায় স্থাপিত বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন চত্তর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করলেও তা সাময়িকের জন্য। এছাড়াও উপজেলার আমিন বাজার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্তম্ব, চৌমুহনী পাবলিক হল চত্তরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সহ মুক্তিযুদ্ধ কালীন স্মৃতি গুলি অরক্ষিত থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে। এই স্মৃতি গুলো রক্ষা করতে না পারলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হবে। অন্যদিকে, বেগমগঞ্জের চৌরাস্তায় নির্মিত সোনাইমুড়ীর কৃতি সন্তান দেশের সাত বীরশ্রেষ্ঠের একজন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্মৃতি স্তম্ভসহ, রুহুল আমিন নগরে নির্মিত যাদুঘর, আপানিয়া ও বগাদিয়ায় নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয়দের ও মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির পেক্ষিতে প্রশাসন মাঝে মধ্যে এই চিহ্নগুলো সংরক্ষনের উদ্যোগ নিলেও তা যথাযথ নয়।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল পাক বাহিনী কুমিল্লা সেনা নিবাস থেকে নোয়াখালী অভিমুখী সোনাইমুড়ী হয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে এক গ্রুপ রেল লাইন দিয়ে অপর গ্রুপ পাকা রাস্তা দিয়ে মার্চ করে বেগমগঞ্জের চৌমুহনী চৌরাস্তায় সরকারি কারিগরী উচ্চ বিদ্যালয়ে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। আসার সময় উভয় গ্রুপ সোনাইমুড়ী থেকে এলোপাতাড়ি ভাবে শতশত বাড়িঘর অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট করে। পরদিন ১৮ই এপ্রিল চৌমুহনী রেলওয়ে স্টেশনে পাক বাহিনীর এদেশীয় দোসরদের সমন্বয়ে আমান কমিটি গঠন করে। এর পর থেকে তারা চৌমুহনী শহরসহ পুরো বেগমগঞ্জে খুন, অগ্নি সংযোগ, নারী নির্যাতন করতে থাকে। ৭ই মার্চের পর থেকে এ অঞ্চলের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় পাক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের সহযোগীতায় পাক বাহিনী চৌরাস্তায় সরকারি কারিগরী উচ্চ বিদ্যালয়ে তাদের ক্যাম্পে এনে নারী পুরুষদের হত্যা ও নির্যাতন করতো। এ সময় তারা যাদেরকে হত্যা করতো তাদেরকে বস্তভর্তি করে চৌরাস্তার উত্তরে কালাপোলের নিচে ফেলে দিতো। এতে লাশ গুলো পানিতে ডুবে যেত বা লাশ গুলো ভেসে মহেন্দ্র খাল দিয়ে লক্ষীপুরের দিকে চলে যেত। এই স্মৃতিগুলো রক্ষায় চৌরাস্তায় সরকারি কারিগরী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রজন্ম ‘৭১’ ও কালাপোলে বধ্যভূমি নির্মান করা হয়। এছাড়াও পাক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় বেগমগঞ্জের গোপালপুরে এক দিনে চুয়ান্ন জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়। সেজন্য গোপালপুরে ওই মুক্তিযোদ্ধাদের ম্মরনে নির্মান করা হয় আরো একটি ম্মৃতিস্তম্ব, কিন্তু তাও বর্তমানে অরক্ষিত। ওই স্মৃতিস্তম্ব ময়লা-আবর্জনা, ঝোঁপঝাড়সহ বর্তমানে মাদকসেবীদের আড্ডারস্থানে পরিণত হয়েছে। বজরা ইউনিয়নের বাসিন্ধা বীরমুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ভূইয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিজয়ের ৫৪ বছরেও আমরা মুক্তিযুদ্ধের ম্মৃতিচিহৃগুলো সংরক্ষণ করতে পারিনি, এটা লজ্জার বিষয়। শুধু দিবস আসলেই এগুলোর কদর বাড়ে। দিবস চলে গেলে আর কেউ খবর রাখেনা। তিনি দ্রুত মৃক্তিযুদ্ধের ম্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান। বেগমগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল হোসেন বাঙ্গালী বলেন, বেগমগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিগুলি অরক্ষিত থাকায় ইতিহাস বিকৃতকারী চক্র সুযোগ বুঝে সব কিছু ধ্বংস করতে পারে। তাই এই স্মৃতিগুলো রক্ষা করা প্রশাসনের পাশাপাশি সকলকে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
বেগমগঞ্জ উপজেলার নবাগত নির্বাহী অফিসার কায়েসুর রহমান জানান, আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের চেষ্টা করে আসছি। এরই মধ্যে চৌরাস্তায় অবস্থিত বীরশ্রেষ্ট রুহুল আমিন স্মৃতি স্তম্ভ, চৌমুহনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এর সৌন্দর্য বর্ধনসহ সংস্কার কাজ করা হয়েছে। এছাড়াও বেগমগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের সকল স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: টেইক অফ ইস্তাম্বুল ২০২৫ এ বাক্কো’র অংশগ্রহণ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: টিএমজিবি সদস্যদের জন্য কনটেন্ট তৈরির কর্মশালা আয়োজন