বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছিল পঁচিশ বছর আগে। তখন থেকেই টিনের ছাউনি ও কাঠ দিয়ে শ্রেণীকক্ষগুলো তৈরি করা হয়। সময়ের সাথে সাথে টিনগুলোতে মরিচা ধরেছে, অনেক জায়গায় ফুটো হয়ে গেছে। রোদে প্রচুর গরম এবং বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টি হলেই টিনের চালা দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। বিদ্যালয়টি আশি শতাংশ অবকাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে। শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চগুলো বসানোর জায়গা পর্যাপ্ত হয় না। এই বিদ্যালয়টি নাম “সুলতান মিয়ার বাজার নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়”। ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার ওমরপুর ইউনিয়নে বিদ্যালয়টি অবস্থান।
যেখানে চারপাশের বিদ্যালয়গুলো আধুনিক মানের ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে সুলতান মিয়ার বাজার নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব ও বারবার মেরামতের ব্যর্থতায় বিদ্যালয়টি এখন প্রায় জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। বিদ্যালয়ে চলছে চরম ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে পাঠদান।
দীর্ঘ বছর ধরে স্থানীয়দের দাবি, যে কোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তবুও প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী এখানেই পাঠগ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, সুলতান মিয়ার বাজার নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ২০০০ সালে স্থাপিত হয়েছে। পরবর্তীতে ২০২২ সালে এমপিওভূক্ত হয়। বর্তমানে ৬ষ্ট থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি রয়েছে। তিন শ্রেণীতে শিক্ষার্থী রয়েছে ২০০ জন।
শিক্ষকরা বলেন, ‘টিনসেড ও কাঠ দিয়ে তৈরি বিদ্যালয়টির ঘর এখন দাড় করিয়ে রাখাই কঠিন। ঝড়-বৃষ্টির সময় পাঠদান প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবুও শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা ভেবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। বিদ্যালয়টির দরজা ও জানালাও নষ্ট হয়ে গেছে। কাঠ পঁচে যাওয়ার কারণে অনেক দরজা আর ঠিকমতো বন্ধ হয় না। বাতাসে জোরে শব্দ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রায়ই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।’
শিক্ষার্থী ঝুমুর বলেন, ‘আমি এই স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে ৮ম শ্রেণিতে পড়ি। আমাদের স্কুলটি পুরো ভাঙাচুরা অবস্থায় রয়েছে। আমাদের চারপাশের প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই সুন্দর। আমাদেরও ইচ্ছে করে ভালো মনোরম পরিবেশে পড়াশোনা করতে। স্কুলটিতে ভালো টয়লেট ও মেয়েদের জন্য কমনরুম নেই। পড়াশোনা ভালো হয়, তবে সুন্দর একটি ভবন চাই।’
শিক্ষার্থী আয়মান শান্ত বলেন, ‘আমি ৮ম শ্রেণির একজন ছাত্র। আমাদের স্কুল টিনসেডের তৈরি। সুন্দর ভবন নেই। স্কুলটিতে ভালো পাঠদান হয়। তবে বৃষ্টির সময় বই-খাতা ভিজে যায়, রোদের সময় শ্রেণি কক্ষে বসতে পারিনা। আমরা সরকারের কাছে একটি ভবনের আবেদন জানাই।’
শিক্ষক ইয়াছমিন আক্তার বলেন, ‘২০০০ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলটি ভবন নেই, তবে টিনসেড ঘর। উপরে দু’চালা বিশিষ্ট টিনের চাল। আনন্দময় শিক্ষার জন্য সুন্দর পরিবেশ সর্বপ্রথম দরকার বলে আমি মনে করি। পরিবেশ সুন্দর হলে স্কুলের প্রতি শিক্ষার্থীরা আকৃষ্ট থাকে। পাঠদানেও মনোযোগি হয়। এই স্কুলটি যদি সুন্দর একটি ভবন হয়। তাহলে শিক্ষার্থীদের মনমানসিকতা ভালো থাকবে এবং শিক্ষার মান উন্নতি হবে।’
শিক্ষক এনায়েত কবির বলেন, ‘স্কুলটির শুরু থেকেই আমি শিক্ষকতা করে আসছি। নিজেদের অর্থায়নে এই স্কুল ঘরটি নির্মাণ করেছি। ভবন নির্মাণের জন্য আমরা সরকারি কোন অর্থ পাইনি। চেয়ার টেবিল ও শ্রেণি কক্ষের জন্য শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো জায়গা দিতে পারি না।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরউদ্দীন বাবর বলেন, ‘জরাজীর্ণ টিনসেড বিদ্যালয়টির পরিস্থিতি খুবই খারাপ। একটি নিরাপদ ও আধুনিক ভবন হলে শিক্ষার্থীরা আরো ভালোভাবে পড়াশোনা করার পরিবেশে পাবে। অতিদ্রুত সরকার যেনো আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য নামে একটি ভবন বরাদ্দ করে এটাই আমার দাবী।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, ‘প্রথমেই শিক্ষার জন্য পরিবেশ দরকার। শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি রুম ও শিক্ষকদের জন্য একটি রুম আছে। সুতরাং ওই স্কুলটিতে একটি ভবন অতিব প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আবেদন করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠাবো।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: টেইক অফ ইস্তাম্বুল ২০২৫ এ বাক্কো’র অংশগ্রহণ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: টিএমজিবি সদস্যদের জন্য কনটেন্ট তৈরির কর্মশালা আয়োজন