image
ভাঙ্গুড়া (পাবনা) : থানা কমপ্লেক্স -সংবাদ

ভাঙ্গুড়ায় ককটেল বিস্ফোরণ মামলা ঘিরে ‘আটক বাণিজ্যের’ অভিযোগ

শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, ভাঙ্গুড়া (পাবনা)

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলাকে কেন্দ্র করে পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর হয়রানি ও আটক বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, মামলাটি এখন এক শ্রেণির পুলিশের জন্য অর্থ আদায়ের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও অর্থবান আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীরা টাকার বিনিময়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন- এমন সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগ-সমর্থিত পরিবারগুলোকেই টার্গেট করে আটক করার অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের দাবি করা অর্থ দিতে না পারলেই তাদের মামলায় জড়িয়ে পাঠানো হচ্ছে পাবনা জেলা কারাগারে।

এ ঘটনায় ভাঙ্গুড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজা আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, তিনি মামলাটি ব্যবহার করে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছেন এবং সরাসরি আটক, হয়রানি ও ঘুষ আদায়ের সঙ্গে জড়িত।

থানা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ মে মো. ময়ছের আলীর অভিযোগের ভিত্তিতে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত নামীয় কোনো আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তারা সবাই জামিনে রয়েছেন।

এর মধ্যেই ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভাঙ্গুড়া পৌর এলাকার মাংস ব্যবসায়ী-সাব্বীর হোসেন সুমন ও বায়েজিদ ইসলামকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের ওই বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাবনা আদালতে পাঠানো হয়।

সুমন পৌরসভার পাথরঘাটা পৌরপাড়া এলাকার আয়েজ উদ্দিন মানিক কসাইয়ের ছেলে এবং বায়েজিদ দিলপাশা ইউনিয়নের কৈডাঙ্গা গ্রামের মহাসিন প্রামানিকের ছেলে।

আটক ব্যক্তিদের পরিবারের দাবি, তারা কেউই আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গেও তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুর মুজাহিদ সপন বলেন, প্রভাবশালীদের ছেড়ে দিয়ে নিরীহ মানুষকে আটক করা চরম অন্যায়। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ বলেন, অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করে এসআই রেজাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে ভাঙ্গুড়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে।

পাবনা জেলা উকিল বারের সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম পলাশ বলেন, এজাহারভুক্ত আসামিরা জামিনে থাকার পর সাধারণ মানুষকে সন্দেহভাজন দেখিয়ে আটক করা সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধির লঙ্ঘন। এটি ক্ষমতার স্পষ্ট অপব্যবহার। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রেজাউল করিম রেজা বলেন, মামলার তদন্তে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় আটক করা হয়েছে।

ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আটক দুজন ছাত্রলীগের কর্মী। পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতারা অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি