image
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : ভালুকায় মাঠে মাঠে সরিষা ফুলের মৌয়ালী গন্ধ যেন অজানা অনুভূতির ছোঁয়া জাগায় সকলের প্রাণে -সংবাদ

ভালুকায় মাঠে মাঠে সরিষা ফুলের মৌয়ালী গন্ধ

বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, ভালুকা (ময়মনসিংহ)

ভালুকায় মাঠে মাঠে সরিষা ফুলের মৌয়ালী গন্ধ যেন অজানা অনুভূতির ছোঁয়া জাগায় সকলের প্রাণে। মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত সরিষার হলদু ফুলে হালকা বাতাসে যেন নৃত্যরত ভালুকার বিভিন্ন গ্রামে ফসলের মাঠ। মাঝে মাঝে হলুদ গালিচার মত ফুল ফুটা সরিষা ক্ষেত হাতছানি দেয় পথচারির নয়ন তৃঞ্চা মেটাতে। এক সময়ের গ্রাম বাংলার মাঠের শোভা মাঝখানে হারিয়ে যাওয়া অর্থকরি ফসল সরিষার আবাদ গত বারের চেয়ে এ বছর কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। আদিকাল হতেই সরিষা গ্রামের মানুষের খাদ্য তালিকায় অতি গুরুত্বপুর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। এক সময় গ্রামের আনাচে কানাচে চোখ রাখলেই দেখা মিলতো শুধু সরিষা ফুলের দিগন্ত জোড়া হলুদ চাদরে ছাওয়া মাঠের পর মাঠ। উঠানে রাখা সরিষা গাছ রোদে শুকিয়ে খোলস ছাড়ানো সরিষা দানায় ভরে উঠতো কৃষকের অঙ্গিনা। গ্রামের কুলু সম্প্রদায় নিজস্ব প্রযুক্তিতে গরুদিয়ে কাঠে তৈরী ঘানিকলে সরিষা হতে তৈরী করতেন ঘন ভোজ্য তেল যা রান্না সহ শরীরে মাখানোর কাজে ছিল সকলের প্রিয়।

নিজের ক্ষেতের উৎপাদিত সরিষা গ্রামের কুলু বাড়ীতে নিয়ে ঘানিতে তৈল ভাঙ্গিয়ে এনে ঘানি টানা সরিষার তেল দিয়ে মুখরোচক সবজি ভর্তা ভাজি রান্না যেন অকল্পনীয় বিষয় ছিল। প্রবীনদের কাছে শোনা যায় খাটি সরিষার তেল নিয়মিত খেলে অনেক রোগ বালাই হতে মুক্ত থাকা যায়।

সর্দি কাশি হলে খাটি সরিষার তেল গরম করে আকন্দ পাতায় মিশিয়ে বুকে পিঠে হাত ও পায়ের তালুতে মালিশ করলে আরোগ্য পাওয়া যেতো। সরিষা গাছে ফুল আসার পূর্বে কাঁচা পাতা শাখ, সরিষা ফুলের ভাজি বরা হিসেবে খেতে খুবই সুস্বাদু। আমসত্ব,বড়ই, চালতা,জলপাই ইত্যাদি আচার তৈরীতে সরিষার তেল অত্যাবশ্যকীয়। পিঠা পুলি তৈরীতে খাটি সরিষার তেলের জুরি নেই। সরিষার ইলিশবাটা, কাশন্দি কার না প্রিয়। আধুনিকায়ন ও বিজ্ঞানের উন্নত প্রযুক্তির কাছে আদিকালের কাঠের তৈরী ঘানিকল এখন হারানো দিনের স্মৃতি চারণ মাত্র। বিদেশের উৎপাদিত সোয়াবিন,পামওয়েল এক সময় এদেশের বাজার দখল করে নেয়ায় ঘানি শিল্পের সাথে জড়িত পরিবার গুলো ব্যবসায়িক লোকসানের মুখে পরে যায়। দিন রাত যেসব বাড়ীতে ঘানি টানা যাতা কলের কেচাং কেচাং শব্দ হত যা কালের বিবর্তনে এক সময় নিশব্দে মিলিয়ে যায়। সরিষার বিকল্প ভোজ্যতেল বাজারে আসায় প্রভাব পরে কৃষকের অর্থকরি ফসল সরিষার উপর।

