image
মহাদেবপুর (নওগাঁ) : ভূয়া তফসিলে বালু উত্তোলনের অনুমতিপত্র ও বালু তুলতে গিয়ে গ্রামবাসীদের হাতে আটক ট্রাক -সংবাদ

মহাদেবপুরে সরকারি মদদে আত্রাই নদীর বালু হরিলুট

শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, মহাদেবপুর (নওগাঁ)

নদীতে বালু না থাকায় ইজারা বন্ধ থাকলেও এবার পুরোপুরি সরকারি মদদে নওগাঁর মহাদেবপুরে আত্রাই নদীর বালু ও মাটি প্রকাশ্য দিবালোকে হরিলুট হচ্ছে। খোদ প্রশাসন নিজেই ভূয়া তফসিল দেখিয়ে ফসলী জমি থেকে বালু অপসারণের ভূয়া অনুমোদন দিয়ে বালু চুরি করাচ্ছে। এনিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তারা চিহ্নিত বালুদস্যুদের এবার প্রতিহত করা শুরু করেছে।

প্রকাশ, ফ্যাসিবাদী আমলে দীর্ঘদিন ধরে এখানকার আত্রাই নদী থেকে বালুদস্যুদের অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে নদী বালুশুন্য হয়ে পড়ে। কিন্তু রাজনৈতিক চক্রান্তে প্রভাবিত হয়ে প্রশাসন উত্তোলনযোগ্য বালু আছে বলে ভূয়া সার্ভে রিপোর্ট তৈরি করে নিগোশিয়েশনের ফাঁদে খুব কম টাকায় ফিবছর এই নদীর বালুমহাল ইজারা দিয়ে আসছিল। নদীর উপরিভাগে কোন বালু না পেয়ে ইজারাদাররা আইন ভেঙ্গে সমুদ্র খননের বলগেট ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ভূগর্ভস্থ বালু ও লাল মাটি উত্তোলন করে। গতবছর মহাদেবপুর দর্পণ পরিবার এই ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন বন্ধের আন্দোলন শুরু করলে প্রশাসনের টনক নড়ে। ফলে তারা এখানে আত্রাই নদীর বালু মহাল এবছর আর ইজারা দেননি। গতবছর ৫ আগষ্টের পর এই নদীতে দলীয় পরিচয়ে শতাধিক নতুন পয়েন্ট তৈরি করে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কোটি কোটি টাকার অবৈধ বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে। ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও আজও নানা কৌশলে তারা সে বালু উত্তোলন ও বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। প্রতি রাতে উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধ ভেক্যু মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে অসংখ্য ড্রাম ট্রাক যোগে পরিবহণ করছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের মুর্শিদা সুলতানপুর নুরপুর মৌজায় বালুদস্যুরা প্রকাশ্য দিবালোকে ভেক্যু মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহণের চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাদের বাধা দেন। তারা মেশিনগুলো আটক করে রাখেন। খবর পেয়ে সরেজমিনে সেখানে গেলে বালু পরিবহণের কাজে নিয়োজিত একটি ট্রাক্টরের ড্রাইভার জানান, মহাদেবপুরের বিএনপি নেতা হাজী আক্কাসের গাড়ীতে করে বালু পরিবহণ করা হচ্ছে। তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষরিত একটি অনুমতিপত্র দেখান। সে চিঠিতে দেখা যায়, হাতুড় ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আব্দুল জলিল ও জাহাঙ্গীর আলম উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি আবেদন দেন যে, নুরপুর মৌজার ৬৬ নং খতিয়ানের ৪২৯ দাগে তাদের জমি আগের ইজারাদার ভাড়া নিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে সে জমিতে রাখেন। ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও জমির উপর কিছু বালু পড়ে থাকে। সে বালু অপসারণ না করলে জমিতে কোন ফসল আবাদ করা যাচ্ছেনা। ইউএনও জমি আবাদযোগ্য করার জন্য বালু সরানো যাবে, কোনক্রমেই মূল জমি খনন করা যাবেনা বলে গত ৯ ডিসেম্বর অনুমোদন দেন। এই অনুমোদনপত্র বলেই তারা এখান থেকে বালু তুলতে আসে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন যে, তারা যেখান থেকে বালু উত্তোলন করছে সেই জমি তাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন নয়, বরং এটি স্থানীয়দের খেলার জন্য সরকারি মাঠ ছিল। এখানেই আগের ইজারাদার অবৈধভাবে বালু রাখে।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আরিফুজ্জামান ওই অনুমোদন দেয়ার কথা স্বীকার করে জানান, এর আগেও অনুরুপ অনুমোদন দিয়েছেন।

জানতে চাইলে ডকেট অনুসন্ধ্যান করে উপজেলার এনায়েতপুর-হাতুড় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মওদুদুর রহমান কল্লোল নিশ্চিত করেন যে, ওই আবেদনে উল্লেখ করা তফসিলটি ভূয়া। তিনি জানান, নুরপুর মৌজার ৬৬ নং খতিয়ান আবেদনকারীদের নামে নয়। বরং তা জিতেন্দ্রনাথ মন্ডলের নামে। আর ওই খতিয়ানে ৪২৯ নম্বরের কোন দাগই নাই।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন যে, এবছর শুষ্ক মওসুমের শুরু থেকে গত কয়েক মাসে এ ধরনের ভূয়া তফসিলে আবেদন করে প্রশাসনকে ভূল বুঝিয়ে জমি থেকে কথিত বালু অপসারণের নাম করে আত্রাই নদী থেকে চুরি করে কয়েক লক্ষ টাকার বালু বিক্রি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন জেনেশুনেই ভূয়া তফসিলে অনুমোদন দিয়ে সরকারি সম্পদ হরিলুট করেছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি তাদের।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি