কুষ্টিয়ার খোকসায় শিশু শ্রমিকদের কদর বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজ লাগানোর মৌসুম চলছে। এই মৌসুমে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কুষ্টিয়া খোকসায় শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বড় শ্রমিকদের সমান কাজ করেও এই সব শিশু শ্রমিকরা মজুরী পাচ্ছে নাম মাত্র।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সামাদ। বয়স দশ বছর। কৃষকের পেঁয়াজের চারা রোপনের কাজ করছে। শিশু হওয়ায় তার হাজিরা দেওয়া হয় একশো টাকা। তারমত অসংখ্য শিশু-কিশোর নাম মাত্র হাজিরায় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকের জমিতে শীতকালীন পেঁয়াজের চারা রোপনের কাজ করছে।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুর ইউনিয়নের একতারপুর গ্রামে মাসুম প্রামনিকের ছোট ছেলে সামাদ। গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। সে এখন খন্ডোকালীন কৃষি শ্রমিক। নিজের ও পরিবারের আর্থিক চাহিদার মেটাতে পেঁয়াজ ও ধান আবাদ মৌসূমে জমিতে চারা রোপণের কাজ করে। তাদের দলে চতুর্থ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রণির শিক্ষার্থী জাহিদ, কবিরুল, সজিব, আবিরসহ ৮জন। খন্ডোকালীন অল্প বয়সী কৃষি শ্রমিকদের দৈনিক হাজিরা একশো থেকে চারশো টাকা দেওয়া হয়। এক সপ্তাহ আগে শীতকালীন পেঁয়াজের চারা রোপনের মৌসূম শুরু হয়েছে। শ্রমিকের দারুন অভাব। পূর্ণ বয়স্ক শ্রমিকের মুজরি দিতে হয় সাতশো টাকা। শিশু বা অল্পবয়স্ক শ্রমিক হলে সমস্যা নেই। কাজ সমানই করে। কিন্তু হাজিরা দিতে হয় নাম মাত্র। মাঠে পেঁয়াজের চারা রোপণের প্রতিটি দলে অর্ধেক শিশু শ্রমিক রয়েছে। পূর্ণ বয়স্ক শ্রমিকের সমান কাজও করছে শিশুরা।
শুক্রবার,(১৯ ডিসেম্বর ২০২৫) বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের জাগলবা শ্রামের সোনাপাতিল বিলে সরেজমিন যেতেই বিলের ধারে পাকা রাস্তার পাশে শিশু ও বয়স্ক শ্রমিকদের একটি দলের দেখা মিলে যায়। তখন সবে সকাল ১০টা পার হয়েছে। মাঠের মধ্যে চাষ দেওয়া জমিতে তারা সবাই থালা হাতে, খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। শ্রমিকদের মধ্যে সব থেকে ছোট সামাদ। মাটির ধারে হাতের আঙ্গুল কেটে যাওয়া থেকে রক্ষায় শিশুটি ডান হাতের পাঁচ আঙ্গুলে লাল টেপ লাগিয়েছিলো। আঙ্গুল থেকে সেই টেপ খোলায় ব্যস্ত ছিলো। তার দলে কাজ করা মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজে ছাত্ররা নাম প্রকাশে অনিহা প্রকাশ করে। শিশু সামাদের কাছে হাজিরা সম্পর্কে জানতে চাওয়ার হয়। সে জানায়, ১০০ টাকা হাজিরা আর তিন বেলা খাবার। বড় ছাত্ররা প্রতিদিন ৪০০ টাকা পর্যন্ত হাজিরা পেয়ে থাকে।
সামাদ জানায়, বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। বাড়িতে বসে না থেকে নিজে ইচ্ছায় পেঁয়াজ লাগানোর কাজ নিয়েছে। এই এক মাঠে তার মত আরও প্রায় ৫০ জন স্কুল ছাত্র কাজ করছে। সে নিজেও বড় মানুষের সমান কাজ করে। কিন্তু প্রতিদিন হাজিরা দেওয়া হয় ১০০ টাকা। বড় ছাত্রদের দেওয়া হয় ৪০০ টাকা।
সে আরও জানায়, হাজিরার ক্ষেত্রে মৌসুমি শিশু শ্রমিকরা চরম বৈষম্যের শিকার। বেশী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে সে নিজে। একটু বড় ছাত্রদের হাজিরা দেওয়া হয় ৪০০টাকা। আর তাকে দেওয়া হয় ১০০ টাকা। এভাবেই গত দুই বছর কম হাজিরায় কাজ করছে।
কৃষক আব্দুল খালেক প্রায় ৩০জন শ্রমিক নিয়ে সোনাপাতিল বিলের মধ্যে বীজতলা থেকে পেঁয়াজের চারা তুলছিলেন। তার শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক বিভিন্ন বয়সের ছাত্র। এই কৃষক বলেন, পেঁয়াজ ও ধানের চারা লাগানোর জন্য বড়দের সাথে শিশু শ্রমিকরা ভালো কাজ করে। ছাত্র হলে হাজিরা কমদেওয়ার একটা প্রবণতা সবার মধ্যে কাজ করে। তবে তিনি ৭০০-১০০ করেন না। একটু ধরিয়ে দেন।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলামের সাথে কথা বলা চেষ্টা করা হয়। তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। ম্যাসেস পাঠিয়েও প্রতি উত্তর মেলেনি। তবে তার অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের অফিস প্রধান হজ্বে গেছেন।
কুষ্টিয়া জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আব্দুল্লাহ আল-সামি’র সাথে মুঠোফোনে কথা বলা হলে তিনি জানান, শিশু শ্রমের বিষয়ে তাদের দপ্তরের কোন কাজ নেই।
আন্তর্জাতিক: গাজাবাসীর অন্তহীন শীতের রাতের দুঃসহ বেদনা
অর্থ-বাণিজ্য: আমদানি চাপে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ৭৫০ কোটি ডলার
ক্যাম্পাস: ওসমান হাদীর মৃত্যুতে জবিতে দোয়া মাহফিল
অর্থ-বাণিজ্য: শওকত আজিজ আবারও বিটিএমএর সভাপতি