মৌমাছিরা সরিষা ফুল হতে মধু আহরণ করে বনে জঙ্গলে গাছের ডালে মৌচাক তৈরী করে যা থেকে খাটি মধু পাওয়া যায়। আবার অনেকে বানিজ্যিক ভাবে রবি মৌসুমে মধু উৎপাদনের জন্য সরিষার আবাদ করে বাক্সে মৌমাছি পালনের মাধ্যমে লাভবান হয়। উপজেলার ডাকাতিয়া, মেদুয়ারী কাচিনা, হবিরবাড়ী, ধীতপুর, বিরুনিয়া, মল্লিকবাড়ী, ও উথুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এ বছর চাষীরা সরিষা আবাদ করেছেন। সম্প্রতি সরিষা আবাদে কৃষকের মধ্যে নতুন করে সারা জাগলেও হারিয়ে গেছে ঐতিয্যবাহী ঘানি কল। এ বছর ভালুকায় সরিষার ফলন মোটামোটি ভাল হয়েছে। উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের ধানকুড়া গ্রামের কৃষক এশিয় কুবি জানান চলতি মৌসুমে ৪ কাঠা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। তিনি জানান সরিষা আবাদে অন্যান্য ফসলের চেয়ে খরচ কম হয় দামও ভাল পাওয়া যায়। তিনি ৩৫০ টাকার সরিষা বীজ কিনে ক্ষেতে বপন করেছেন। একই গ্রামের কৃষক ছফেদ আলী ৫ কাঠা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। নতুন সরিষা ৩৫ শ টাকা হতে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমণ বিক্রি করা যায়। অনেকের মতে সোয়াবিন তেলের চেয়ে সরিষা খাদ্য হিসেবে অধিক স্বাস্থ্য সম্মত আর নিজের ক্ষেতের সরিষা স্থানীয় মিল হতে ভাঙ্গিয়ে নিজেদের প্রয়োজনে সারা বছর ব্যবহার করা যায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান চলতি ২০২৫/২৬ রবি মৌসুমে সরিষা আবাদের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ১৫৯৫ হেক্টর অর্জিত হয়েছে ৯০০ হেক্টরের মত। প্রণোদনা বিতরণ ২০২৫/২৬ অর্থ বছর কৃষক ৭০০ জন, বীজ ৭০০ কেজি, ডিএপি সার ৭০০০ কেজি ও এমওপি সার ৭০০০ কেজি কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে প্রতি হেক্টরে ১.১৫ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যাবে। আগাম আমন ধান কাটার পর টানি জমিতে কার্তিক অগ্রহায়ন মাসের শুরুতে সরিষা বীজ বপন করায় ব্যস্ত থাকেন চাষীরা। সরিষা ক্ষেতে বীজ বপনের পূর্বে সার প্রয়োগ করলেও পরে তেমন একটা সারের প্রয়োজন হয়না। তাছারা পানি সেচ ও নিরানীর প্রয়োজন না হওয়ায় অন্যান্য ফসলের চেয়ে চাষীদের জন্য সরিষা আবাদ অধিক লাভ জনক। সরিষা মাড়াই করে ওই জমিতে কৃষকরা বোরো ধানের আবাদ করতে পারেন। চলতি মৌসুমে ভালুকায় উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বীনা ৫, ৭, বারি ৯, বারি ১৪, বারি ১৭, ও স্থানীয় টরি ৭ জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। সরকারী সহযোগিতা পেলে আগামীতে আরও অধিক জমিতে সরিষা আবাদ করবেন বলে চাষীরা জানান।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি