ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার সরাইল নাসিরনগর লাখাই সড়কের উভয় পাশে কালীকচ্ছ ইউনিয়ন ও নাসিরনগরের কুন্ডায় নিকটবর্তী এলাকায় ফসলি জমি সংলগ্ন স্থানে গড়ে উঠেছে প্রায় ২০টি ইট ভাটা এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় ১৪ রয়েছে ১৪টি। এই ইট ভাটাগুলো পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই এগুলোর, কোন কোন ইট ভাটা নদী দখল করে বসেছে আবার আবাদি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে, রাস্তার পাশে গড়ে উঠা ইট মিলের মালিকরা প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে সড়ক ও জনপদের সরকারি জায়গা দখলে নিয়ে ইট ভাটার মাটি ও তৈরি ইট সংরক্ষণ করে চালাচ্ছে রমরমা ব্যবসা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে ১০০০ মিটারের দূরবর্তী স্থানে ইট ভাটা গড়ে তোলার নিয়ম থাকলেও ইটভাটার মালিকেরা সহজে কাচামাল আনা নেওয়ার সুবিধার কারনে মানছেন না এই আইন। যার ফলে ইট ভাটার কালো ধোয়া, ছাই , ইটভাটায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির বিকট শব্দ আশেপাশের মানুষের স্বাস্থ্যের উপর পড়ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া । শিশুরা ভুগছে নানা ধরনের অসুখে। শুধু তাই না, আবাদি জমিতে হচ্ছে না কোন ফসল।
স্থানীয় বাসিন্দা আবেদ আলী, আনন্দ দাস, কাজল দাস তারা জানালেন, রুপালী, সফল ও সিয়াম (ট্রিপল টু) ইট ভাটার ইট পোড়ানোর বর্জ্য, ছাই ও কালো ধোয়ার কারণে আমরা জমিতে কোন ফসল করতে পারিনা। আমাদের বাড়ির গাছগুলোতে কোন ফল ধরে না। যে ডাবগাছ থেকে একশো থেকে দেড়শো ডাব বিক্রয় করতে পারতাম সেখানে ২৫/৩০ টির বেশি বিক্রি করতে পারি না, কলিগুলো ইটভাটার ধোঁয়ায় ঝড়ে পড়ে, বাড়ির পুকুরগুলোতে মাছ চাষে মাছ আর বড় হয়না, আমরাসহ আমাদের ছোট ছোট শিশুরা নানান অসুখ বিসুখে ভুগছে প্রতিনিয়ত। আমাদের এই কষ্টের কথা বলারও কোন মানুষ নাই, শুনারও মানুষ নাই।
কৃষক আবেদ আলী জানান, দীর্ঘদিন বিদেশ করেছি, ভেবেছিলাম দেশে এসে নিজের পৈত্রিক জমিতে চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করব। আর এই উদ্দেশ্যে সামনে রেখে ৬০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছিলাম এবং আরো ৯০ শতাংশ জায়গা টমেটো চাষের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু ৬০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু টমেটো ফলনের আগেই পার্শ্ববর্তী তিনটি ব্রিক ফিল্ডের কালো ধোয়া ও ব্রিক ফিল্ডের ছিমনির ছাইয়ের আবরণে আমার টমেটো গাছ পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। আমার মতো এমন অনেকের এই করুন পরিণতি। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে এই কথার সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। তা না হলে পরিবেশ অধিদপ্তর কিভাবে লোকালয়ের পার্শ্ববর্তী জায়গায় ব্রিক ফিল্ড করার অনুমতি দেয়।
এবিষয়ে ডা: শরীফ মাহমুদ হাসান জানান, ইটভহাটার বায়ু দূষণে অন্যতম কারণ হলো, কয়লা পোড়ানো থেকে প্রবাহিত ক্ষতিকর গ্যাসে কার্বনডাই অক্সাইড, কার্বনমনো অক্সাইড এবং সালফারডাই অক্সাইড থাকায় এর বিষাক্ততায় মানবস্বাস্থ্য, কৃষি,ও পরিবেশের উপর বেশি ক্ষতি করে থাকে। শীতকালে বাতাসের দুষন বেড়ে যাওয়ায় চোখ জালা, গলা চুলকানো, মাথা ব্যথা, ক্রমাগত কাশি, সর্দি দেখা দেয়।
ডা: সাদিয়া সাত্তার বলেন, বায়ু দূষণের কারণে অকাল প্রসবের ঝুঁকি থাকে, শিশুর ওজন কমে যেতে পারে, গর্ভকালীন রক্তশুন্যতা দেখা দিতে পারে,গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে, প্রসূতি মায়েদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। এই সময়ে গর্ভবতী মায়েদেরকে বায়ুদূষণ এলাকা থেকে সরিয়ে রাখা উচিত। উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, একসময় সরাইল উপজেলায় ৪০টি ইটভাটা থাকলেও বর্তমানে ৩৬ টি ইটভাটা সক্রিয় আছে, ৪টি বন্ধ আছে, ৫টির কোন কাগজ পত্র নেই, ২০টির কাগজপত্রের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এসব ভাটার অধিকাংশেরই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা বৈধ লাইসেন্স। ফাইলপত্রে গোজামিলে জায়গার পরিমাণ কম দেখানো হলেও বাস্তবে নদী, খাল, সরকারি জায়গা জমি দখল করে ব্যবহার করছে অনেক বেশি।
জানতে চাইলে কৃষিবিদ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. একরাম হোসেন বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়া কৃষি ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে কৃষি জমিকে নিষ্ফলা করে তুলে, পাশাপাশি মাটি, জল, বাতাসে ব্যপক দুষণ ছড়ানোর মাধ্যমে জলজ প্রাণীর যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে। কোন কোন পুকুরে ছাই,ধোঁয়া, বাতাসে উড়ে আসা ময়লায় হাল্কা আবরণ পড়ে মাছের চাষ ও বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্ত হয়। তবে ইটভাটার এক কিলোমিটারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ফসল, গাছগাছালি, মাছ চাষীদের এবং বসবাসকারীদের।
অভিযুক্ত ইটভাটার মালিকদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, আমরা নিয়মনীতি মেনে ইটভাটা পরিচালনা করছি। ইটভাটা পরিচালনার বৈধ প্রমাণক, লাইসেন্স পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে কিছু আছে কিছু ডক্যুমেন্টস প্রক্রিয়াধীন আছে বলে প্রতিবেদককে জানায়।
সারাদেশ: বোয়ালখালীতে বসতঘর থেকে অজগর উদ্ধার
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: বাংলা ভাষার প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম কাগজ ডট এআই চালু
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: নকিয়ার সঙ্গে বিপিসিএস কনসোর্টিয়াম সদস্যদের এসএলটিই চুক্তি স্বাক্ষর
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: ফুডপ্যান্ডার ‘পাউ-পাউ প্লাশি চ্যালেঞ্জ’ ক্যাম্পেইন চালু